ঢাকা ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
শিরোনামঃ
মোংলা বন্দর ৭৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠানকে সন্মাননা প্রদান মোল্লাহাটে বিএনপির দু-পক্ষের সংঘর্ষে আহত-২৬ বাগেরহাটে সড়কের পাশে বাজারের ব্যাগে রাখা নবজাতক উদ্ধার আসুন রাজনৈতিক বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হই, সূচনা করি নতুন অধ্যায়ের : তারেক রহমান গাজীপুরের পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে কারখানার কর্মকর্তাদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া-আহত ৪ ইয়াং টাইগার অনুর্ধ-১৮ জাতীয় ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধন খাল-বিল-জলাভূমি অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে দল বেঁধে যুবদল নেতার উপর হামলা শেখ হাসিনার শাসনামলে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবৈধভাবে পাচার ফিলিস্তিনের লড়াই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম অনুপ্রেরণা : নাহিদ ইসলাম

কাশবনের পরম স্নেহে লালিত কবি গুণে'র জন্মভূমিতে একদিন

#
news image

কাশবনের পরম স্নেহে লালিত কবি গুণে'র জন্মভূমিতে একদিন

রিপন কান্তি গুণ,নেত্রকোনা প্রতিনিধি;

'পুচ্ছ তোলা পাখির মতো

কাশবনে এক কন্যে,

তুলছে কাশের ময়ূর-চূড়া-

কালো খোঁপার জন্যে।'

 

কবির লিখা 'কাশবনে এক কন্যে’ কবিতার লাইন সমুহে মেয়ের সৌন্দর্যের সাথে তুলনায় কবির তার নিজের গাঁয়ের প্রকৃতির কিছুটা স্নিগ্ধতার ছোঁয়া রেখেছেন।

 

কবি গুণে'র জন্মভূমি ও শৈশব কাটানো গ্রামটি অন্যান্য গ্রামের মতই শান্ত, সুনিবিড়, স্নিগ্ধ-শ্যামল ছায়ায় ঢাকা, পাখি ডাকা কোলাহলমুক্ত গ্রাম। জন্মের অধিকার নিয়ে, মাতৃবৎ ভালবেসে কবি গুণ তার গ্রামের নাম 'কাশতলা' পাল্টে রেখেছেন 'কাশবন'।

 

কবির ভাষায়- 'আমার একটি ছোট্ট সুন্দর গ্রাম ছিল, তার নামটিও ছিল ভারী সুন্দর 'কাশতলা', হয়তো এক সময় কাশফুলের খুব প্রাচুর্য ছিল ঐ গ্রামে। আমি কবিত্ব করে, তার নাম পাল্টে রেখেছিলাম "কাশবন"। ভালোবেসে প্রেমিক যেমন তার প্রেমিকার নাম পাল্টে রাখে, সে-ই আমার প্রথম কবিতা'....

কবি গুণে'র জন্মভূমি কাশবনে যেতে নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে গ্রামের বুক চিরে বয়ে চলা, আঁকা-বাঁকা পিচঢালা পথ। পথের দু'পাশে সবুজ ঘাসের চাদরে মোড়ানো। কৃষকের ঘাম ঝড়ানো কষ্টে বুনা ফসলের সবুজ মাঠ। পথ চলতে চলতে দেখা মিলবে বাঙালির কবি "পোয়েট অব বঙ্গবন্ধু" খেতাব প্রাপ্ত কবি নির্মলেন্দু গুণের জন্মস্থান কাশবন। কাশবনের দিকে পথে চলতে চলতে কবির গ্রাম কাশবনের সীমানায় রাস্তার পাশে শূর তুলে স্বাগত জানাবে- 'কবির স্ব-উদ্যোগে নির্মিত স্বাগত স্তম্ভের উপর ছোট্ট হাতির প্রতিমূর্তি'।

স্বাগত স্তম্ভের গায়ে লেখা 'স্বাগতম কাশবন'। স্বাগত স্তম্ভে রয়েছে  কবির লিখা- কয়েকটি কবিতার লাইন।মাকে যেমন ভালবাসে সন্তান, তেমনি কবিও ভালবাসেন কাশবনকে। কাশবনকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন কবির। আর সেই স্বপ্নের পথ ধরে তিনি কাশবনে প্রতিষ্ঠা করেছেন- সমৃদ্ধ পাঠাগার, বিদ্যানিকেতন, চিত্রশালা, সংগ্রহশালা, শহীদবেদী, মঞ্চ, ভাস্কর্য, সরোবর, শানবাঁধানো ঘাট আরও অনেক কিছু। কাশবনের প্রকৃতির ছোঁয়ায় দেখা মিলবে, কবির শৈশব কাটানো ছোট্ট গাঁয়ের কিছু খন্ড চিত্র। 

স্বাগত স্তম্ভ থেকে কিছু দূর এগিয়ে গেলে রাস্তার পাশেই গ্রামের ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার সুবিধার্থে কবির নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করছেন- 'কাশবন বিদ্যানিকেতন' পড়ালেখায় যেখানে ধনী-গরীবের কোন ভেদাভেদ নেই। বিদ্যালয়ের সামনেই রয়েছে- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, স্যার আইজ্যাক নিউটন ও  জগদীশ চন্দ্র বসুর ভাস্কর্য। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান চর্চার জন্য স্কুল আঙিনায় তৈরি করেছেন, 'জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞান ভবন'।কাশবন বিদ্যানিকেতন থেকে কয়েক কদম এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে কবির বাড়ির মুল ফটক। বাড়ির মূল ভিটায় টিনশেডের পুরাতন বসতঘর (যে, ঘরে কবি বাড়ী আসলে থাকেন)। বসত ঘরের পাশেই রয়েছে, ২০০৯ সালে কবির ঠাকুর'দার নামে নির্মিত 'রামসুন্দর পাঠাগার'। পাঠাগারের প্রবেশ মুখে রেখেছেন, কবির ঠাকুর'দা রামসুন্দর গুণের ম্যুরাল। পাঠাগারে রয়েছে, বিভিন্ন ধরনের বইয়ের সংগ্রহশালা। বই পড়ার সুবিধার্থে রাখা হয়েছে টেবিল, চেয়ার। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সহযোগিতায় পাঠাগারে চালু করা হয়েছে ইন্টারনেট সংযোগসহ কম্পিউটার।

কবি জানান, 'জেমকন সাহিত্য পুরস্কার' থেকে প্রাপ্ত দু'লাখ টাকার পুরোটাই ব্যয় করেন স্বপ্নের পাঠাগার তৈরীতে।পাঠাগারের পাশেই নির্মিত 'বীরচরণ মঞ্চে' বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা, নাটক, আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

কবি জানান, 'বীরচরণ সাধু নামে কাশতলা গ্রামে হদি (ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, আদিবাসী) সম্প্রদায়ের একজন লোককবি ছিলেন। এ শিল্পীকে স্মরণীয় করে রাখতেই মঞ্চটির নাম রাখা হয় বীরচরণ মঞ্চ।' ইতোমধ্যে অনেক মন্ত্রী, এমপি, জনপ্রতিনিধি, আমলা, কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীর চরণধুলো পড়েছে বীরচরণ মঞ্চে।

শান্ত সুনিবিড় কাশবনের শোভাবর্ধন করতে পাঠাগারের সামনে কবির বাবার নামে নিজ উদ্যোগে খনন করেছেন শানবাঁধানো ঘাটসহ সুখেন্দু সরোবর এবং বাড়ির পিছন দিকে ঠাকুরমার নামে কামিনী সরোবর নামের দুইটি স্বচ্ছ পানির পুকুর।  পুকুর পাড়ে গাছের ছায়ায় বসার জন্য রয়েছে- পাকা বেঞ্চ ও দোলনা। যেগুলোতে বিকেলবেলা বসে স্থিরমনে গ্রামের সবুজ ফসলের মাঠগুলো এবং মানুষজনের আনাগোনা উপভোগ করা যায়। 

বাড়ির আঙিনায় চারপাশে সুপারি, আম, কাঁঠাল, নারকেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। রয়েছে, মাইকেল মধুসূদন ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাস্কর্য। কবির বসত ঘরের সামনেই কবির প্রিয় ব্যক্তিত্ব 'জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল', যাতে লিখা রয়েছে-'বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ৭ই মার্চের শ্রেষ্ঠ ভাষন'।ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে ২০১০ সালে রামসুন্দর পাঠাগারের সামনে নির্মাণ করেছেন 'শহীদবেদী'। মার্বেল পাথর আর সেন্ট স্টোনের তৈরি ১১ ফুট দীর্ঘ বেদীটির মূল স্তম্ভের একপাশে আছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের ছবি। ছবির নিচে মোটা হরফে লেখা- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' বেদীর অন্যপাশে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর কালজয়ী একুশের গান 'আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি'।

চলতে চলতে বাড়ির আঙিনায় পাঠাগারের পেছনে দেখা মিলবে, ২০১১ সালে কবির জন্মদাত্রী মা ও পালিত মায়ের নামকরণে নির্মিত- 'বীনাপানি-চারুবালা সংগ্রহশালা'। সংগ্রহশালাটি মার্বেল পাথর আর পোড়ামাটির টাইলস দিয়ে তৈরি। সংগ্রহশালার ভিতরে রয়েছে- বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি, কবির বিভিন্ন পুরস্কারের ক্রেস্ট, সনদপত্র, চিঠি,উপহারসামগ্রী, পরিবারের সদস্যদের নানা স্মৃতি, দেশের ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শনসহ আরও অনেক কিছু।

সংগ্রহশালার পাশেই কবির এক দাদু ও বাবার নামে করা 'সারদা-বাসুদেব চিত্রশালা'। যেখানে গ্রামের ছোট ছেলে-মেয়েরা বিনা পয়সায় চিত্র আঁকা শিখছে। সঙ্গীত শিখার জন্য রয়েছে 'শৈলজা সঙ্গীত ভবন'।কবির বাড়ির পিছনে রয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আদিবাসীদের (হদি সম্প্রদায়) একটি পাড়া। যেখানে সারাদিন জুড়ে বাঁশ-বেতের বিভন্ন জিনিস তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করে।

এছাড়াও বাড়ির কিছু দূরে কবির নিজ উদ্দোগে তৈরি করা হয়েছে, 'সর্বজনীন শ্মশানঘাট' যেখানে নিজ পরিবার এবং গ্রামের অন্যান্য মৃত ব্যক্তিদের সৎকার করা হয়। সেখানেও রেখেছেন বই পড়ার ব্যবস্থা।

কবির গ্রামে আসার দিক নির্দেশনা :

ঢাকা থেকে ৩টি ট্রেন সরাসরি বারহাট্টা আসে। 'হাওর এক্সপ্রেস', 'মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস' এবং 'মহুয়া কমিউটর'। 

ঢাকা থেকে ট্রেনে করে বারহাট্টা স্টেশনে নামতে হবে।  (ভাড়া ২০০ থেকে ৪০০টাকা)। তাছাড়া বাসেও আসা যায়, বাসে আসলে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি মোহনগঞ্জের বাসে চড়ে বারহাট্টা নেমেও যাওয়া যায়। যদি সরাসরি আসতে না পারেন তবে, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে শাহজালাল পরিবহনে করে সরাসরি নেত্রকোনা বাসস্ট্যান্ডে নেমে সেখান থেকে রাজুর বারজার বাসস্ট্যান্ড থেকে বারহাট্টা বাসে বা সিএনজিতে চড়ে আসা যাবে ভাড়া ( ৫০-৬০ টাকা) তারপর বারহাট্টা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার রিকশা অটোরিকশা করে সরাসরি কাশবন কবি নির্মলেন্দু গুণের বাড়িতে বললেই পৌঁছানো যাবে।

 

রিপন কান্তি গুণ

০৬/০৬/২০২৪

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

জেলা প্রতিনিধি

০৬ জুন, ২০২৪,  11:37 PM

news image

কাশবনের পরম স্নেহে লালিত কবি গুণে'র জন্মভূমিতে একদিন

রিপন কান্তি গুণ,নেত্রকোনা প্রতিনিধি;

'পুচ্ছ তোলা পাখির মতো

কাশবনে এক কন্যে,

তুলছে কাশের ময়ূর-চূড়া-

কালো খোঁপার জন্যে।'

 

কবির লিখা 'কাশবনে এক কন্যে’ কবিতার লাইন সমুহে মেয়ের সৌন্দর্যের সাথে তুলনায় কবির তার নিজের গাঁয়ের প্রকৃতির কিছুটা স্নিগ্ধতার ছোঁয়া রেখেছেন।

 

কবি গুণে'র জন্মভূমি ও শৈশব কাটানো গ্রামটি অন্যান্য গ্রামের মতই শান্ত, সুনিবিড়, স্নিগ্ধ-শ্যামল ছায়ায় ঢাকা, পাখি ডাকা কোলাহলমুক্ত গ্রাম। জন্মের অধিকার নিয়ে, মাতৃবৎ ভালবেসে কবি গুণ তার গ্রামের নাম 'কাশতলা' পাল্টে রেখেছেন 'কাশবন'।

 

কবির ভাষায়- 'আমার একটি ছোট্ট সুন্দর গ্রাম ছিল, তার নামটিও ছিল ভারী সুন্দর 'কাশতলা', হয়তো এক সময় কাশফুলের খুব প্রাচুর্য ছিল ঐ গ্রামে। আমি কবিত্ব করে, তার নাম পাল্টে রেখেছিলাম "কাশবন"। ভালোবেসে প্রেমিক যেমন তার প্রেমিকার নাম পাল্টে রাখে, সে-ই আমার প্রথম কবিতা'....

কবি গুণে'র জন্মভূমি কাশবনে যেতে নেত্রকোনার বারহাট্টা উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার দক্ষিণে গ্রামের বুক চিরে বয়ে চলা, আঁকা-বাঁকা পিচঢালা পথ। পথের দু'পাশে সবুজ ঘাসের চাদরে মোড়ানো। কৃষকের ঘাম ঝড়ানো কষ্টে বুনা ফসলের সবুজ মাঠ। পথ চলতে চলতে দেখা মিলবে বাঙালির কবি "পোয়েট অব বঙ্গবন্ধু" খেতাব প্রাপ্ত কবি নির্মলেন্দু গুণের জন্মস্থান কাশবন। কাশবনের দিকে পথে চলতে চলতে কবির গ্রাম কাশবনের সীমানায় রাস্তার পাশে শূর তুলে স্বাগত জানাবে- 'কবির স্ব-উদ্যোগে নির্মিত স্বাগত স্তম্ভের উপর ছোট্ট হাতির প্রতিমূর্তি'।

স্বাগত স্তম্ভের গায়ে লেখা 'স্বাগতম কাশবন'। স্বাগত স্তম্ভে রয়েছে  কবির লিখা- কয়েকটি কবিতার লাইন।মাকে যেমন ভালবাসে সন্তান, তেমনি কবিও ভালবাসেন কাশবনকে। কাশবনকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন কবির। আর সেই স্বপ্নের পথ ধরে তিনি কাশবনে প্রতিষ্ঠা করেছেন- সমৃদ্ধ পাঠাগার, বিদ্যানিকেতন, চিত্রশালা, সংগ্রহশালা, শহীদবেদী, মঞ্চ, ভাস্কর্য, সরোবর, শানবাঁধানো ঘাট আরও অনেক কিছু। কাশবনের প্রকৃতির ছোঁয়ায় দেখা মিলবে, কবির শৈশব কাটানো ছোট্ট গাঁয়ের কিছু খন্ড চিত্র। 

স্বাগত স্তম্ভ থেকে কিছু দূর এগিয়ে গেলে রাস্তার পাশেই গ্রামের ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার সুবিধার্থে কবির নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করছেন- 'কাশবন বিদ্যানিকেতন' পড়ালেখায় যেখানে ধনী-গরীবের কোন ভেদাভেদ নেই। বিদ্যালয়ের সামনেই রয়েছে- জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, স্যার আইজ্যাক নিউটন ও  জগদীশ চন্দ্র বসুর ভাস্কর্য। শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান চর্চার জন্য স্কুল আঙিনায় তৈরি করেছেন, 'জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞান ভবন'।কাশবন বিদ্যানিকেতন থেকে কয়েক কদম এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে কবির বাড়ির মুল ফটক। বাড়ির মূল ভিটায় টিনশেডের পুরাতন বসতঘর (যে, ঘরে কবি বাড়ী আসলে থাকেন)। বসত ঘরের পাশেই রয়েছে, ২০০৯ সালে কবির ঠাকুর'দার নামে নির্মিত 'রামসুন্দর পাঠাগার'। পাঠাগারের প্রবেশ মুখে রেখেছেন, কবির ঠাকুর'দা রামসুন্দর গুণের ম্যুরাল। পাঠাগারে রয়েছে, বিভিন্ন ধরনের বইয়ের সংগ্রহশালা। বই পড়ার সুবিধার্থে রাখা হয়েছে টেবিল, চেয়ার। বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সহযোগিতায় পাঠাগারে চালু করা হয়েছে ইন্টারনেট সংযোগসহ কম্পিউটার।

কবি জানান, 'জেমকন সাহিত্য পুরস্কার' থেকে প্রাপ্ত দু'লাখ টাকার পুরোটাই ব্যয় করেন স্বপ্নের পাঠাগার তৈরীতে।পাঠাগারের পাশেই নির্মিত 'বীরচরণ মঞ্চে' বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা, নাটক, আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

কবি জানান, 'বীরচরণ সাধু নামে কাশতলা গ্রামে হদি (ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, আদিবাসী) সম্প্রদায়ের একজন লোককবি ছিলেন। এ শিল্পীকে স্মরণীয় করে রাখতেই মঞ্চটির নাম রাখা হয় বীরচরণ মঞ্চ।' ইতোমধ্যে অনেক মন্ত্রী, এমপি, জনপ্রতিনিধি, আমলা, কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীর চরণধুলো পড়েছে বীরচরণ মঞ্চে।

শান্ত সুনিবিড় কাশবনের শোভাবর্ধন করতে পাঠাগারের সামনে কবির বাবার নামে নিজ উদ্যোগে খনন করেছেন শানবাঁধানো ঘাটসহ সুখেন্দু সরোবর এবং বাড়ির পিছন দিকে ঠাকুরমার নামে কামিনী সরোবর নামের দুইটি স্বচ্ছ পানির পুকুর।  পুকুর পাড়ে গাছের ছায়ায় বসার জন্য রয়েছে- পাকা বেঞ্চ ও দোলনা। যেগুলোতে বিকেলবেলা বসে স্থিরমনে গ্রামের সবুজ ফসলের মাঠগুলো এবং মানুষজনের আনাগোনা উপভোগ করা যায়। 

বাড়ির আঙিনায় চারপাশে সুপারি, আম, কাঁঠাল, নারকেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। রয়েছে, মাইকেল মধুসূদন ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাস্কর্য। কবির বসত ঘরের সামনেই কবির প্রিয় ব্যক্তিত্ব 'জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল', যাতে লিখা রয়েছে-'বঙ্গবন্ধুর কালজয়ী ৭ই মার্চের শ্রেষ্ঠ ভাষন'।ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে ২০১০ সালে রামসুন্দর পাঠাগারের সামনে নির্মাণ করেছেন 'শহীদবেদী'। মার্বেল পাথর আর সেন্ট স্টোনের তৈরি ১১ ফুট দীর্ঘ বেদীটির মূল স্তম্ভের একপাশে আছে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের ছবি। ছবির নিচে মোটা হরফে লেখা- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।' বেদীর অন্যপাশে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর কালজয়ী একুশের গান 'আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি'।

চলতে চলতে বাড়ির আঙিনায় পাঠাগারের পেছনে দেখা মিলবে, ২০১১ সালে কবির জন্মদাত্রী মা ও পালিত মায়ের নামকরণে নির্মিত- 'বীনাপানি-চারুবালা সংগ্রহশালা'। সংগ্রহশালাটি মার্বেল পাথর আর পোড়ামাটির টাইলস দিয়ে তৈরি। সংগ্রহশালার ভিতরে রয়েছে- বিভিন্ন পাণ্ডুলিপি, কবির বিভিন্ন পুরস্কারের ক্রেস্ট, সনদপত্র, চিঠি,উপহারসামগ্রী, পরিবারের সদস্যদের নানা স্মৃতি, দেশের ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শনসহ আরও অনেক কিছু।

সংগ্রহশালার পাশেই কবির এক দাদু ও বাবার নামে করা 'সারদা-বাসুদেব চিত্রশালা'। যেখানে গ্রামের ছোট ছেলে-মেয়েরা বিনা পয়সায় চিত্র আঁকা শিখছে। সঙ্গীত শিখার জন্য রয়েছে 'শৈলজা সঙ্গীত ভবন'।কবির বাড়ির পিছনে রয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আদিবাসীদের (হদি সম্প্রদায়) একটি পাড়া। যেখানে সারাদিন জুড়ে বাঁশ-বেতের বিভন্ন জিনিস তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করে।

এছাড়াও বাড়ির কিছু দূরে কবির নিজ উদ্দোগে তৈরি করা হয়েছে, 'সর্বজনীন শ্মশানঘাট' যেখানে নিজ পরিবার এবং গ্রামের অন্যান্য মৃত ব্যক্তিদের সৎকার করা হয়। সেখানেও রেখেছেন বই পড়ার ব্যবস্থা।

কবির গ্রামে আসার দিক নির্দেশনা :

ঢাকা থেকে ৩টি ট্রেন সরাসরি বারহাট্টা আসে। 'হাওর এক্সপ্রেস', 'মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস' এবং 'মহুয়া কমিউটর'। 

ঢাকা থেকে ট্রেনে করে বারহাট্টা স্টেশনে নামতে হবে।  (ভাড়া ২০০ থেকে ৪০০টাকা)। তাছাড়া বাসেও আসা যায়, বাসে আসলে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি মোহনগঞ্জের বাসে চড়ে বারহাট্টা নেমেও যাওয়া যায়। যদি সরাসরি আসতে না পারেন তবে, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে শাহজালাল পরিবহনে করে সরাসরি নেত্রকোনা বাসস্ট্যান্ডে নেমে সেখান থেকে রাজুর বারজার বাসস্ট্যান্ড থেকে বারহাট্টা বাসে বা সিএনজিতে চড়ে আসা যাবে ভাড়া ( ৫০-৬০ টাকা) তারপর বারহাট্টা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার রিকশা অটোরিকশা করে সরাসরি কাশবন কবি নির্মলেন্দু গুণের বাড়িতে বললেই পৌঁছানো যাবে।

 

রিপন কান্তি গুণ

০৬/০৬/২০২৪

নেত্রকোনা প্রতিনিধি