মেঠো পথে ভাঁট ফুলের সৌন্দর্যে সাজেছে প্রকৃতি

রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, 1:23 PM

মেঠো পথে ভাঁট ফুলের সৌন্দর্যে সাজেছে প্রকৃতি
ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়, বাংলার নদ-নদী-ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিল পায়।‘ কবি জীবনানন্দ দাশের ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’ কবিতার সেই ভাঁটফুল এখন নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে বারহাট্টার আঁকা বাঁকা গ্রামীণ পথের ধারে।
বসন্তের আগমনে পলাশ-শিমুলের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রকৃতিকে সাজাতে সাদা ভাঁট ফুলের শুভ্রতার জুড়ি নেই। শুভ্র সাদা ভাঁট ফুল দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায় যেকোনো ফুলপ্রেমীর। বিশেষ করে পরিত্যক্ত মাঠ, বন, রাস্তা কিংবা জলাশয়ের পাশে মিষ্টি ঘ্রানের, অজস্র ভাঁট ফুল ফোটা অবস্থায় চোখে পড়ে। প্রতিটি গাছে এক সঙ্গে অনেক ফুল ফুটে। অঞ্চলভেদে এই গাছের ফুলকে ভাইটা ফুল, ভাটির ফুল, ঘেটু ফুল, ভাত ফুল, বনজুঁই, ঘণ্টাকর্ণ বলা হলেও বারহাট্টার মানুষের কাছে এটি ভাঁট ফুল বা ভাটির ফুল নামেই সর্বাধিক পরিচিত। চৈত্র মাসে এই ফুল ফোটে বলে কেউ কেউ একে চৈতের ফুলও বলেন।
বারহাট্টা সরকারি ডিগ্রি কলেজের জীববিজ্ঞান বিষয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক জগলুল হায়দারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ভাঁট ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম ‘ক্লেরোডেনড্রাম ভিসকোসাম’ ও ইংরেজি নাম ‘হিল গেন্টারি বোয়ার ফ্লাওয়ার’। এটি গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এই গাছের প্রধান কাণ্ড খাড়া, সাধারণত ২-৪ মিটার লম্বা হয়। পাতা কিছুটা পানপাতার আকৃতির ও খসখসে। পাতা ৪-৭ ইঞ্চি লম্বা হয়। ডালের শীর্ষে পুষ্পদণ্ডে ফুল ফোটে। পাপড়ি সাদা, তাতে বেগুনি মিশেল থাকে। বনজুঁই সৌন্দর্যবর্ধন ছাড়াও নানা গুণে গুণান্বিত। ম্যালেরিয়া, চর্মরোগ ও পোকা-মাকড়ের কামড়ে খুবই উপকারী।
বাউসী অর্দ্ধচন্দ্র উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (স্কুল ও কলেজ) বাংলা বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক বিজয় চন্দ্র দাস বলেন, ‘সড়কের পাশে যখন ফুলগুলো দেখি, তখন মনে হয়, কেউ যেন আস্ত একটি ফুলের তোড়া তৈরি করে রেখেছে। অবাক করা বিষয় হলো, ফুলটি চাষ না করেই আমরা এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারি। শুধু বারহাট্টা নয়, সারা দেশেই এই মৌসুমে ফুলটি ফোটে।’
ফুল প্রেমী কালের কন্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ঋতুরাজ বসন্ত মানেই নানা বর্ণের ফুলের আগমন। গ্রাম বাংলার অতিপরিচিত উদ্ভিদ ভাট ফুল। রাস্তার পাশে জন্মানো এই ফুল গাছ , কোন সার, ঔষধ ছাড়াই হয়ে থাকে। রাস্তার পাশে এমন ফুল দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। অনেক সময় স্কুলের ছেলে মেয়েদের দেখা যায় ফুলগুলো যত্ন করে নিয়ে যেতে। আবার অনেকে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে সেলফি তুলতে দেখা যায়। তবে এই ফুলের তেমন কদর নাই কিন্তু সৌন্দর্য অনেক, ঘ্রান ও রয়েছে দেখতে অনেক সুন্দর লাগে মণে হয় যেন কেহ না কেহ এগুলো লাগিয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা জানান, ভাঁটফুল একটি গুল্মজাতীয় দেশি বুনো পুষ্পক উদ্ভিদ। এটি বুনো ফুল। গাঁয়ের মাঠে কিংবা রাস্তার ধারে অযত্নে ফোটে এই ফুল। ভাট ফুলে আছে অনেক উপকারিতা। বিষাক্ত কিছু কামড় দিলে ফুলের রস ক্ষত স্থানে দিলে দ্রুত সেরে যায়। অনেকে কৃমি দূর করার জন্য এ ফুলের রস খেয়ে থাকেন। গরু-ছাগলের গায়ে উকুন হলে ভাট গাছের পাতা বেটে দিলে উকুন মরে যায়। কিন্তু আগের লোকজন ভাট ফুলের ভেষজ ঔষধিগুণ জেনে এসব চিকিৎসা করত। বর্তমান প্রজন্ম এ গাছের গুনাগুণ সম্পর্কে জানে না। তাই এ উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা জরুরি।
রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, 1:23 PM

ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়, বাংলার নদ-নদী-ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিল পায়।‘ কবি জীবনানন্দ দাশের ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’ কবিতার সেই ভাঁটফুল এখন নয়নাভিরাম সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে বারহাট্টার আঁকা বাঁকা গ্রামীণ পথের ধারে।
বসন্তের আগমনে পলাশ-শিমুলের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রকৃতিকে সাজাতে সাদা ভাঁট ফুলের শুভ্রতার জুড়ি নেই। শুভ্র সাদা ভাঁট ফুল দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায় যেকোনো ফুলপ্রেমীর। বিশেষ করে পরিত্যক্ত মাঠ, বন, রাস্তা কিংবা জলাশয়ের পাশে মিষ্টি ঘ্রানের, অজস্র ভাঁট ফুল ফোটা অবস্থায় চোখে পড়ে। প্রতিটি গাছে এক সঙ্গে অনেক ফুল ফুটে। অঞ্চলভেদে এই গাছের ফুলকে ভাইটা ফুল, ভাটির ফুল, ঘেটু ফুল, ভাত ফুল, বনজুঁই, ঘণ্টাকর্ণ বলা হলেও বারহাট্টার মানুষের কাছে এটি ভাঁট ফুল বা ভাটির ফুল নামেই সর্বাধিক পরিচিত। চৈত্র মাসে এই ফুল ফোটে বলে কেউ কেউ একে চৈতের ফুলও বলেন।
বারহাট্টা সরকারি ডিগ্রি কলেজের জীববিজ্ঞান বিষয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক জগলুল হায়দারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ভাঁট ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম ‘ক্লেরোডেনড্রাম ভিসকোসাম’ ও ইংরেজি নাম ‘হিল গেন্টারি বোয়ার ফ্লাওয়ার’। এটি গুল্মজাতীয় বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এই গাছের প্রধান কাণ্ড খাড়া, সাধারণত ২-৪ মিটার লম্বা হয়। পাতা কিছুটা পানপাতার আকৃতির ও খসখসে। পাতা ৪-৭ ইঞ্চি লম্বা হয়। ডালের শীর্ষে পুষ্পদণ্ডে ফুল ফোটে। পাপড়ি সাদা, তাতে বেগুনি মিশেল থাকে। বনজুঁই সৌন্দর্যবর্ধন ছাড়াও নানা গুণে গুণান্বিত। ম্যালেরিয়া, চর্মরোগ ও পোকা-মাকড়ের কামড়ে খুবই উপকারী।
বাউসী অর্দ্ধচন্দ্র উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (স্কুল ও কলেজ) বাংলা বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক বিজয় চন্দ্র দাস বলেন, ‘সড়কের পাশে যখন ফুলগুলো দেখি, তখন মনে হয়, কেউ যেন আস্ত একটি ফুলের তোড়া তৈরি করে রেখেছে। অবাক করা বিষয় হলো, ফুলটি চাষ না করেই আমরা এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারি। শুধু বারহাট্টা নয়, সারা দেশেই এই মৌসুমে ফুলটি ফোটে।’
ফুল প্রেমী কালের কন্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক ফেরদৌস আহমেদ বলেন, ঋতুরাজ বসন্ত মানেই নানা বর্ণের ফুলের আগমন। গ্রাম বাংলার অতিপরিচিত উদ্ভিদ ভাট ফুল। রাস্তার পাশে জন্মানো এই ফুল গাছ , কোন সার, ঔষধ ছাড়াই হয়ে থাকে। রাস্তার পাশে এমন ফুল দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। অনেক সময় স্কুলের ছেলে মেয়েদের দেখা যায় ফুলগুলো যত্ন করে নিয়ে যেতে। আবার অনেকে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে সেলফি তুলতে দেখা যায়। তবে এই ফুলের তেমন কদর নাই কিন্তু সৌন্দর্য অনেক, ঘ্রান ও রয়েছে দেখতে অনেক সুন্দর লাগে মণে হয় যেন কেহ না কেহ এগুলো লাগিয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা জানান, ভাঁটফুল একটি গুল্মজাতীয় দেশি বুনো পুষ্পক উদ্ভিদ। এটি বুনো ফুল। গাঁয়ের মাঠে কিংবা রাস্তার ধারে অযত্নে ফোটে এই ফুল। ভাট ফুলে আছে অনেক উপকারিতা। বিষাক্ত কিছু কামড় দিলে ফুলের রস ক্ষত স্থানে দিলে দ্রুত সেরে যায়। অনেকে কৃমি দূর করার জন্য এ ফুলের রস খেয়ে থাকেন। গরু-ছাগলের গায়ে উকুন হলে ভাট গাছের পাতা বেটে দিলে উকুন মরে যায়। কিন্তু আগের লোকজন ভাট ফুলের ভেষজ ঔষধিগুণ জেনে এসব চিকিৎসা করত। বর্তমান প্রজন্ম এ গাছের গুনাগুণ সম্পর্কে জানে না। তাই এ উদ্ভিদ সংরক্ষণ করা জরুরি।