নেত্রকোনায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে হামলা, ৩ যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মামলা

নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
১৭ এপ্রিল, ২০২৫, 3:18 PM

নেত্রকোনায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে হামলা, ৩ যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মামলা
নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে মঞ্চে হামলার ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে উপজেলা যুবদলের ৩ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে প্রশাসন।
আটপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন বাদী হয়ে (১৫ এপ্রিল) মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব নূর মোহাম্মদ খান ফরিদকে প্রধান আসামি করে ৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১২ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
মামলায় নাম উল্লেখ করা অন্য দুই আসামিরা হলেন-উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক মোতাসছির হোসেন ওরফে কাইয়ুম ও কামাল মিয়া।
উপজেলা প্রশাসন, মামলার এজাহার ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সোমবার সকাল থেকে আটপাড়া উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন মুক্তমঞ্চে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলছিল। এতে বিভিন্ন সামজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা অংশ নেন। প্রথম অধিবেশনের পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘উপজেলা প্রশাসন বিদ্যানিকেতন’ এর শিক্ষার্থীরা নৃত্য পরিবেশন করছিল। এ সময় উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব নূর মোহাম্মদ খান ফরিদ, যুগ্ন আহ্বায়ক মোতাসছির হোসেন ও কামাল মিয়ার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত হন। পরে তারা ইউএনও’কে দ্রুত অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলেন। এ সময় ইউএনও কারণ জানতে চাইলে, মঞ্চের ব্যানারে কেন স্থান হিসেবে ‘উপজেলা পরিষদ বঙ্গবন্ধু চত্তর’ লেখা হয়েছে? এ কথা বলে মোতাসছিরের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা মঞ্চে উঠে শিক্ষার্থীদের নামিয়ে দিয়ে মঞ্চে থাকা ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন বলেন, ‘এ সময় ইউএনওসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা বাধা দিতে চাইলে নেতারা তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। তাঁদের মধ্যে একজন উপস্থাপককে মারধর করে মাইক কেড়ে নিয়ে ইউএনওকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজসহ ফ্যাসিস্টের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করে আন্দোলনের ঘোষণা দেন।‘
প্রত্যক্ষদর্শী এক কর্মকর্তা জানান, তখন ইউএনও বলেন ব্যানারের কোথাও তো ‘বঙ্গবন্ধু চত্তর’ লেখা নেই। তখন সদস্য সচিব নূর ফরিদ তর্কে জড়িয়ে আবারো বলেন, না ব্যানারে বঙ্গবন্ধুর নাম আছে। ফেইসবুকেও ব্যানারের ছবি পোষ্ট আছে। আমার ফোনেও এই ছবি একজন পাঠিয়েছেন। অনুষ্ঠান এখনি বন্ধ করতে হবে। বিশঙ্খলার কারণে একপর্যায়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে অনুষ্ঠানটি পণ্ড হয়ে যায়। পরে দেখা যায় ফেইসবুকে পোস্ট করা ওই ছবিটি ১৪৩০ বঙ্গাব্দের।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুয়েল সাংমা বলেন, উপজেলার যুবদলের সদস্য সচিব নূর মোহাম্মদ খান ফরিদের নেতৃত্বে কাইয়ুম (মোতাসছির হোসেন), কামালসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী সংঘবদ্ধ হয়ে হঠাৎ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মঞ্চের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় আমি কারণ জানতে চাইলে তারা আমাকেসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেন। পরে উপস্থাপককে মারধর করে মাইক হাতে নিয়ে আমাকে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার মামলা হয়েছে।
আটপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, মঞ্চে হামলা, ভাঙচুর, অনুষ্ঠানপণ্ড করাসহ সরকারি কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিতের ঘটনায় উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিবসহ ৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের অভিযান চলছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নূর ফরিদ খান বলেন, ওইদিন আমরা একটি স্থানে বসেছিলাম। হঠাৎ একজন আমার ম্যাসেঞ্জারে একটি ব্যানার দেয়। ওই ব্যানারে ‘বঙ্গবন্ধু চত্তর’ লেখা ছিল। ফেইসবুকেও একজনের শেয়ার দেখেছি। পরে আমরা মঞ্চে গিয়ে কারণ জানতে চাই। এ সময় আমাদের দলের কাইয়ুম, কামাল হোসেনসহ কয়েকজন ব্যানার নামিয়ে ফেলেন। পরে প্রশাসনের লোকজন আমাদের নিশ্চিত করেন যে ব্যানারে বঙ্গবন্ধুর নাম নেই। বিষয়টি আমাদের ভুল হয়ে গেছে। এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমরা ইউএনও মহোদয়ের কাছে ভুল স্বীকার করেছি এবং মাফ চেয়েছি। আপনারাও বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর আমরা কাউকে লাঞ্ছিত করিনি। এটা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মামলা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী বলেন, আটপাড়া উপজেলা প্রশাসনের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা কোনভাবেই কাম্য নয়। আমরা দলীয়ভাবে বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
১৭ এপ্রিল, ২০২৫, 3:18 PM

নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে মঞ্চে হামলার ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে উপজেলা যুবদলের ৩ নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে প্রশাসন।
আটপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন বাদী হয়ে (১৫ এপ্রিল) মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব নূর মোহাম্মদ খান ফরিদকে প্রধান আসামি করে ৩ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১২ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
মামলায় নাম উল্লেখ করা অন্য দুই আসামিরা হলেন-উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহ্বায়ক মোতাসছির হোসেন ওরফে কাইয়ুম ও কামাল মিয়া।
উপজেলা প্রশাসন, মামলার এজাহার ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সোমবার সকাল থেকে আটপাড়া উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন মুক্তমঞ্চে উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলছিল। এতে বিভিন্ন সামজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা অংশ নেন। প্রথম অধিবেশনের পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দ্বিতীয় অধিবেশনে ‘উপজেলা প্রশাসন বিদ্যানিকেতন’ এর শিক্ষার্থীরা নৃত্য পরিবেশন করছিল। এ সময় উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব নূর মোহাম্মদ খান ফরিদ, যুগ্ন আহ্বায়ক মোতাসছির হোসেন ও কামাল মিয়ার নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত হন। পরে তারা ইউএনও’কে দ্রুত অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বলেন। এ সময় ইউএনও কারণ জানতে চাইলে, মঞ্চের ব্যানারে কেন স্থান হিসেবে ‘উপজেলা পরিষদ বঙ্গবন্ধু চত্তর’ লেখা হয়েছে? এ কথা বলে মোতাসছিরের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা মঞ্চে উঠে শিক্ষার্থীদের নামিয়ে দিয়ে মঞ্চে থাকা ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী একজন বলেন, ‘এ সময় ইউএনওসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা বাধা দিতে চাইলে নেতারা তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। তাঁদের মধ্যে একজন উপস্থাপককে মারধর করে মাইক কেড়ে নিয়ে ইউএনওকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজসহ ফ্যাসিস্টের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করে আন্দোলনের ঘোষণা দেন।‘
প্রত্যক্ষদর্শী এক কর্মকর্তা জানান, তখন ইউএনও বলেন ব্যানারের কোথাও তো ‘বঙ্গবন্ধু চত্তর’ লেখা নেই। তখন সদস্য সচিব নূর ফরিদ তর্কে জড়িয়ে আবারো বলেন, না ব্যানারে বঙ্গবন্ধুর নাম আছে। ফেইসবুকেও ব্যানারের ছবি পোষ্ট আছে। আমার ফোনেও এই ছবি একজন পাঠিয়েছেন। অনুষ্ঠান এখনি বন্ধ করতে হবে। বিশঙ্খলার কারণে একপর্যায়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে অনুষ্ঠানটি পণ্ড হয়ে যায়। পরে দেখা যায় ফেইসবুকে পোস্ট করা ওই ছবিটি ১৪৩০ বঙ্গাব্দের।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুয়েল সাংমা বলেন, উপজেলার যুবদলের সদস্য সচিব নূর মোহাম্মদ খান ফরিদের নেতৃত্বে কাইয়ুম (মোতাসছির হোসেন), কামালসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী সংঘবদ্ধ হয়ে হঠাৎ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মঞ্চের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় আমি কারণ জানতে চাইলে তারা আমাকেসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত করে অনুষ্ঠানটি বন্ধ করে দেন। পরে উপস্থাপককে মারধর করে মাইক হাতে নিয়ে আমাকে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার মামলা হয়েছে।
আটপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, মঞ্চে হামলা, ভাঙচুর, অনুষ্ঠানপণ্ড করাসহ সরকারি কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিতের ঘটনায় উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিবসহ ৩ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাত আরও ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের অভিযান চলছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নূর ফরিদ খান বলেন, ওইদিন আমরা একটি স্থানে বসেছিলাম। হঠাৎ একজন আমার ম্যাসেঞ্জারে একটি ব্যানার দেয়। ওই ব্যানারে ‘বঙ্গবন্ধু চত্তর’ লেখা ছিল। ফেইসবুকেও একজনের শেয়ার দেখেছি। পরে আমরা মঞ্চে গিয়ে কারণ জানতে চাই। এ সময় আমাদের দলের কাইয়ুম, কামাল হোসেনসহ কয়েকজন ব্যানার নামিয়ে ফেলেন। পরে প্রশাসনের লোকজন আমাদের নিশ্চিত করেন যে ব্যানারে বঙ্গবন্ধুর নাম নেই। বিষয়টি আমাদের ভুল হয়ে গেছে। এ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমরা ইউএনও মহোদয়ের কাছে ভুল স্বীকার করেছি এবং মাফ চেয়েছি। আপনারাও বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর আমরা কাউকে লাঞ্ছিত করিনি। এটা মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মামলা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী বলেন, আটপাড়া উপজেলা প্রশাসনের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা কোনভাবেই কাম্য নয়। আমরা দলীয়ভাবে বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।