ঢাকা ০১ জুলাই, ২০২৫
শিরোনামঃ
‘দ্য কোড অফ ক্রিমিনলি প্রসিডিউর (এমেনমেন্ট) অর্ডিন্যান্স- ২০২৫’ এর খসড়া অনুমোদন রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধি চূড়ান্ত করতে নাগরিকদের মতামত চেয়েছে ইসি নবীন প্রবীণে ছয় মুখ, লক্ষ্য সুনামগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দুর্ঘটনায় দু’জন চিকিৎসকসহ নিহত ৪ আহত অন্তত ১৬ মসজিদ-মাদ্রাসা হুমকিতে, সুনামগঞ্জে নদীতীরে মানববন্ধন জিহ্বার রঙ বলে দেবে আপনি সুস্থ না অসুস্থ দক্ষিণ ফিলিপাইনে ৬.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা নেই রাজনৈতিক মামলার বোঝা হালকা হচ্ছে, ২০ হাজার মামলা প্রত্যাহারের উদ্যোগ সুনামগঞ্জ-৫: নির্বাচনী মাঠে জমে উঠেছে রাজনৈতিক উত্তাপ বাগেরহাটে চারটি বিদেশী পিস্তলসহ মাইক্রোবাসে থাকা ১১জন আটক

সুনামগঞ্জ-৫: নির্বাচনী মাঠে জমে উঠেছে রাজনৈতিক উত্তাপ

#
news image

সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলা ও ভারতের সীমান্তবর্তী দোয়ারাবাজার উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৫ সংসদীয় আসনটি একাধিকবার আলোচনায় এসেছে দেশের জাতীয় রাজনীতিতে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী এই আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৮ হাজার ১০০ জন।

স্বাধীনতার পর এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিভিন্ন সময়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মুহিবুর রহমান মানিক পাঁচবার, বিএনপির কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন তিনবার এবং জাতীয় পার্টির আবুল হাসনাত মো. আব্দুল হাই ও আব্দুল মজিদ দু’বার করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আওয়ামী লীগ শাসনামলে গত তিনটি নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলার কারণে তাদের অনেককেই হয়রানির শিকার ও কারাবরণ করতে হয়েছে কিংবা আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে। তবে গত জুলাই মাসের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বদলে গেছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা এখন উন্মুক্তভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছেন।

আগামী ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সুনামগঞ্জ-৫ আসনে শুরু হয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হয়ে উঠেছেন বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী।

দুজনই ছাতকের বাসিন্দা। কলিম উদ্দিন মিলন এর আগে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মিজানুর রহমান চৌধুরী ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আলোচনায় আসেন। তিনি এক সময় ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

তবে বিএনপির এই দুই হেভিওয়েট নেতাকে ঘিরে গঠিত হয়েছে শক্তিশালী দুটি বলয়। মিলন ও মিজান অনুসারীদের মধ্যে মনোনয়ন পেতে চলছে তীব্র প্রতিযোগিতা। উভয়পক্ষই তাদের নেতার বিজয়ে দৃঢ় আশাবাদী।

এদিকে মাঠে দৃশ্যমানভাবে সক্রিয় হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামিও। দলটি ৫ আগস্টের পর থেকে ব্যাপক সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠন সম্পন্ন হয়েছে। দলের একক প্রার্থী হিসেবে মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী, যিনি ছাতকের বাসিন্দা, নিজ এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এছাড়া খেলাফত মজলিসের (আঃ বাছিত আজাদ-কাদের পন্থী) পক্ষে বেশ কয়েকজন আলোচনায় রয়েছেন। তারা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। কেন্দ্র যাকে মনোনয়ন দিবেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে সে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের (মামুনুল হকপন্থী) পক্ষ থেকেও মাঠে রয়েছেন মাওলানা সাদিক সালিম। তিনি দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা এবং দলের উচ্চতর পরিষদের সদস্য। ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ করছেন জেলা শাখার সংখ্যালঘু বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা হাবিবুল্লাহ আশরাফী।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা এবং ছাতকের জাবা মেডিকেল সেন্টারের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি সামাজিক কর্মকাণ্ড ও গণসংযোগে নিয়মিত রয়েছেন।

তবে মাঠে এখনো তৎপরতা দেখা যায়নি ভিপি নূরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র। এসব দলের কোনো প্রার্থী কিংবা সাংগঠনিক কার্যক্রম এখন পর্যন্ত ভোটারদের নজরে আসেনি।

দোয়ারাবাজার উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলতাফুর রহমান খসরু বলেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা সংগঠিতভাবে প্রস্তুত হচ্ছি। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটিগুলোকে পুনর্গঠন করে শক্তিশালী করা হচ্ছে। প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকলেও শেষ পর্যন্ত দলীয় সিদ্ধান্তে সবাই একত্রিত হয়ে কাজ করব।”

জামায়াতের দোয়ারাবাজার উপজেলা আমির ডা. হারুন অর রশীদ বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ৮১টি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করেছি। কেন্দ্র ঘোষিত প্রার্থীকে নিয়ে নিয়মিত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি এবং ভোটারদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। আপাতত এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

সব মিলিয়ে সুনামগঞ্জ-৫ আসনে এবার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ, শক্তিশালী নেতৃত্ব এবং গণসংযোগের মাধ্যমে নির্বাচনী মাঠ জমে উঠেছে যার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ চিত্র সামনে আসতে শুরু করেছে।

মোঃ ইকবাল হোসাইন, স্টাফ রিপোর্টার

২৮ জুন, ২০২৫,  1:17 PM

news image
নির্বাচনী মাঠে জামায়াত-খেলাফত-ইসলামী আন্দোলন সক্রিয়, অনুপস্থিত এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদ

সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলা ও ভারতের সীমান্তবর্তী দোয়ারাবাজার উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৫ সংসদীয় আসনটি একাধিকবার আলোচনায় এসেছে দেশের জাতীয় রাজনীতিতে। সর্বশেষ ২০২৩ সালের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী এই আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৮ হাজার ১০০ জন।

স্বাধীনতার পর এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিভিন্ন সময়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মুহিবুর রহমান মানিক পাঁচবার, বিএনপির কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন তিনবার এবং জাতীয় পার্টির আবুল হাসনাত মো. আব্দুল হাই ও আব্দুল মজিদ দু’বার করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আওয়ামী লীগ শাসনামলে গত তিনটি নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলার কারণে তাদের অনেককেই হয়রানির শিকার ও কারাবরণ করতে হয়েছে কিংবা আত্মগোপনে থাকতে হয়েছে। তবে গত জুলাই মাসের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর বদলে গেছে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা এখন উন্মুক্তভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছেন।

আগামী ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সুনামগঞ্জ-৫ আসনে শুরু হয়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হয়ে উঠেছেন বিএনপির দুই শীর্ষ নেতা জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী।

দুজনই ছাতকের বাসিন্দা। কলিম উদ্দিন মিলন এর আগে তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। মিজানুর রহমান চৌধুরী ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আলোচনায় আসেন। তিনি এক সময় ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

তবে বিএনপির এই দুই হেভিওয়েট নেতাকে ঘিরে গঠিত হয়েছে শক্তিশালী দুটি বলয়। মিলন ও মিজান অনুসারীদের মধ্যে মনোনয়ন পেতে চলছে তীব্র প্রতিযোগিতা। উভয়পক্ষই তাদের নেতার বিজয়ে দৃঢ় আশাবাদী।

এদিকে মাঠে দৃশ্যমানভাবে সক্রিয় হয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামিও। দলটি ৫ আগস্টের পর থেকে ব্যাপক সাংগঠনিক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি গঠন সম্পন্ন হয়েছে। দলের একক প্রার্থী হিসেবে মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী, যিনি ছাতকের বাসিন্দা, নিজ এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এছাড়া খেলাফত মজলিসের (আঃ বাছিত আজাদ-কাদের পন্থী) পক্ষে বেশ কয়েকজন আলোচনায় রয়েছেন। তারা কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন। কেন্দ্র যাকে মনোনয়ন দিবেন ঐক্যবদ্ধ হয়ে সে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের (মামুনুল হকপন্থী) পক্ষ থেকেও মাঠে রয়েছেন মাওলানা সাদিক সালিম। তিনি দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা এবং দলের উচ্চতর পরিষদের সদস্য। ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ করছেন জেলা শাখার সংখ্যালঘু বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা হাবিবুল্লাহ আশরাফী।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দোয়ারাবাজার উপজেলার বাসিন্দা এবং ছাতকের জাবা মেডিকেল সেন্টারের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি সামাজিক কর্মকাণ্ড ও গণসংযোগে নিয়মিত রয়েছেন।

তবে মাঠে এখনো তৎপরতা দেখা যায়নি ভিপি নূরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র। এসব দলের কোনো প্রার্থী কিংবা সাংগঠনিক কার্যক্রম এখন পর্যন্ত ভোটারদের নজরে আসেনি।

দোয়ারাবাজার উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলতাফুর রহমান খসরু বলেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা সংগঠিতভাবে প্রস্তুত হচ্ছি। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটিগুলোকে পুনর্গঠন করে শক্তিশালী করা হচ্ছে। প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকলেও শেষ পর্যন্ত দলীয় সিদ্ধান্তে সবাই একত্রিত হয়ে কাজ করব।”

জামায়াতের দোয়ারাবাজার উপজেলা আমির ডা. হারুন অর রশীদ বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ৮১টি ওয়ার্ডে কমিটি গঠন করেছি। কেন্দ্র ঘোষিত প্রার্থীকে নিয়ে নিয়মিত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি এবং ভোটারদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। আপাতত এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।”

সব মিলিয়ে সুনামগঞ্জ-৫ আসনে এবার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ, শক্তিশালী নেতৃত্ব এবং গণসংযোগের মাধ্যমে নির্বাচনী মাঠ জমে উঠেছে যার প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ চিত্র সামনে আসতে শুরু করেছে।