ঢাকা ০৮ আগস্ট, ২০২৫
শিরোনামঃ
এ আই ও ফেক আইডি দিয়ে যুবদল নেতার সম্মানহানির বিরুদ্ধে মানববন্ধন  পিরোজপুর জেলা বিএনপির বিজয় মিছিল জনসমুদ্রে পরিনত বাগেরহাটে ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তার  বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ কোনাবাড়িতে আওয়ামী লীগের দোসর শাজাহান মিয়া এখনো ধরা ছোঁয়ার বাহিরে দীর্ঘ ১৬ বছরের জুলুমের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ৫ আগস্ট : ড. মঈন খান সাংবাদিকদের বিএনপির নয়, দেশ ও জনগণের হতে হবে : আমীর খসরু জুলাইয়ের রক্তের ত্যাগ সার্থক করতে চাঁদাবাজ-খুনিদের উৎখাত করতে হবে: চরমোনাইর পীর ‘পানিভিত্তিক অর্থনীতি’ গড়ে তুলতে চাই : প্রধান উপদেষ্টা পরিচয় শনাক্তে জুলাই আন্দোলনে শহীদ ১১৪ জনের লাশ উত্তোলনের নির্দেশ প্রাথমিকের বৃত্তির প্রশ্নপত্রের কাঠামো ও নম্বর বিভাজন প্রকাশ

প্রকৃতি জুড়ে রাজত্ব ‘মধুমাস’ জ্যৈষ্ঠের

#
news image

ষড়ঋতুর বাংলায় জ্যৈষ্ঠ মাস আসে হরেক রকম ফলের সমাহার নিয়ে। সারা বছর বিদেশি ফলে দাপট থাকলেও জ্যৈষ্ঠ মাসে পুরো বাজার থাকে দেশীয় ফলের নিয়ন্ত্রণে। কেননা এ সময়ে বাঙালির পছন্দের দেশীয় ফলের প্রতি তীব্র আকর্ষণ লক্ষ্য করা যায়। তাই তো পল্লী কবি জসিম উদ্দিন দেশীয় ফলের প্রতি শৈশবের অফুরন্ত ভালবাসা জড়িয়ে ‘মামার বাড়ি’ কবিতায় লিখেছেন- "ঝড়ের দিনে মামার দেশে; আম কুড়াতে সুখ; পাকা জামের শাখায় উঠিরঙিন করি মুখ।" গ্রীষ্মের খরতাপে জ্যৈষ্ঠের প্রকৃতি আমাদের জন্য ডালিতে সাজিয়ে রেখেছে- আম, লিচু, কাঁঠাল, জাম, আনারস, করমচা, জামরুল, আতা, গাব, আমড়া, তরমুজ, বাঙি, বেল, তালশাঁস, খেজুর ইত্যাদি দেশীয় রসালো ও সুস্বাদু ফল দিয়ে। এক সাথে এত ফলের আধিক্য অন্য কোনো মাসে নজরে পড়ে না। আর তাই জ্যৈষ্ঠকেই বাঙালি ‘মধুমাস’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

সপ্তাহ জুড়ে নেত্রকোনা জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখাগেছে, উপজেলা সদরসহ প্রতিটি গ্রামের গাছে গাছে ঝুলছে বিভিন্ন রঙের পাকা আম। কোনোটা সিঁদুরে, কোনোটা হলদে, কোনোটা সবুজ কোনোটা আবার উভয়েরই মিশ্রণে রাঙানো।  একেক আমের একেক নাম। আর আমই হল জ্যৈষ্ঠের প্রধান অমৃত ফল। চারিদিকে থরে বিথরে সাজানো নানা ফলের সমারোহে বিশেষ করে আমাদের প্রকৃতিতে জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলের রাজা আম।জ্যৈষ্ঠ মাসে পূর্ণতা পেয়ে বিনা বাতাসে ধুপধাপ ঝরে পড়ছে। জাতীয় ফল কাঁঠাল হলুদ বর্ণে ঝুলছে গাছের ডালে। সাথেই পেকেছে লিচু। লিচুর গাছে দিনে পাখি আর রাতে বাদুড়ের কোলাহল। কালো পাকা জামও থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ পাতার ফাঁকে। সেই জামের মধুর রসে মুখ রঙিন করার স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে মনে।

বারহাট্টা সরকারি ডিগ্রি কলেজের বাংলা সাহিত্য বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক লুৎফুন্নাহার লায়লার সাথে কথা বললে তিনি সকালের সময়কে বলেন, বাংলা বর্ষ পঞ্জিকার শাসন অনুযায়ী বছরের প্রথম মাস বৈশাখের বিদায়ে প্রকৃতির বুকে জ্যৈষ্ঠের শুরু। গ্রীষ্মের শেষ মাস জ্যৈষ্ঠ, এ মাসে ফল পেকে রসের ভারে টইটম্বুর হয়। গাছ থেকে সদ্য পেড়ে আনা তাজা ফলের পরশ অসাধারণ এক অনুভূতির জন্ম দেয়। এ মধুমাসে তাজা ফলের স্বাদ নিতে কে না চায়! জ্যৈষ্ঠের সঙ্গে ‘মধুমাস’ বিশেষণটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। কারণ এ মাসে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, তরমুজ, লটকন, গোলাপ জাম, বেতফল, গাব, জামরুল, আতাফলসহ নানা ধরনের রসালো ফল প্রকৃতি আমাদের উপহার দেয়। ফলের এই ম-ম ঘ্রাণে জ্যৈষ্ঠ হয়ে উঠে মধুময়।

তিনি আরও বলেন, জ্যৈষ্ঠের সঙ্গে 'মধুমাস' শব্দটি বসানো নিয়ে অনেক দ্বিমত রয়েছে। কারণ বাংলা অভিধান অনুযায়ী, 'চৈত্র মাস' হচ্ছে মধুমাস। রামলাল শীলের খনার বচনেও মধুমাস বলতে চৈত্র মাসকেই বোঝানো হয়েছে। তার খনার বচনে- "মধুমাসে প্রথম দিনে হয় যেই বার। রবি শোষে মঙ্গল বর্ষে, দুর্ভিক্ষ বুধবার।। সোম শুক্র শুরু আর, পৃথ্বী সয় না শস্যের ভার।। পাঁচ শনি পায় নীনে। শকুনি মাংস না খায় ঘুণে।" প্রাচীন কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তীও চৈত্র মাস অর্থেই ‘মধুমাস’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন, তার ভাষায়-  "মধুমাসে মলয় মারুত মন্দ মন্দ। মালতীর মধুকর পিয়ে মকরন্দ।" এদিকে মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণব পদাবলি রচিয়তা চণ্ডীদাসও চৈত্র মাস বা বসন্তকাল অর্থে মধুমাস শব্দটি ব্যবহার করেছেন- "মধুমাস আপায় মাধব পরশে।" এখানে আপায় মানে ‘গত হয়’। অনেক দ্বিমত থাকা স্বত্বেও ফলপ্রিয় বাঙালি জ্যৈষ্ঠ মাসকেই 'মধুমাস' বলে চিনে আসছে। তাদের মুখে, জিভে ও বিশ্বাসে জ্যৈষ্ঠই যেন 'মধুমাস'।

সাংবাদিক শ্যামলেন্দু পালের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, চৈত্র-বৈশাখের খরতাপের মাঝে চলে আসে অনেক ফল ফলারী। আর জ্যৈষ্ঠে আম, কাঁঠাল, লিচুর আগমন দিয়ে তা পরিপূর্ণতা লাভ করে। গ্রীষ্ম মৌসুমে খরাক্লিষ্ট মানুষের তৃষ্ণা মেটাতে প্রকৃতি আমাদের উপহার দেয় নানা জাতের বাহারি রসালো সুস্বাদু ফল। জ্যৈষ্ঠ মাসেকে ফলের মাস হিসাবে বিবেচনা করেই আমাদের দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকে গ্রীষ্মকালীন ছুটি। সাধারণভাবে ‘আম-কাঁঠালের ছুটি’ হিসেবে এর বিশেষ পরিচিতি। কোথাও কোথাও আবার এই মধুমাসকে কেন্দ্র করে মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনিরা ‘নাইওর’ যায়, তারা আপ্যায়িত হয় চিরচেনা রসালো সব ফলে। বিশেষ করে আম-কাঁঠালের সাথে অনেক ক্ষেত্রেই যোগ হয় চিঁড়া-মুড়ি, খই সাথে দুধ-দই। রঙবাহারি ফল আর সুমিষ্ট ঘ্রাণসমৃদ্ধ জ্যৈষ্ঠ তাই বাঙালি জীবনে এক অনন্য মাস হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে।

রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি :

২৭ মে, ২০২৫,  5:42 PM

news image

ষড়ঋতুর বাংলায় জ্যৈষ্ঠ মাস আসে হরেক রকম ফলের সমাহার নিয়ে। সারা বছর বিদেশি ফলে দাপট থাকলেও জ্যৈষ্ঠ মাসে পুরো বাজার থাকে দেশীয় ফলের নিয়ন্ত্রণে। কেননা এ সময়ে বাঙালির পছন্দের দেশীয় ফলের প্রতি তীব্র আকর্ষণ লক্ষ্য করা যায়। তাই তো পল্লী কবি জসিম উদ্দিন দেশীয় ফলের প্রতি শৈশবের অফুরন্ত ভালবাসা জড়িয়ে ‘মামার বাড়ি’ কবিতায় লিখেছেন- "ঝড়ের দিনে মামার দেশে; আম কুড়াতে সুখ; পাকা জামের শাখায় উঠিরঙিন করি মুখ।" গ্রীষ্মের খরতাপে জ্যৈষ্ঠের প্রকৃতি আমাদের জন্য ডালিতে সাজিয়ে রেখেছে- আম, লিচু, কাঁঠাল, জাম, আনারস, করমচা, জামরুল, আতা, গাব, আমড়া, তরমুজ, বাঙি, বেল, তালশাঁস, খেজুর ইত্যাদি দেশীয় রসালো ও সুস্বাদু ফল দিয়ে। এক সাথে এত ফলের আধিক্য অন্য কোনো মাসে নজরে পড়ে না। আর তাই জ্যৈষ্ঠকেই বাঙালি ‘মধুমাস’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

সপ্তাহ জুড়ে নেত্রকোনা জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখাগেছে, উপজেলা সদরসহ প্রতিটি গ্রামের গাছে গাছে ঝুলছে বিভিন্ন রঙের পাকা আম। কোনোটা সিঁদুরে, কোনোটা হলদে, কোনোটা সবুজ কোনোটা আবার উভয়েরই মিশ্রণে রাঙানো।  একেক আমের একেক নাম। আর আমই হল জ্যৈষ্ঠের প্রধান অমৃত ফল। চারিদিকে থরে বিথরে সাজানো নানা ফলের সমারোহে বিশেষ করে আমাদের প্রকৃতিতে জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলের রাজা আম।জ্যৈষ্ঠ মাসে পূর্ণতা পেয়ে বিনা বাতাসে ধুপধাপ ঝরে পড়ছে। জাতীয় ফল কাঁঠাল হলুদ বর্ণে ঝুলছে গাছের ডালে। সাথেই পেকেছে লিচু। লিচুর গাছে দিনে পাখি আর রাতে বাদুড়ের কোলাহল। কালো পাকা জামও থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ পাতার ফাঁকে। সেই জামের মধুর রসে মুখ রঙিন করার স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে মনে।

বারহাট্টা সরকারি ডিগ্রি কলেজের বাংলা সাহিত্য বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক লুৎফুন্নাহার লায়লার সাথে কথা বললে তিনি সকালের সময়কে বলেন, বাংলা বর্ষ পঞ্জিকার শাসন অনুযায়ী বছরের প্রথম মাস বৈশাখের বিদায়ে প্রকৃতির বুকে জ্যৈষ্ঠের শুরু। গ্রীষ্মের শেষ মাস জ্যৈষ্ঠ, এ মাসে ফল পেকে রসের ভারে টইটম্বুর হয়। গাছ থেকে সদ্য পেড়ে আনা তাজা ফলের পরশ অসাধারণ এক অনুভূতির জন্ম দেয়। এ মধুমাসে তাজা ফলের স্বাদ নিতে কে না চায়! জ্যৈষ্ঠের সঙ্গে ‘মধুমাস’ বিশেষণটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। কারণ এ মাসে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, আনারস, তরমুজ, লটকন, গোলাপ জাম, বেতফল, গাব, জামরুল, আতাফলসহ নানা ধরনের রসালো ফল প্রকৃতি আমাদের উপহার দেয়। ফলের এই ম-ম ঘ্রাণে জ্যৈষ্ঠ হয়ে উঠে মধুময়।

তিনি আরও বলেন, জ্যৈষ্ঠের সঙ্গে 'মধুমাস' শব্দটি বসানো নিয়ে অনেক দ্বিমত রয়েছে। কারণ বাংলা অভিধান অনুযায়ী, 'চৈত্র মাস' হচ্ছে মধুমাস। রামলাল শীলের খনার বচনেও মধুমাস বলতে চৈত্র মাসকেই বোঝানো হয়েছে। তার খনার বচনে- "মধুমাসে প্রথম দিনে হয় যেই বার। রবি শোষে মঙ্গল বর্ষে, দুর্ভিক্ষ বুধবার।। সোম শুক্র শুরু আর, পৃথ্বী সয় না শস্যের ভার।। পাঁচ শনি পায় নীনে। শকুনি মাংস না খায় ঘুণে।" প্রাচীন কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তীও চৈত্র মাস অর্থেই ‘মধুমাস’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন, তার ভাষায়-  "মধুমাসে মলয় মারুত মন্দ মন্দ। মালতীর মধুকর পিয়ে মকরন্দ।" এদিকে মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে বৈষ্ণব পদাবলি রচিয়তা চণ্ডীদাসও চৈত্র মাস বা বসন্তকাল অর্থে মধুমাস শব্দটি ব্যবহার করেছেন- "মধুমাস আপায় মাধব পরশে।" এখানে আপায় মানে ‘গত হয়’। অনেক দ্বিমত থাকা স্বত্বেও ফলপ্রিয় বাঙালি জ্যৈষ্ঠ মাসকেই 'মধুমাস' বলে চিনে আসছে। তাদের মুখে, জিভে ও বিশ্বাসে জ্যৈষ্ঠই যেন 'মধুমাস'।

সাংবাদিক শ্যামলেন্দু পালের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, চৈত্র-বৈশাখের খরতাপের মাঝে চলে আসে অনেক ফল ফলারী। আর জ্যৈষ্ঠে আম, কাঁঠাল, লিচুর আগমন দিয়ে তা পরিপূর্ণতা লাভ করে। গ্রীষ্ম মৌসুমে খরাক্লিষ্ট মানুষের তৃষ্ণা মেটাতে প্রকৃতি আমাদের উপহার দেয় নানা জাতের বাহারি রসালো সুস্বাদু ফল। জ্যৈষ্ঠ মাসেকে ফলের মাস হিসাবে বিবেচনা করেই আমাদের দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থাকে গ্রীষ্মকালীন ছুটি। সাধারণভাবে ‘আম-কাঁঠালের ছুটি’ হিসেবে এর বিশেষ পরিচিতি। কোথাও কোথাও আবার এই মধুমাসকে কেন্দ্র করে মেয়ে-জামাই, নাতি-নাতনিরা ‘নাইওর’ যায়, তারা আপ্যায়িত হয় চিরচেনা রসালো সব ফলে। বিশেষ করে আম-কাঁঠালের সাথে অনেক ক্ষেত্রেই যোগ হয় চিঁড়া-মুড়ি, খই সাথে দুধ-দই। রঙবাহারি ফল আর সুমিষ্ট ঘ্রাণসমৃদ্ধ জ্যৈষ্ঠ তাই বাঙালি জীবনে এক অনন্য মাস হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে।