কালা মানিকের সঙ্গে লাগলে বেঁচে থাকায় মুশকিল

সবুজ আহম্মেদ, বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধিঃ
২৫ এপ্রিল, ২০২৫, 5:38 PM

কালা মানিকের সঙ্গে লাগলে বেঁচে থাকায় মুশকিল
রংপুরের বদরগঞ্জে কালা মানিকের সঙ্গে লাগলে বেঁচে থাকায় মুশকিল
পুলিশের সঙ্গে মধুর কেমিস্ট্রি । থানার নিয়ন্ত্রকও কালা মানিক ! এ কারণে দেড় শতাধিক সশস্ত্র ক্যাডার নিয়ে প্রকাশ্যে বিএনপি নেতাকে হত্যার ২০ দিন পরও কিছুই হয়নি। তিনি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কালা মানিক, পুরো নাম শহিদুল হক মানিক। বদরগঞ্জ উপজেলার ১৩-নম্বর কালুপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান। ছেলে তানভীর আহম্মেদ তমালও কম নন !
স্থানীয়দের দাবি, বাপ-ব্যাটার সঙ্গে লাগতে গেলে বাঁচতে পারত না কেউ, বেঁচে থাকায় হয়ে উঠতো মুশকিল । যেমন পারেননি মধুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সমাজকল্যাণ সম্পাদক লাভলু সরকার (৫২)। তাঁকে প্রকাশ্যে দিবালোকে হত্যার পর মানিক পালিয়ে বেড়ালেও বাহিনীর লোকজন হুমকি জারি অভ্যাহত রেখেছে।
বদরগঞ্জ শহরের কেন্দ্রীয় জামেমসজিদ এলাকার স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। মানিক-তমাল বাহিনীর ভয়ে সবার মুখে তালা। দু-একজন কথা বলতে চাইলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তাদেরই একজন শহরের কাপড় ব্যবসায়ী বললেন, কালুপাড়া ইউনিয়ন-সহ শহরের বিভিন্ন স্থানে মানিক ও তমালের দাপটের কথা । তাদের নেতৃত্বেই চলে দখল-চাঁদাবাজি। কেউ বিরোধিতা করলে চলে হামলা, দেওয়া হয় প্রাণনাশের হুমকি। বালু ও মাদক সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রকও তারা।
মধুপুর ইউনিয়নের আরেক বাসিন্দা জানালেন, মানিকের নামে হত্যা, চাঁদাবাজি, সরকারি টাকা আত্মসাৎসহ বহু মামলা থাকলেও বারবার জামিনে বেরিয়ে আসেন। পুলিশের সঙ্গেও রয়েছে সখ্যতা। পুলিশের মধ্যেই তাঁর আছে ‘নিজস্ব সোর্স’। পুলিশ কখন কী করছে, খবর আগাম পেয়ে জায় মানিক।
ঘোষণা দিয়ে লাভলু হত্যা
বিএনপি নেতা লাভলুকে জানে মারবেন, সে ঘোষণা হত্যার দু’দিন আগে নিজের ফেসবুক পেজে দিয়েছিলেন মানিকের ছেলে তানভীর আহমেদ তমাল। লিখেছিলেন, ‘খেলা দেখানো হবে’। কথা অনুযায়ী কাজও করে। ৫ এপ্রিল সকালে মানিক-তমালের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক ক্যাডার সবার সামনে শহীদ মিনারের পাশে বাচ্চা মিয়ার গলিতে হামলা চালায় লাভলু সরকারের ওপর। তাঁর সঙ্গে থাকা আরও ৬-৭ জনকে কুপিয়ে বীরদর্পে এলাকা ছাড়ে তারা। একটি দোকানের দখল নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। লাভলুর ছেলে রায়হান কবীর বলেন, পুলিশ কোনো আসামি ধরেনি। সন্ত্রাসীরা নামে-বেনামে মামলা তুলে নিতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, লাভলু ছিলেন সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সদস্য, (সদ্য বহিষ্কৃত) মোহাম্মদ আলী সরকারের অনুসারী। চেয়ারম্যান মানিক নিজেকে বিএনপি নেতা দাবি করলেও দলীয় পদ নেই। ২০০২ সালে ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক থাকাকালে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কৃত হন। এর পর তিনি সুযোগ বুঝে বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়ে চলতেন। এখন উপজেলা ও পৌর বিএনপির কয়েকজন বাপ-ছেলের বাহিনীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়।
মানিকের কাছে রাজনীতি শিল্প
১৯৮৯ সালে বদরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে ছাত্রশিবিরের মাধ্যমে মানিকের রাজনীতির হাতেখড়ি। ২০০২ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করলে বহিষ্কৃত হন। এর পর সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর হাত ধরে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। ২০০৯ সালে আনিসুল ইসলাম মণ্ডল জাপার এমপি হলে মানিক তাঁর শিষ্য হয়ে যান। গত ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ডিউক চৌধুরীর ছায়ায় ছিলেন। রাজনৈতিক পালাবদলের পর বিএনপির সাবেক নেতা পরিচয় সামনে আনেন। সখ্য গড়ে তোলেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক এমপি অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তীর সঙ্গে। পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আজিজুল হক, বিএনপি নেতা উত্তম সাহাসহ কয়েক নেতার সঙ্গেও ।
পরিতোষ চক্রবর্তী বলেন, ‘একই গ্রামে বাড়ি হওয়ায় প্রতিনিয়ত মানিকের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়। শেল্টারের বিষয় ঠিক নয়।’ আজিজুল হক বলেন, ‘আমি নই, মানিক চেয়ারম্যানই অনেককে শেল্টার দেন।’
যত অপকর্ম মানিকের
২০২২ সালের ২৮ মে বিরামপুরের ইউএনও কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী আবদুল মজিদকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে খুন করা হয়। মজিদের স্ত্রী বিলকিস বেগম জানান, ‘আমার স্বামীকে ডেকে নিয়ে খুন করে সড়ক দুর্ঘটনার নাটক সাজান মানিক। মামলা করেও বিচার পাইনি।
২০১৮ সালে মানিকের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আনোয়ারুল হক । তিনি জানান, মানিক তাঁর বাহিনী দিয়ে পিটিয়ে তাঁকে আহত করে। খোলাহাটি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীকে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে বস্তায় ভরে হত্যার চেষ্টা করে মানিকের বাহিনী।
২০২০ সালে পারিবারিক বিরোধে তমাল তার বড় চাচা মোতালেব হোসেন দুদুকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ১টি পা বিচ্ছিন্ন করে দেন। মোতালেব জানান, ‘ওরা আমার ছেলে সোহাগ ও গোলাম হোসেন সবুজকেও কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে, মামলা করলেও পুলিশ ব্যবস্থা নেননি।
ইউপি নির্বাচনে পক্ষে ভোট না করায় ২০১৩ সালে বৈরামপুরহাটে আমজাদ হোসেন ও ছহিরুল ইসলামকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। সেখানে মানিক বিচারক সেজে ফাঁসি দেওয়ার ঘোষণাও দেন। বাদী আমজাদ হোসেনের বাবা আবদুল গফুর বলেন, ‘মানিক ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ ধরেনি।’
শহরের সিও রোডে মানিক মোটরসের শোরুমের আন্ডারগ্রাউন্ডে টর্চার সেল। সেখানে নির্যাতনের শিকার মোটরসাইকেল মেকার বিপ্লব মিয়া বলেন, ‘মামলা করে উল্টো হুমকিতে দিন কাটছে।
অভিযোগের বিষয়ে মানিকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। লাভলু হত্যার পর থেকে তিনি পলাতক। মোবাইল নম্বরও বন্ধ।
তমালের দাপট
শতাধিক মাদকাসক্ত যুবককে নিয়ে চলাফেরা তমালের। চাঁদাবাজি, বালু ও মাদকের কারবার তাঁর নিয়ন্ত্রণে। সেখান থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার চাঁদা ওঠে। গত নভেম্বরে বদরগঞ্জ শহরে আব্দুল মতিন শাহ্ ও আমেরিকা প্রবাসী শামস আল মমিনের প্রায় আড়াই কোটি টাকার তিন একর জমি দখল করেন তমাল। বন্ধন কমিউনিটি সেন্টার, চাতালকল, ১০টি গোডাউন ঘর কবজায় নেন তিনি। পরে যৌথ বাহিনী অভিযান চালালে পাঁচ সদস্যসহ গ্রেপ্তার হন তমাল। শামস আল মমিন বলেন, ঘটনার কিছুদিনের মধ্যেই জেল থেকে বের হয়ে আসেন তারা।
গত ৬ সেপ্টেম্বর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে হামলা হয়। সাব-রেজিস্ট্রার রেজাউল ইসলাম জানান, তমাল তাঁর প্রধান সহযোগী তানজিদ আহমেদ প্রান্তকে দিয়ে চাঁদা নেওয়ার চেষ্টা করলে দলিল লেখকদের সঙ্গে মারামারি হয়। সর্বশেষ লাভলু হত্যাকাণ্ডে সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে তমাল বাহিনীকে হাঁসুয়া, বল্লম, তীর-ধনুক হাতে হামলা করতে দেখা যায়।
তমাল পালিয়ে থাকায় এসব বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী জানান, ‘এত খুন, অপকর্ম, চাঁদাবাজির পরও পুলিশ মানিকের সঙ্গে সখ্যতা রেখে চলেছে। লাভলুর প্রকৃত খুনি গ্রেপ্তার না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
মানিকের সঙ্গে সখ্যেতার ব্যাপারে বদরগঞ্জ থানার এএসআই বিদ্যুৎ মজুমদার জানান, অভিযোগ সত্য নয়। আর মানিকের পক্ষে থানায় গোয়েন্দাগিরি প্রসঙ্গে বলেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। বিষয়টিকে ভিন্ন চোখে দেখার সুযোগ নেই।
বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, অভিযোগ সঠিক নয়। হত্যার আগে থেকেই দু’পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টাসহ সংঘর্ষ ঠেকাতে পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এ পর্যন্ত এজাহার নামীয় একজন সহ ৮-জনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে ।
সবুজ আহম্মেদ, বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধিঃ
২৫ এপ্রিল, ২০২৫, 5:38 PM

রংপুরের বদরগঞ্জে কালা মানিকের সঙ্গে লাগলে বেঁচে থাকায় মুশকিল
পুলিশের সঙ্গে মধুর কেমিস্ট্রি । থানার নিয়ন্ত্রকও কালা মানিক ! এ কারণে দেড় শতাধিক সশস্ত্র ক্যাডার নিয়ে প্রকাশ্যে বিএনপি নেতাকে হত্যার ২০ দিন পরও কিছুই হয়নি। তিনি রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার কালা মানিক, পুরো নাম শহিদুল হক মানিক। বদরগঞ্জ উপজেলার ১৩-নম্বর কালুপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান। ছেলে তানভীর আহম্মেদ তমালও কম নন !
স্থানীয়দের দাবি, বাপ-ব্যাটার সঙ্গে লাগতে গেলে বাঁচতে পারত না কেউ, বেঁচে থাকায় হয়ে উঠতো মুশকিল । যেমন পারেননি মধুপুর ইউনিয়ন বিএনপির সমাজকল্যাণ সম্পাদক লাভলু সরকার (৫২)। তাঁকে প্রকাশ্যে দিবালোকে হত্যার পর মানিক পালিয়ে বেড়ালেও বাহিনীর লোকজন হুমকি জারি অভ্যাহত রেখেছে।
বদরগঞ্জ শহরের কেন্দ্রীয় জামেমসজিদ এলাকার স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। মানিক-তমাল বাহিনীর ভয়ে সবার মুখে তালা। দু-একজন কথা বলতে চাইলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তাদেরই একজন শহরের কাপড় ব্যবসায়ী বললেন, কালুপাড়া ইউনিয়ন-সহ শহরের বিভিন্ন স্থানে মানিক ও তমালের দাপটের কথা । তাদের নেতৃত্বেই চলে দখল-চাঁদাবাজি। কেউ বিরোধিতা করলে চলে হামলা, দেওয়া হয় প্রাণনাশের হুমকি। বালু ও মাদক সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রকও তারা।
মধুপুর ইউনিয়নের আরেক বাসিন্দা জানালেন, মানিকের নামে হত্যা, চাঁদাবাজি, সরকারি টাকা আত্মসাৎসহ বহু মামলা থাকলেও বারবার জামিনে বেরিয়ে আসেন। পুলিশের সঙ্গেও রয়েছে সখ্যতা। পুলিশের মধ্যেই তাঁর আছে ‘নিজস্ব সোর্স’। পুলিশ কখন কী করছে, খবর আগাম পেয়ে জায় মানিক।
ঘোষণা দিয়ে লাভলু হত্যা
বিএনপি নেতা লাভলুকে জানে মারবেন, সে ঘোষণা হত্যার দু’দিন আগে নিজের ফেসবুক পেজে দিয়েছিলেন মানিকের ছেলে তানভীর আহমেদ তমাল। লিখেছিলেন, ‘খেলা দেখানো হবে’। কথা অনুযায়ী কাজও করে। ৫ এপ্রিল সকালে মানিক-তমালের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক ক্যাডার সবার সামনে শহীদ মিনারের পাশে বাচ্চা মিয়ার গলিতে হামলা চালায় লাভলু সরকারের ওপর। তাঁর সঙ্গে থাকা আরও ৬-৭ জনকে কুপিয়ে বীরদর্পে এলাকা ছাড়ে তারা। একটি দোকানের দখল নিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। লাভলুর ছেলে রায়হান কবীর বলেন, পুলিশ কোনো আসামি ধরেনি। সন্ত্রাসীরা নামে-বেনামে মামলা তুলে নিতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, লাভলু ছিলেন সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সদস্য, (সদ্য বহিষ্কৃত) মোহাম্মদ আলী সরকারের অনুসারী। চেয়ারম্যান মানিক নিজেকে বিএনপি নেতা দাবি করলেও দলীয় পদ নেই। ২০০২ সালে ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক থাকাকালে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কৃত হন। এর পর তিনি সুযোগ বুঝে বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীনদের আশ্রয়ে চলতেন। এখন উপজেলা ও পৌর বিএনপির কয়েকজন বাপ-ছেলের বাহিনীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়।
মানিকের কাছে রাজনীতি শিল্প
১৯৮৯ সালে বদরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে ছাত্রশিবিরের মাধ্যমে মানিকের রাজনীতির হাতেখড়ি। ২০০২ সালে বিএনপিতে যোগ দিয়ে পরিচিত হওয়ার চেষ্টা করলে বহিষ্কৃত হন। এর পর সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর হাত ধরে জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। ২০০৯ সালে আনিসুল ইসলাম মণ্ডল জাপার এমপি হলে মানিক তাঁর শিষ্য হয়ে যান। গত ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ডিউক চৌধুরীর ছায়ায় ছিলেন। রাজনৈতিক পালাবদলের পর বিএনপির সাবেক নেতা পরিচয় সামনে আনেন। সখ্য গড়ে তোলেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক এমপি অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তীর সঙ্গে। পৌর বিএনপির আহ্বায়ক আজিজুল হক, বিএনপি নেতা উত্তম সাহাসহ কয়েক নেতার সঙ্গেও ।
পরিতোষ চক্রবর্তী বলেন, ‘একই গ্রামে বাড়ি হওয়ায় প্রতিনিয়ত মানিকের সঙ্গে দেখা হয়, কথা হয়। শেল্টারের বিষয় ঠিক নয়।’ আজিজুল হক বলেন, ‘আমি নই, মানিক চেয়ারম্যানই অনেককে শেল্টার দেন।’
যত অপকর্ম মানিকের
২০২২ সালের ২৮ মে বিরামপুরের ইউএনও কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী আবদুল মজিদকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে খুন করা হয়। মজিদের স্ত্রী বিলকিস বেগম জানান, ‘আমার স্বামীকে ডেকে নিয়ে খুন করে সড়ক দুর্ঘটনার নাটক সাজান মানিক। মামলা করেও বিচার পাইনি।
২০১৮ সালে মানিকের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আনোয়ারুল হক । তিনি জানান, মানিক তাঁর বাহিনী দিয়ে পিটিয়ে তাঁকে আহত করে। খোলাহাটি ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীকে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে বস্তায় ভরে হত্যার চেষ্টা করে মানিকের বাহিনী।
২০২০ সালে পারিবারিক বিরোধে তমাল তার বড় চাচা মোতালেব হোসেন দুদুকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ১টি পা বিচ্ছিন্ন করে দেন। মোতালেব জানান, ‘ওরা আমার ছেলে সোহাগ ও গোলাম হোসেন সবুজকেও কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে, মামলা করলেও পুলিশ ব্যবস্থা নেননি।
ইউপি নির্বাচনে পক্ষে ভোট না করায় ২০১৩ সালে বৈরামপুরহাটে আমজাদ হোসেন ও ছহিরুল ইসলামকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। সেখানে মানিক বিচারক সেজে ফাঁসি দেওয়ার ঘোষণাও দেন। বাদী আমজাদ হোসেনের বাবা আবদুল গফুর বলেন, ‘মানিক ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ ধরেনি।’
শহরের সিও রোডে মানিক মোটরসের শোরুমের আন্ডারগ্রাউন্ডে টর্চার সেল। সেখানে নির্যাতনের শিকার মোটরসাইকেল মেকার বিপ্লব মিয়া বলেন, ‘মামলা করে উল্টো হুমকিতে দিন কাটছে।
অভিযোগের বিষয়ে মানিকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। লাভলু হত্যার পর থেকে তিনি পলাতক। মোবাইল নম্বরও বন্ধ।
তমালের দাপট
শতাধিক মাদকাসক্ত যুবককে নিয়ে চলাফেরা তমালের। চাঁদাবাজি, বালু ও মাদকের কারবার তাঁর নিয়ন্ত্রণে। সেখান থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার চাঁদা ওঠে। গত নভেম্বরে বদরগঞ্জ শহরে আব্দুল মতিন শাহ্ ও আমেরিকা প্রবাসী শামস আল মমিনের প্রায় আড়াই কোটি টাকার তিন একর জমি দখল করেন তমাল। বন্ধন কমিউনিটি সেন্টার, চাতালকল, ১০টি গোডাউন ঘর কবজায় নেন তিনি। পরে যৌথ বাহিনী অভিযান চালালে পাঁচ সদস্যসহ গ্রেপ্তার হন তমাল। শামস আল মমিন বলেন, ঘটনার কিছুদিনের মধ্যেই জেল থেকে বের হয়ে আসেন তারা।
গত ৬ সেপ্টেম্বর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে হামলা হয়। সাব-রেজিস্ট্রার রেজাউল ইসলাম জানান, তমাল তাঁর প্রধান সহযোগী তানজিদ আহমেদ প্রান্তকে দিয়ে চাঁদা নেওয়ার চেষ্টা করলে দলিল লেখকদের সঙ্গে মারামারি হয়। সর্বশেষ লাভলু হত্যাকাণ্ডে সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে তমাল বাহিনীকে হাঁসুয়া, বল্লম, তীর-ধনুক হাতে হামলা করতে দেখা যায়।
তমাল পালিয়ে থাকায় এসব বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী জানান, ‘এত খুন, অপকর্ম, চাঁদাবাজির পরও পুলিশ মানিকের সঙ্গে সখ্যতা রেখে চলেছে। লাভলুর প্রকৃত খুনি গ্রেপ্তার না হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
মানিকের সঙ্গে সখ্যেতার ব্যাপারে বদরগঞ্জ থানার এএসআই বিদ্যুৎ মজুমদার জানান, অভিযোগ সত্য নয়। আর মানিকের পক্ষে থানায় গোয়েন্দাগিরি প্রসঙ্গে বলেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। বিষয়টিকে ভিন্ন চোখে দেখার সুযোগ নেই।
বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, অভিযোগ সঠিক নয়। হত্যার আগে থেকেই দু’পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টাসহ সংঘর্ষ ঠেকাতে পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এ পর্যন্ত এজাহার নামীয় একজন সহ ৮-জনকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে ।