ঢাকা ২১ নভেম্বর, ২০২৪
শিরোনামঃ
সশস্ত্র বাহিনীর বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায় : প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৪’এর খসড়া অনুমোদন ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির সাথে ইসি অনুসন্ধান কমিটির সৌজন্য সাক্ষাৎ আজ সন্ধ্যায় কোন ব্যাংক বন্ধ হবে না: ড. সালেহউদ্দিন বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জাতীয় সরকার গঠন করে দেশ চালাবে: মির্জা ফখরুল বিচারের সম্মুখীন করতে হাসিনাকে দেশে আনার প্রক্রিয়া চালাবে ঢাকা : দ্য হিন্দুকে ড. ইউনূস গাসিক সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র পলায়নকালে সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার বাবাকে না পেয়ে ছেলেকে নির্যাতন ও মিথ্যা মামলার অভিযোগ এসআই সজিবের বিরুদ্ধে

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে সোনালী অতীত

#
news image

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে সোনালী অতীত

রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি;

 

পিঁড়িতে বা টুলে বসে নরসুন্দরের হাঁটুর নিচে মাথা পেতে চুল-দাড়ি কাটার রীতি  আবহমান কাল ধরে চলে এলেও সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর সচরাচর চোখে পড়ে না। যুগ যুগ ধরে চলে আসা গ্রামীণ ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে।

মাঝে মধ্যে বারহাট্টার বিভিন্ন এলাকার গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারে চোখে পড়ে ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দর বা নাপিতদের কর্মযজ্ঞ। প্রতি সপ্তাহের হাটের দিনে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে আসা নিম্ন আয়ের এবং বয়স্ক ক্রেতারাই এসব ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দর বা নাপিতদের 'সেবা গ্রহীতা'।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন হাট ঘুরে কিছু কিছু জায়গায় চোখে পড়ে ভ্রাম্যমান নরসুন্দর বা নাপিতরা কাস্টমারদের পিঁড়ি বা টুলে বসিয়ে চুল ও দাড়ি কাটছেন।বাউসী বাজারের নরসুন্দর বা নাপিত সুরেশ চন্দ্র শীল বলেন, এই হাট সপ্তাহে একদিন বৃহস্পতিবার বসে প্রতি বাজারেই এসে কাজ করি। ৩০-৩৫ বছর আগে চুল-দাড়ি কাটা ৫-১০ টাকা ছিল। সে সময় যা আয় হতো তা দিয়ে ভা‌ল ভা‌বেই সংসার চলতো। কিন্তু, বর্তমানে চুল কাটতে ২৫-৩০ টাকা এবং দাড়ি কাট‌তে ১৫-২০ টাকা নেই। ত‌বে, এত কম দামে চুল দা‌ড়ি কাটার মানুষ পাওয়া যায় কম। সারাদিনে ৩০০-৪০০ টাকা উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসার চালানো ক‌ঠিন হ‌য়ে প‌ড়ে‌ছে।

ফকিরের বাজার এলাকার নরসুন্দর বা নাপিত অরুণ চন্দ্র শীল বলেন, আমার দাদা এই পেশায় ছিলেন, তারপর আমার বাবা এই পেশায় এসেছেন আর এখন আমি এই পেশা ধরে রেখেছি। আমরা তিন ভাই। অন্য ভাইয়েরা এই পেশা পছন্দ করে না, তাই অন্য পেশায় চলে গিয়েছে। বাবা বৃদ্ধ হয়ে গেছেন তাই বাজারে কম আসেন।তিনি আরো বলেন, অনেক বছর আগে চুল কাটার জন্য ১০ টাকা আর দাঁড়ি কাটার জন্য ৫ টাকা রাখা হতো। সে সময় যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার ভালোভাবেই চলতো। কিন্তু বর্তমানে ২০ টাকায় চুল ও ১০ টাকা দাঁড়ি কেটেও সারা দিন যে টাকা উপার্জন হয় তা দিয়ে সাংসারিক ব্যয় নির্বাহ করতে তাদের হিমশিম খেতে হয়।

বাউসী বাজারে চুল কাটতে আসা ৬০ বছর বয়সী হাদিস মিয়া জানায়, ছোট বেলায় বাবার সঙ্গে হাটে এসে এই ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দর বা নাপিতদের কাছে চুল কাটাতেন। এখন তিনি নিজেই ও তার সন্তানের নাতিদের এনে চুল কাটাচ্ছেন।তিনি বলেন, আমি নিম্ন আয়ের মানুষ। সেলুনে চুলদাড়ি কাটাতে গেলে ৫০ থেকে ১০০ টাকা লাগে। আর এখানে মাত্র ৩০ থেকে ৫০ টাকায় চুল ও দাড়ি কাটানো যায়। সেলুন আর এদের কাজের মান প্রায় সমান।

উপজেলার সাহতা এলাকার নিজামুদ্দিন নামের অপর ব্যক্তি বলেন, ছোট বেলায় বাবার সঙ্গে বাজারে যেতাম। তিনি চুল কাটাতে তাদের দায়িত্ব দিয়ে বাবা বাজারের সব কাজ শেষে আসতেন। এখন আর তাদের কাছে চুল-দাঁড়ি কাটায় না।বাউসী কলেজের বাংলা বিষয়ের প্রভাষক বিজয় চন্দ্র দাস বলেন, বর্তমানে সবাই চুল কাটায় আধুনিক সেলুন গুলোতে। একটা সময় আসবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পিঁড়ি বা টুলে বসে চুল ও দাড়ি কাটা নিছকই গল্প মনে হবে।

অনলাইন ডেস্ক

১৬ নভেম্বর, ২০২৪,  12:21 PM

news image

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে সোনালী অতীত

রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি;

 

পিঁড়িতে বা টুলে বসে নরসুন্দরের হাঁটুর নিচে মাথা পেতে চুল-দাড়ি কাটার রীতি  আবহমান কাল ধরে চলে এলেও সেই পরিচিত দৃশ্য এখন আর সচরাচর চোখে পড়ে না। যুগ যুগ ধরে চলে আসা গ্রামীণ ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে।

মাঝে মধ্যে বারহাট্টার বিভিন্ন এলাকার গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারে চোখে পড়ে ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দর বা নাপিতদের কর্মযজ্ঞ। প্রতি সপ্তাহের হাটের দিনে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে আসা নিম্ন আয়ের এবং বয়স্ক ক্রেতারাই এসব ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দর বা নাপিতদের 'সেবা গ্রহীতা'।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন হাট ঘুরে কিছু কিছু জায়গায় চোখে পড়ে ভ্রাম্যমান নরসুন্দর বা নাপিতরা কাস্টমারদের পিঁড়ি বা টুলে বসিয়ে চুল ও দাড়ি কাটছেন।বাউসী বাজারের নরসুন্দর বা নাপিত সুরেশ চন্দ্র শীল বলেন, এই হাট সপ্তাহে একদিন বৃহস্পতিবার বসে প্রতি বাজারেই এসে কাজ করি। ৩০-৩৫ বছর আগে চুল-দাড়ি কাটা ৫-১০ টাকা ছিল। সে সময় যা আয় হতো তা দিয়ে ভা‌ল ভা‌বেই সংসার চলতো। কিন্তু, বর্তমানে চুল কাটতে ২৫-৩০ টাকা এবং দাড়ি কাট‌তে ১৫-২০ টাকা নেই। ত‌বে, এত কম দামে চুল দা‌ড়ি কাটার মানুষ পাওয়া যায় কম। সারাদিনে ৩০০-৪০০ টাকা উপার্জন হয় তা দিয়ে সংসার চালানো ক‌ঠিন হ‌য়ে প‌ড়ে‌ছে।

ফকিরের বাজার এলাকার নরসুন্দর বা নাপিত অরুণ চন্দ্র শীল বলেন, আমার দাদা এই পেশায় ছিলেন, তারপর আমার বাবা এই পেশায় এসেছেন আর এখন আমি এই পেশা ধরে রেখেছি। আমরা তিন ভাই। অন্য ভাইয়েরা এই পেশা পছন্দ করে না, তাই অন্য পেশায় চলে গিয়েছে। বাবা বৃদ্ধ হয়ে গেছেন তাই বাজারে কম আসেন।তিনি আরো বলেন, অনেক বছর আগে চুল কাটার জন্য ১০ টাকা আর দাঁড়ি কাটার জন্য ৫ টাকা রাখা হতো। সে সময় যা আয় হতো তা দিয়ে সংসার ভালোভাবেই চলতো। কিন্তু বর্তমানে ২০ টাকায় চুল ও ১০ টাকা দাঁড়ি কেটেও সারা দিন যে টাকা উপার্জন হয় তা দিয়ে সাংসারিক ব্যয় নির্বাহ করতে তাদের হিমশিম খেতে হয়।

বাউসী বাজারে চুল কাটতে আসা ৬০ বছর বয়সী হাদিস মিয়া জানায়, ছোট বেলায় বাবার সঙ্গে হাটে এসে এই ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দর বা নাপিতদের কাছে চুল কাটাতেন। এখন তিনি নিজেই ও তার সন্তানের নাতিদের এনে চুল কাটাচ্ছেন।তিনি বলেন, আমি নিম্ন আয়ের মানুষ। সেলুনে চুলদাড়ি কাটাতে গেলে ৫০ থেকে ১০০ টাকা লাগে। আর এখানে মাত্র ৩০ থেকে ৫০ টাকায় চুল ও দাড়ি কাটানো যায়। সেলুন আর এদের কাজের মান প্রায় সমান।

উপজেলার সাহতা এলাকার নিজামুদ্দিন নামের অপর ব্যক্তি বলেন, ছোট বেলায় বাবার সঙ্গে বাজারে যেতাম। তিনি চুল কাটাতে তাদের দায়িত্ব দিয়ে বাবা বাজারের সব কাজ শেষে আসতেন। এখন আর তাদের কাছে চুল-দাঁড়ি কাটায় না।বাউসী কলেজের বাংলা বিষয়ের প্রভাষক বিজয় চন্দ্র দাস বলেন, বর্তমানে সবাই চুল কাটায় আধুনিক সেলুন গুলোতে। একটা সময় আসবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পিঁড়ি বা টুলে বসে চুল ও দাড়ি কাটা নিছকই গল্প মনে হবে।

সম্পর্কিত