ঢাকা ১০ জুলাই, ২০২৫
শিরোনামঃ
জনগণের পক্ষে বাংলাদেশপন্থী রাজনীতি গড়ে তুলুন: নাহিদ ইসলাম যত দ্রুত দেশকে নির্বাচনের ট্র্যাকে উঠানো যাবে ততই দেশের জন্য মঙ্গল : মির্জা ফখরুল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা বাজার সম্প্রসারণে এফটিএ বাস্তবায়ন জরুরি: বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ী নেতারা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে অতীতের মতো রেজাল্ট দেওয়া হবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা বাগেরহাটে এ্যানজিন মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজে ডাকাতির কোটি টাকার মালামাল উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৯ এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ আগামীকাল টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যায় এখনো নিখোঁজ ১৭০, বাড়তে পারে মৃতের সংখ্যা ভারতে যুবককে কুপিয়ে রক্তাক্ত করার ভিডিও বাংলাদেশের বলে অপপ্রচার : বাংলাফ্যাক্ট শ্রীলংকার বিপক্ষে টি২০ সিরিজে ঘুড়ে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা বাংলাদেশের

চায়না দুয়ারি জাল ব্যবহারে অস্তিত্ব সংকটে দেশীয় প্রজাতির মাছ

#
news image

সারা দেশের ন্যায় নেত্রকোনার বিভিন্ন এলাকায় চায়না দুয়ারি জালের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে নদ-নদী, খাল-বিল ও প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে ক্রমেই ধ্বংসের পথে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ ও অন্যান্য জলজপ্রাণী। স্থানীয় প্রশাসন অবৈধ এই জালের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে অভিযানে নামলেও তা পুরোপুরি বন্ধে নেই কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ।

বর্ষা মৌসুমে হাওরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার খাল-বিল, নদী-নালা, হাওর ও উন্মুক্ত জলাশয়ে বর্ষার নতুন পানিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছের পোনা। কিছুদিনের মধ্যেই এইসব পোনা বড় হবে। অথচ বর্ষার শুরুতেই উপজেলা জুড়ে এক শ্রেণির অসাধু মাছ শিকারিরা চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে অবাধে ডিমওয়ালা মাছসহ নিধন করছে মাছের পোনা। এভাবে পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধনের কারণে দিন দিন কমে যাচ্ছে দেশীয় মাছের উৎপাদন।

সরেজমিনে জেলা সদরসহ কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চায়না দুয়ারি জালসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে এলাকার পেশাদার ও মৌসুমি জেলেরা অবাধে দেশীয় মাছের পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ শিকার করছেন। এমন কোনো মাছ নেই যা এইসব জালে ধরা পড়ে না। যেখানেই একটু পানি জমেছে সেখানেই এইসব জালের ব্যবহার হচ্ছে।

সাংবাদিক শ্যামলেন্দু পাল বলেন, বেড়জাল, চায়না দুয়ারি জালের ফাঁদে জলাশয় থেকে উজাড় হচ্ছে পুঁটি, খলিশা, টাকি, চিংড়ি, ট্যাংরা, শিং, মাগুর, চেলা, দারকিনা, মলা, ঢেলা, বৈরালী, কাজলী, পাবদা, শোল ইত্যাদি বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। এসব জালে ছোট ছোট পোনা মাছও আটকা পড়ে যা ফেলে দেন শিকারিরা। বিশেষ করে এইসব জালে ডিমওয়ালা মাছ ধরা পড়ায় স্বাভাবিক প্রজনন, বংশ বিস্তার ও বৃদ্ধি হুমকিতে পড়েছে। এ ছাড়াও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী বিভিন্ন জলজপ্রাণী কাঁকড়া, সাপ, কুঁচিয়া, ব্যাঙ, ঝিনুক, শামুক, পোকামাকড়, কচ্ছপ, অণুজীব ইত্যাদির জীবনযাত্রা। জালের ব্যবহার বন্ধ করা না হলে মাছের বিপন্ন প্রজাতিসহ সব ধরনের জলজপ্রাণী হুমকির মুখে পড়বে। মৎস্যসম্পদ রক্ষায় প্রশাসনসহ সবাইকে এই জাল বন্ধে জোরালো পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

বাউসী অর্দ্ধচন্দ্র উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (স্কুল ও কলেজ) বাংলা বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক ও দৈনিক খবরের কাগজ পত্রিকার সাংবাদিক বিজয় চন্দ্র দাস বলেন, এটিকে জাল বলা হলেও এটি মূলত মাছ ধরা এবং আগামী প্রজন্মের জন্য মৎস্যসম্পদ ধ্বংস করার জন্য একটা বিশেষ ফাঁদ। এই জালের বুননে একটা গিঁট থেকে আরেকটি গিঁটের দূরত্ব খুব কম। যার কারণে এর ভেতরে একবার মাছ ঢুকলে আর বের হতে পারে না। স্থানভেদে এই জালকে চায়না দুয়ারি ও ম্যাজিক জাল বলা হয়।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের উচিত এ জাল ব্যবহার রোধে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা নেওয়া। এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে মানুষকে সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা। সবাই যাতে এর ব্যবহার থেকে বিরত থাকে, সে ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। পাশাপাশি এর বিপণন ব্যবস্থায় শক্ত আঘাত জরুরি।

কথা হয় মোহনগঞ্জের তেঁতুলিয়া এলাকার  সুলতান আহমদ, খালিয়াজুড়ির গাগলাজুড় এলাকার জুলহাস মিয়া, মদনের ধুবাউলা এলাকার মদন দাস বারহাট্টার সিংধা এলাকার গোবিন্দ পালের সাথে কথা বললে তারা বলেন, চায়না জালের প্রভাবে জলাশয় থেকে কমছে মাছের প্রাচুর্য। বিশেষ করে পানি বৃদ্ধি ও মাছের প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মাছ এই চায়না জালে নিধন হচ্ছে। এতে ক্রমেই মাছ শূন্য হয়ে পড়ছে জলাশয়। এসব জাল বন্ধ না হলে মৎস্য ভান্ডারে বিপর্যয় নেমে আসার শঙ্কা রয়েছে।

খালিয়াজুড়ি এলাকার মোমেন হাসান বলেন, আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের আমিষের চাহিদা পূরণে মাছই একমাত্র উপাদান। একটা সময়ে নদীনালা, খালবিল, হাওর-বাঁওড়ে দেশীয় মাছের প্রাচুর্য ছিল। অথচ চায়না দুয়ারি জালের কারণে বাঙালির জৌলুস হারিয়ে যেতে বসেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন বাজারের কয়েজন জাল ব্যবসায়ী জানান, নিষিদ্ধ এসব চায়না দুয়ারি রিং জাল সাধারণত এক থেকে দেড় ফুট উচ্চতা ও ৬০ থেকে ৯০ ফুট দৈর্ঘ্যের এবং ক্ষুদ্র ফাঁস বিশিষ্ট হয়। এটি লোহার রডের রিং দিয়ে খোপ আকারে বাক্স তৈরি করে চারপাশ সূক্ষ্ম জাল দিয়ে ঘেরাও করে তৈরি। এ জালে অসংখ্য প্রবেশমুখ থাকায় দুদিক থেকেই মাছ ঢুকতে পারে। জালের ফাঁস ছোট হওয়ায় ছোট কোনো মাছই এর থেকে রেহাই পায় না। আকার ও মানভেদে একটি চায়না জালের দাম দুই থেকে দশ হাজার টাকা। কম দাম ও সহজলভ্যতার কারণে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে বারহাট্টার প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

কথা হয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন এলাকার কয়েকজন জেলের সাথে তারা জানান, আগে কারেন্ট জাল ব্যবহার করলেও চায়না দুয়ারি আসার পর সেটি বাদ দিয়েছি। কারণ কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরলে প্রশাসন উৎপাত করে। এ ছাড়া কারেন্ট জালের চেয়ে চায়না দুয়ারিতে মাছ বেশি পাওয়া যায়। তারা বলেন, চায়না দুয়ারি দিয়ে মাছ ধরা ঠিক না, তারপরও জীবিকার তাগিদে মাছ ধরছি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল বলেন, বর্ষাকালেই নতুন পানিতে দেশীয় মাছের প্রজনন মৌসুম। এ সময়ে অবৈধ কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে পোনাসহ ডিমওয়ালা মাছ ধ্বংস করা হচ্ছে। চায়না দুয়ারি জাল ক্রয়-বিক্রয় বন্ধে মৎস্য আইনে নিয়ম অনুযায়ী যদি কেউ ক্রয়-বিক্রি করে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড, অনাদায়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। চায়না দুয়ারি ব্যবহারের ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছ আজ বিলুপ্তির পথে।

তিনি আরও বলেন, মাছের পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ রক্ষার্থে এবং উৎপাদন বৃদ্ধিতে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও নজরদারি সত্ত্বেও কিছু অসাধু মানুষ অজ্ঞতাবশত এসব অবৈধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করে মাছের প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য বাধাগ্রস্ত এবং ধ্বংস করছে। আমরা যদি সবাই সচেতন না হই, তাহলে চায়না দুয়ারি ব্যবহার বন্ধ হবে না এবং আমাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং জেলা ও উপজেলা মৎস্য বিভাগ থেকে চায়না দুয়ারি ও কারেন্ট জাল বন্ধে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এছাড়া সব ধরনের নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধেও প্রচারণা চলমান রয়েছে।

রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি :

০৯ জুলাই, ২০২৫,  9:02 PM

news image

সারা দেশের ন্যায় নেত্রকোনার বিভিন্ন এলাকায় চায়না দুয়ারি জালের ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে নদ-নদী, খাল-বিল ও প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে ক্রমেই ধ্বংসের পথে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ ও অন্যান্য জলজপ্রাণী। স্থানীয় প্রশাসন অবৈধ এই জালের বিরুদ্ধে মাঝেমধ্যে অভিযানে নামলেও তা পুরোপুরি বন্ধে নেই কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ।

বর্ষা মৌসুমে হাওরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকার খাল-বিল, নদী-নালা, হাওর ও উন্মুক্ত জলাশয়ে বর্ষার নতুন পানিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছের পোনা। কিছুদিনের মধ্যেই এইসব পোনা বড় হবে। অথচ বর্ষার শুরুতেই উপজেলা জুড়ে এক শ্রেণির অসাধু মাছ শিকারিরা চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে অবাধে ডিমওয়ালা মাছসহ নিধন করছে মাছের পোনা। এভাবে পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ নিধনের কারণে দিন দিন কমে যাচ্ছে দেশীয় মাছের উৎপাদন।

সরেজমিনে জেলা সদরসহ কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চায়না দুয়ারি জালসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে এলাকার পেশাদার ও মৌসুমি জেলেরা অবাধে দেশীয় মাছের পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ শিকার করছেন। এমন কোনো মাছ নেই যা এইসব জালে ধরা পড়ে না। যেখানেই একটু পানি জমেছে সেখানেই এইসব জালের ব্যবহার হচ্ছে।

সাংবাদিক শ্যামলেন্দু পাল বলেন, বেড়জাল, চায়না দুয়ারি জালের ফাঁদে জলাশয় থেকে উজাড় হচ্ছে পুঁটি, খলিশা, টাকি, চিংড়ি, ট্যাংরা, শিং, মাগুর, চেলা, দারকিনা, মলা, ঢেলা, বৈরালী, কাজলী, পাবদা, শোল ইত্যাদি বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। এসব জালে ছোট ছোট পোনা মাছও আটকা পড়ে যা ফেলে দেন শিকারিরা। বিশেষ করে এইসব জালে ডিমওয়ালা মাছ ধরা পড়ায় স্বাভাবিক প্রজনন, বংশ বিস্তার ও বৃদ্ধি হুমকিতে পড়েছে। এ ছাড়াও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী বিভিন্ন জলজপ্রাণী কাঁকড়া, সাপ, কুঁচিয়া, ব্যাঙ, ঝিনুক, শামুক, পোকামাকড়, কচ্ছপ, অণুজীব ইত্যাদির জীবনযাত্রা। জালের ব্যবহার বন্ধ করা না হলে মাছের বিপন্ন প্রজাতিসহ সব ধরনের জলজপ্রাণী হুমকির মুখে পড়বে। মৎস্যসম্পদ রক্ষায় প্রশাসনসহ সবাইকে এই জাল বন্ধে জোরালো পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন তিনি।

বাউসী অর্দ্ধচন্দ্র উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (স্কুল ও কলেজ) বাংলা বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক ও দৈনিক খবরের কাগজ পত্রিকার সাংবাদিক বিজয় চন্দ্র দাস বলেন, এটিকে জাল বলা হলেও এটি মূলত মাছ ধরা এবং আগামী প্রজন্মের জন্য মৎস্যসম্পদ ধ্বংস করার জন্য একটা বিশেষ ফাঁদ। এই জালের বুননে একটা গিঁট থেকে আরেকটি গিঁটের দূরত্ব খুব কম। যার কারণে এর ভেতরে একবার মাছ ঢুকলে আর বের হতে পারে না। স্থানভেদে এই জালকে চায়না দুয়ারি ও ম্যাজিক জাল বলা হয়।

তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের উচিত এ জাল ব্যবহার রোধে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা নেওয়া। এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে মানুষকে সচেতনতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা। সবাই যাতে এর ব্যবহার থেকে বিরত থাকে, সে ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। পাশাপাশি এর বিপণন ব্যবস্থায় শক্ত আঘাত জরুরি।

কথা হয় মোহনগঞ্জের তেঁতুলিয়া এলাকার  সুলতান আহমদ, খালিয়াজুড়ির গাগলাজুড় এলাকার জুলহাস মিয়া, মদনের ধুবাউলা এলাকার মদন দাস বারহাট্টার সিংধা এলাকার গোবিন্দ পালের সাথে কথা বললে তারা বলেন, চায়না জালের প্রভাবে জলাশয় থেকে কমছে মাছের প্রাচুর্য। বিশেষ করে পানি বৃদ্ধি ও মাছের প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা মাছ এই চায়না জালে নিধন হচ্ছে। এতে ক্রমেই মাছ শূন্য হয়ে পড়ছে জলাশয়। এসব জাল বন্ধ না হলে মৎস্য ভান্ডারে বিপর্যয় নেমে আসার শঙ্কা রয়েছে।

খালিয়াজুড়ি এলাকার মোমেন হাসান বলেন, আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের আমিষের চাহিদা পূরণে মাছই একমাত্র উপাদান। একটা সময়ে নদীনালা, খালবিল, হাওর-বাঁওড়ে দেশীয় মাছের প্রাচুর্য ছিল। অথচ চায়না দুয়ারি জালের কারণে বাঙালির জৌলুস হারিয়ে যেতে বসেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন বাজারের কয়েজন জাল ব্যবসায়ী জানান, নিষিদ্ধ এসব চায়না দুয়ারি রিং জাল সাধারণত এক থেকে দেড় ফুট উচ্চতা ও ৬০ থেকে ৯০ ফুট দৈর্ঘ্যের এবং ক্ষুদ্র ফাঁস বিশিষ্ট হয়। এটি লোহার রডের রিং দিয়ে খোপ আকারে বাক্স তৈরি করে চারপাশ সূক্ষ্ম জাল দিয়ে ঘেরাও করে তৈরি। এ জালে অসংখ্য প্রবেশমুখ থাকায় দুদিক থেকেই মাছ ঢুকতে পারে। জালের ফাঁস ছোট হওয়ায় ছোট কোনো মাছই এর থেকে রেহাই পায় না। আকার ও মানভেদে একটি চায়না জালের দাম দুই থেকে দশ হাজার টাকা। কম দাম ও সহজলভ্যতার কারণে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে বারহাট্টার প্রত্যন্ত অঞ্চলে।

কথা হয় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন এলাকার কয়েকজন জেলের সাথে তারা জানান, আগে কারেন্ট জাল ব্যবহার করলেও চায়না দুয়ারি আসার পর সেটি বাদ দিয়েছি। কারণ কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ ধরলে প্রশাসন উৎপাত করে। এ ছাড়া কারেন্ট জালের চেয়ে চায়না দুয়ারিতে মাছ বেশি পাওয়া যায়। তারা বলেন, চায়না দুয়ারি দিয়ে মাছ ধরা ঠিক না, তারপরও জীবিকার তাগিদে মাছ ধরছি।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল বলেন, বর্ষাকালেই নতুন পানিতে দেশীয় মাছের প্রজনন মৌসুম। এ সময়ে অবৈধ কারেন্ট জাল ও চায়না দুয়ারি জাল দিয়ে পোনাসহ ডিমওয়ালা মাছ ধ্বংস করা হচ্ছে। চায়না দুয়ারি জাল ক্রয়-বিক্রয় বন্ধে মৎস্য আইনে নিয়ম অনুযায়ী যদি কেউ ক্রয়-বিক্রি করে সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড, অনাদায়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। চায়না দুয়ারি ব্যবহারের ফলে দেশীয় প্রজাতির মাছ আজ বিলুপ্তির পথে।

তিনি আরও বলেন, মাছের পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ রক্ষার্থে এবং উৎপাদন বৃদ্ধিতে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা ও নজরদারি সত্ত্বেও কিছু অসাধু মানুষ অজ্ঞতাবশত এসব অবৈধ কারেন্ট জাল ব্যবহার করে মাছের প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য বাধাগ্রস্ত এবং ধ্বংস করছে। আমরা যদি সবাই সচেতন না হই, তাহলে চায়না দুয়ারি ব্যবহার বন্ধ হবে না এবং আমাদের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং জেলা ও উপজেলা মৎস্য বিভাগ থেকে চায়না দুয়ারি ও কারেন্ট জাল বন্ধে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এছাড়া সব ধরনের নিষিদ্ধ জালের বিরুদ্ধেও প্রচারণা চলমান রয়েছে।