ঢাকা ৩০ জুলাই, ২০২৫
শিরোনামঃ
বানারীপাড়ায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্রেস্ট  ও সনদ বিতরনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত জুলাই আগস্ট-এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ বীরদের স্মরণে গোমস্তাপুর বিএনপির উদ্যোগে চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা মুন্সীগঞ্জে বালুমহালের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সুটার মান্নান নিহত নওগাঁয় স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদণ্ড ফকিরহাটে বিনা ভোটের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ফরিদপুরে ছেলের ডির্ভোসী বউয়ের হুমকিতে শাশুড়ীর মৃত্যুর অভিযোগ টঙ্গীতে ঢাকনা বিহীন ম্যানহোলে পড়ে নিখোঁজ নারীর মরদেহ  উদ্ধার  বাগেরহাটে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে হয়রানীর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন সরকারি পুকুরে মাছ ধরা নিয়ে বিরোধ, বেলকুচিতে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ৭ রুয়েটে অনুষ্টিত আন্ত:বিভাগ ফুটবল প্রতিযোগিতার ফল চ্যাম্পিয়ন সিই বিভাগ

প্রকৃতিতে থোকায় থোকায় রঙিন মাধবীলতার শুভ্রতা

#
news image

মাধবীলতা ফুল চেনেন না এমন মানুষ খুবই কম। বসন্তের শেষ ভাগে ও গ্রীষ্মের আগমনে পলাশ-শিমুলের বিদায়ে প্রকৃতিকে রঙিন রূপে সাজাতে মাধবীলতা ফুলের শুভ্রতার জুড়ি নেই। নেত্রকোনার প্রকৃতি জুড়ে ঘন সবুজ পাতার মাঝে ঝুলন্ত সাদা-গোলাপী-লাল ফুল দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায় যেকোনো ফুলপ্রেমীর।

নিজের বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে মানুষ মাধবীলতা গাছ লাগায়। বিশেষ করে বাড়ির প্রবেশ দ্বার, ছাদ, ফুল বাগানে, ঘরের চালসহ বাড়ির আঙিনায় ছোট-বড় গাছের ডালে এ ফুলগাছ দেখা যায়। প্রকৃতির ছদ্মবেশে ধূলি উড়া গোধূলি শেষে যখন সন্ধ্যা নামে, তখনই মাধবীলতার মিষ্টি ঘ্রাণে সৌরভ ছড়ায়। অঞ্চলভেদে লাল-গোলাপী-সাদা ফুলের মাধবীলতাকে অনেকে পুষ্পন্দ্রে কামী, অভীষ্টগন্ধক, অতিমুক্ত, বিমুক্ত, কামুক ও ভ্রমরোৎসব নামে ডাকেন। নেত্রকোনা অঞ্চলের মানুষ এ ফুলকে মাধবীলতা নামেই চেনেন। ভালবেসে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ফুলটিকে মধুমঞ্জরীলতা নামে ডেকেছিলেন। লিখেছিলেন- স্মরণচিহ্ন কত যাবে, উন্মুলে মোর দেয়া নাম লেখা থাক ওর ফুলে মধুমঞ্জরীলতা। প্রায় সারা বছরই মাধবীলতা ফোটে তবে- বসন্ত, গ্রীষ্ম ও বর্ষা মাধবীলতা ফুল ফোটার প্রধান মৌসুম। মনের রঙের সাথে মাধবীলতার ভাব প্রকাশের তুলনা হয় না। আর মাধবীলতা ফুলকে নিয়ে চলে গল্প-কবিতা-উপন্যাসে প্রেমিক-প্রেমিকাদের সীমাহীন ভালোবাসা।

সরেজমিনে জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি গ্রামেই বাড়ির আঙিনায় অথবা ছোট-বড় গাছের ডালে ডালে সাদা-গোলাপী-লাল রঙের সৌন্দর্য নিয়ে থোকায় থোকায় অজস্র ফুল ফুটেছে। চৈত্রের তপ্ত দুপুরে মাধবীলতার রঙিন সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে সকলকে।

উপজেলার বাউসী অর্দ্ধচন্দ্র উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (স্কুল ও কলেজ) বাংলা বিষয়ের সিনিয়র প্রভাষক সাহিত্যমনা বিজয় চন্দ্র দাসের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, কবিগুরুর মধুমঞ্জরীলতা আমাদের মাধবীলতাবসন্ত, গ্রীষ্ম ও বর্ষায় প্রচুর ফুল ফোটে। যদিও সারা বছর কিছু দিন পরপর ফুল ফোটে। পাপড়ির নলটি বেশ লম্বা। বছরে কয়েক দফা ফুল ফোটে। এজন্যে একে বারোমাসী ফুল বলা হয়। ঘন সবুজ পাতার মাঝখানে ঝুলন্ত সাদা-লাল ফুল সহজেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

 বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ফুলটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি রাতে তীব্র মিষ্টি ঘ্রাণে ভরিয়ে রেখেছে চারপাশ। ডালের আগায় বড় বড় ঝুলন্ত থোকা। প্রতিটি থোকায় ১০ থেকে ১৫টি লাল-গোলাপী-সাদা ফুল। সবুজ পাতার ফাঁকে রঙিন ফুলের থোকা দূর থেকে দেখলে মনে হয় মাধবী তার নিজের মনের মাধুরি মিশিয়ে সাজিয়েছে প্রকৃতিকে।

নেত্রকোনা সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক জায়েদা মেহের নিগার বলেন, মধুমঞ্জরীলতা বা মাধবীলতাফুলটি Combretaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত বহুবর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম- Quisqualis indica, এর ইংরেজি নাম- Chinese honeysuckle বা Rangoon creeper। এর বংশবৃদ্ধি মূলত অঙ্গজ।

তিনি আরও বলেন, মাধবীলতার গোড়া এবং শেকড় থেকে নতুন গাছ গজায়। লতা কেটে মাটিতে পুঁতলেও চারা হয় এর পাতা কিছুটা পাতলা ও খসখসে প্রকৃতির, গঠনে আয়তাকার থেকে ডিম্বাকার, রং সবুজ, এর পাতাগুলো শাখায় জোড়ায় জোড়ায় সুবিন্যস্তভাবে সাজানো থাকে। পাতার আকৃতি ছয় থেকে নয় সেন্টিমিটার লম্বা, শিরা সামান্য রোমশ, পত্রবিন্যাস বিপ্রতীপ। তাজা ও বাসি ফুলে রঙের ভিন্নতাও এ ফুলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাজা ফুলের রং সাদা, বাসি হলে লাল হয়। ফুলে ক্ষুদ্রাকৃতির পাপড়ি সংখ্যা পাঁচটি, মাঝে পরাগ অবস্থিত, দলনল বেশ লম্বা।

এর ভেষজ উপকারিতা সম্পর্কে বারহাট্টা উপজেলা সদরের যশমাধব গ্রামের বাসিন্দা কবিরাজ কুতুবউদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, মধুমঞ্জরীলতা বা মাধবীলতা শুধু আমাদের প্রকৃতির সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে না, এ উদ্ভিদ আমাদের অনেক রোগ থেকে মুক্তিও দেয়। এর বহুবিধ ভেষজ গুণও রয়েছে। এর পাতার রস চর্মরোগে ও মাথার যন্ত্রনার ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং পুরনো বাত ও হাঁপানীর উপশমে লাগে। এর বীজ কৃমি, ডায়ারিয়া ও জ্বর নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ গাছের কান্ড সর্দি, কাশি এবং ঠান্ডা লাগায় ব্যবহার করা হয়। গাছের শুকনো ছালের গুঁড়া বিষাক্ত ঘা সারিয়ে তোলে।

নেত্রকোনা প্রতিনিধি :

১২ এপ্রিল, ২০২৫,  10:36 PM

news image

মাধবীলতা ফুল চেনেন না এমন মানুষ খুবই কম। বসন্তের শেষ ভাগে ও গ্রীষ্মের আগমনে পলাশ-শিমুলের বিদায়ে প্রকৃতিকে রঙিন রূপে সাজাতে মাধবীলতা ফুলের শুভ্রতার জুড়ি নেই। নেত্রকোনার প্রকৃতি জুড়ে ঘন সবুজ পাতার মাঝে ঝুলন্ত সাদা-গোলাপী-লাল ফুল দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায় যেকোনো ফুলপ্রেমীর।

নিজের বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে মানুষ মাধবীলতা গাছ লাগায়। বিশেষ করে বাড়ির প্রবেশ দ্বার, ছাদ, ফুল বাগানে, ঘরের চালসহ বাড়ির আঙিনায় ছোট-বড় গাছের ডালে এ ফুলগাছ দেখা যায়। প্রকৃতির ছদ্মবেশে ধূলি উড়া গোধূলি শেষে যখন সন্ধ্যা নামে, তখনই মাধবীলতার মিষ্টি ঘ্রাণে সৌরভ ছড়ায়। অঞ্চলভেদে লাল-গোলাপী-সাদা ফুলের মাধবীলতাকে অনেকে পুষ্পন্দ্রে কামী, অভীষ্টগন্ধক, অতিমুক্ত, বিমুক্ত, কামুক ও ভ্রমরোৎসব নামে ডাকেন। নেত্রকোনা অঞ্চলের মানুষ এ ফুলকে মাধবীলতা নামেই চেনেন। ভালবেসে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ফুলটিকে মধুমঞ্জরীলতা নামে ডেকেছিলেন। লিখেছিলেন- স্মরণচিহ্ন কত যাবে, উন্মুলে মোর দেয়া নাম লেখা থাক ওর ফুলে মধুমঞ্জরীলতা। প্রায় সারা বছরই মাধবীলতা ফোটে তবে- বসন্ত, গ্রীষ্ম ও বর্ষা মাধবীলতা ফুল ফোটার প্রধান মৌসুম। মনের রঙের সাথে মাধবীলতার ভাব প্রকাশের তুলনা হয় না। আর মাধবীলতা ফুলকে নিয়ে চলে গল্প-কবিতা-উপন্যাসে প্রেমিক-প্রেমিকাদের সীমাহীন ভালোবাসা।

সরেজমিনে জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি গ্রামেই বাড়ির আঙিনায় অথবা ছোট-বড় গাছের ডালে ডালে সাদা-গোলাপী-লাল রঙের সৌন্দর্য নিয়ে থোকায় থোকায় অজস্র ফুল ফুটেছে। চৈত্রের তপ্ত দুপুরে মাধবীলতার রঙিন সৌন্দর্য মুগ্ধ করছে সকলকে।

উপজেলার বাউসী অর্দ্ধচন্দ্র উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (স্কুল ও কলেজ) বাংলা বিষয়ের সিনিয়র প্রভাষক সাহিত্যমনা বিজয় চন্দ্র দাসের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, কবিগুরুর মধুমঞ্জরীলতা আমাদের মাধবীলতাবসন্ত, গ্রীষ্ম ও বর্ষায় প্রচুর ফুল ফোটে। যদিও সারা বছর কিছু দিন পরপর ফুল ফোটে। পাপড়ির নলটি বেশ লম্বা। বছরে কয়েক দফা ফুল ফোটে। এজন্যে একে বারোমাসী ফুল বলা হয়। ঘন সবুজ পাতার মাঝখানে ঝুলন্ত সাদা-লাল ফুল সহজেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

 বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ফুলটি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি রাতে তীব্র মিষ্টি ঘ্রাণে ভরিয়ে রেখেছে চারপাশ। ডালের আগায় বড় বড় ঝুলন্ত থোকা। প্রতিটি থোকায় ১০ থেকে ১৫টি লাল-গোলাপী-সাদা ফুল। সবুজ পাতার ফাঁকে রঙিন ফুলের থোকা দূর থেকে দেখলে মনে হয় মাধবী তার নিজের মনের মাধুরি মিশিয়ে সাজিয়েছে প্রকৃতিকে।

নেত্রকোনা সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক জায়েদা মেহের নিগার বলেন, মধুমঞ্জরীলতা বা মাধবীলতাফুলটি Combretaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত বহুবর্ষজীবী লতানো উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম- Quisqualis indica, এর ইংরেজি নাম- Chinese honeysuckle বা Rangoon creeper। এর বংশবৃদ্ধি মূলত অঙ্গজ।

তিনি আরও বলেন, মাধবীলতার গোড়া এবং শেকড় থেকে নতুন গাছ গজায়। লতা কেটে মাটিতে পুঁতলেও চারা হয় এর পাতা কিছুটা পাতলা ও খসখসে প্রকৃতির, গঠনে আয়তাকার থেকে ডিম্বাকার, রং সবুজ, এর পাতাগুলো শাখায় জোড়ায় জোড়ায় সুবিন্যস্তভাবে সাজানো থাকে। পাতার আকৃতি ছয় থেকে নয় সেন্টিমিটার লম্বা, শিরা সামান্য রোমশ, পত্রবিন্যাস বিপ্রতীপ। তাজা ও বাসি ফুলে রঙের ভিন্নতাও এ ফুলের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাজা ফুলের রং সাদা, বাসি হলে লাল হয়। ফুলে ক্ষুদ্রাকৃতির পাপড়ি সংখ্যা পাঁচটি, মাঝে পরাগ অবস্থিত, দলনল বেশ লম্বা।

এর ভেষজ উপকারিতা সম্পর্কে বারহাট্টা উপজেলা সদরের যশমাধব গ্রামের বাসিন্দা কবিরাজ কুতুবউদ্দিনের সাথে কথা বললে তিনি জানান, মধুমঞ্জরীলতা বা মাধবীলতা শুধু আমাদের প্রকৃতির সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে না, এ উদ্ভিদ আমাদের অনেক রোগ থেকে মুক্তিও দেয়। এর বহুবিধ ভেষজ গুণও রয়েছে। এর পাতার রস চর্মরোগে ও মাথার যন্ত্রনার ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং পুরনো বাত ও হাঁপানীর উপশমে লাগে। এর বীজ কৃমি, ডায়ারিয়া ও জ্বর নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ গাছের কান্ড সর্দি, কাশি এবং ঠান্ডা লাগায় ব্যবহার করা হয়। গাছের শুকনো ছালের গুঁড়া বিষাক্ত ঘা সারিয়ে তোলে।