ঢাকা ১৩ মার্চ, ২০২৫
শিরোনামঃ
নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলবে বেক্সিমকো; থাকছে না রিসিভার কোম্পানি রিটার্ন দাখিলের সময় বাড়লো ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত আরো একটি ‘নীরব রাত’ কাটালেন পোপ: ভ্যাটিকান আর্থিক কারণে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোম সিরিজ বাতিল করলো আয়ারল্যান্ড শ্রোতার চাহিদা অনুযায়ী বেতারের অনুষ্ঠানকে যুগোপযোগী করতে হবে: তথ্য উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে গাম্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ: মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার নিয়ে আলোচনা প্রতিকারের পাশাপাশি কিডনি রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টি খুবই জরুরি: প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের তিন শূন্যের পৃথিবী : শোষণ ও দূষণমুক্ত বিশ্বের সম্ভাবনা মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটির সিজিএস লেভেল ৩-এ নেমে এসেছে : প্রেস সচিব তথ্য উপদেষ্টা পিআইবি পরিদর্শন করেছেন

ড. ইউনূসের তিন শূন্যের পৃথিবী : শোষণ ও দূষণমুক্ত বিশ্বের সম্ভাবনা

#
news image

পৃথিবীকে একই সঙ্গে দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও দূষণমুক্ত করার চিন্তা অনেকের কাছেই এক অধরা স্বপ্ন মনে হতে পারে। কিন্তু শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস- এ তিন সমস্যার সমাধান করে নতুন এক পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। বিদ্যমান সমস্যাগুলোকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তাকে পাশ কাটিয়ে কীভাবে সুন্দর ও সহজভাবে সেগুলোর সমাধান করা যায় তার রূপরেখা আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।

ড. ইউনূস ২০১৭ সালে প্রকাশিত তার ‘তিন শূন্যের পৃথিবী’ বইয়ে আগামীর পৃথিবীর রূপরেখা তুলে ধরেছেন। সম্প্রতি বইটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন তিন তরুণ—ইরফান শেখ, তাহসীন কাইয়ুম ও রাকিব হোসেন মৃদুল। প্রকাশ করেছে ইউনূস সেন্টার।

বইটিতে লেখক বাস্তব উদাহরণসহ এমন এক পৃথিবীর কথা বলেছেন, যেখানে থাকবে না শোষণ ও দূষণ। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, অতিমাত্রায় মুনাফাকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। এটি সমাজে অসমতা তৈরি করেছে, বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। এক্ষেত্রে লেখক যেমন অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের কথা বলেছেন, একইসঙ্গে জোর দিয়েছেন পরিবেশের সুরক্ষার ওপরও।  

লেখকের মতে, ধনী-গরিবের বৈষম্য হাতি-পিঁপড়ার মতো ব্যাপক। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে স্বার্থপরতার বদলে স্বার্থহীনতা, মুনাফাকেন্দ্রিক ব্যবসার পরিবর্তে সামাজিক ব্যবসা, বেকারত্বের সমাধানে তারুণ্যের শক্তির ব্যবহার, উচ্চ সুদের বদলে ক্ষুদ্রঋণ, পরিবেশবান্ধব কারখানা ও সবুজ প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে। এতে অর্থনৈতিক বৈষম্য, পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

তিন শূন্যের পৃথিবী বইয়ে পাঠকের নজর কেড়েছে তিন শূন্য তত্ত্বটি। এতে লেখক পৃথিবীতে তিনটি শূন্য বাস্তবায়নের পথ দেখিয়েছেন। এগুলো হল- 

শূন্য দারিদ্র্য

দারিদ্র্য দূর করতে হলে আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কাঠামো বদলাতে হবে। পুঁজির কেন্দ্রীকরণের চেয়ে তা সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে পৌঁছানো প্রয়োজন।

লেখক দেখিয়েছেন, সবচেয়ে বেশি ঋণ প্রয়োজন দরিদ্রদের, অথচ ধনীরাই ঋণ সুবিধা বেশি পায় এবং ঋণখেলাপি হয়। অপরদিকে, গ্রামীণ ব্যাংকের জামানতবিহীন ঋণ নেওয়া দরিদ্র গ্রাহকদের পরিশোধের হার ৯৯ শতাংশ। 

লেখকের মতে, দরিদ্র মানুষ দারিদ্র্যের সৃষ্টি করেনি, বরং বৈষম্যমূলক বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই এটি সৃষ্টি করেছে। সামাজিক ব্যবসা, ক্ষুদ্রঋণ, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে এ ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার। ড. ইউনূস বলেন, ‘সভ্য সমাজে দারিদ্র্যের কোনো স্থান নেই; দারিদ্র্য কেবল জাদুঘরে থাকার কথা।’

শূন্য বেকারত্ব

লেখক মনে করেন, বেকারত্ব মানুষের ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, বরং এটি বিদ্যমান অর্থনৈতিক কাঠামোর ত্রুটির ফল। বর্তমানে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মুনাফাকেন্দ্রিক হওয়ায় এটি সবার জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারছে না।

তিনি উল্লেখ করেন, তরুণদের বিশাল একটি অংশ আজ বেকারত্বের শিকার, যা তাদের হতাশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক শক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। সামাজিক ব্যবসার প্রসার, শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার, যুব সমাজকে স্বনির্ভর করা, প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার এবং ব্যক্তিগত মনোভাবের পরিবর্তন এ সমস্যার সমাধান আনতে পারে।

শূন্য গড় কার্বন নিঃসরণ

শূন্য গড় কার্বন নিঃসরণ মানে এমন এক ব্যবস্থা, যেখানে পরিবেশে যতটুকু কার্বন নিঃসরণ হয়, ততটুকু শোষণ বা ক্ষতিপূরণ করা হয়, ফলে মোট নিঃসরণ শূন্য থাকে। ড. ইউনূস মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব ঠেকাতে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।

বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অধিক মুনাফার জন্য পরিবেশ ধ্বংস করছে, যা জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ হচ্ছে। এর থেকে মুক্তির জন্য নবায়নযোগ্য শক্তি ও সবুজ প্রযুক্তির প্রসার, সামাজিক ব্যবসা ও পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা, বৃক্ষরোপণ ও বন সংরক্ষণ, টেকসই কৃষি পদ্ধতি ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার ও ভোক্তা সচেতনতা সৃষ্টি প্রয়োজন বলে মনে করেন লেখক। 

তিন শূন্য তত্ত্বঃ একটি বাস্তবসম্মত পথ

ড. ইউনূসের মতে, শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য কার্বন নিঃসরণ —এ তিন লক্ষ্য পরস্পরের পরিপূরক। তিনি বলেন, ‘নেট কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে এনেও দারিদ্র্য ও বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। এ তিনটি লক্ষ্য একসঙ্গে অর্জনের চেষ্টা করতে হবে।’ 

পরিবেশ ধ্বংস করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কখনই টেকসই হতে পারে না। বরং একটি ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে মানবিকতা, ন্যায্যতা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। ড. ইউনূসের এই তিন শূন্য তত্ত্ব আমাদের সামনে একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দিগন্ত উন্মোচন করে।

লেখক মনে করেন, তিন শূন্য তত্ত্ব প্রয়োগ করে জীবনধারা পরিবর্তন করা সম্ভব। পরিবেশের সুরক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য এটিকে যুবসমাজকে বাধ্যতামূলকভাবে না নিযে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করতে হবে। শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতে, ‘থ্রি জিরো পারসন’ হলো এমন ব্যক্তি, যিনি কার্বন নিঃসরণ করবেন না (‘জিরো কার্বন’), সম্পদের একক মালিক হবেন না বরং সম্পদ হবে সামাজিক ব্যবসা ভিত্তিক (জিরো দরিদ্র) এবং চাকরি না করে বরং উদ্যোক্তা হওযার মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করবে (জিরো বেকারত্ব)। দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে একটি দুশ্চিন্তামুক্ত, বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব।

‘অধ্যাপক ইউনূস ও তিন শূন্য’ নিয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কোষাধক্ষ ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তাইওয়ানের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিতে একটি উপস্থাপনায় আলোচনা করেছেন। সেখানে তিনি বলেন, সামাজিক ব্যবসাকে গ্রহণ করলে এবং বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে পুনর্বিন্যাস করলে বিশ্ব শূন্য দারিদ্র ও শূন্য বেকারত্ব অর্জন করতে পারবে। আর পরিবর্তন কেবল সরকার বা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান থেকে আসবে না।  এর জন্য ব্যক্তি, তরুণ সম্প্রদায় ও স্থানীয়দের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

এদিকে তিন শূন্য ধারণাটি বাস্তবায়নযোগ্য এবং সবার জন্য উপকারী বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উন্নয়ন গবেষক অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান।

তিনি বলেন, এটি একইসঙ্গে দার্শনিক ও প্রায়োগিক। উচ্চাকাঙ্খী মনে হলেও এটি বাস্তবায়নযোগ্য। এ তত্ত্বের সবচেয়ে বড় গুণ হলো তা সবাইকে একত্রিত করতে পারবে।

বাসস ঢাকা :

১২ মার্চ, ২০২৫,  7:06 PM

news image

পৃথিবীকে একই সঙ্গে দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও দূষণমুক্ত করার চিন্তা অনেকের কাছেই এক অধরা স্বপ্ন মনে হতে পারে। কিন্তু শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস- এ তিন সমস্যার সমাধান করে নতুন এক পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। বিদ্যমান সমস্যাগুলোকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তাকে পাশ কাটিয়ে কীভাবে সুন্দর ও সহজভাবে সেগুলোর সমাধান করা যায় তার রূপরেখা আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।

ড. ইউনূস ২০১৭ সালে প্রকাশিত তার ‘তিন শূন্যের পৃথিবী’ বইয়ে আগামীর পৃথিবীর রূপরেখা তুলে ধরেছেন। সম্প্রতি বইটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন তিন তরুণ—ইরফান শেখ, তাহসীন কাইয়ুম ও রাকিব হোসেন মৃদুল। প্রকাশ করেছে ইউনূস সেন্টার।

বইটিতে লেখক বাস্তব উদাহরণসহ এমন এক পৃথিবীর কথা বলেছেন, যেখানে থাকবে না শোষণ ও দূষণ। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, অতিমাত্রায় মুনাফাকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। এটি সমাজে অসমতা তৈরি করেছে, বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। এক্ষেত্রে লেখক যেমন অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের কথা বলেছেন, একইসঙ্গে জোর দিয়েছেন পরিবেশের সুরক্ষার ওপরও।  

লেখকের মতে, ধনী-গরিবের বৈষম্য হাতি-পিঁপড়ার মতো ব্যাপক। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে স্বার্থপরতার বদলে স্বার্থহীনতা, মুনাফাকেন্দ্রিক ব্যবসার পরিবর্তে সামাজিক ব্যবসা, বেকারত্বের সমাধানে তারুণ্যের শক্তির ব্যবহার, উচ্চ সুদের বদলে ক্ষুদ্রঋণ, পরিবেশবান্ধব কারখানা ও সবুজ প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হবে। এতে অর্থনৈতিক বৈষম্য, পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

তিন শূন্যের পৃথিবী বইয়ে পাঠকের নজর কেড়েছে তিন শূন্য তত্ত্বটি। এতে লেখক পৃথিবীতে তিনটি শূন্য বাস্তবায়নের পথ দেখিয়েছেন। এগুলো হল- 

শূন্য দারিদ্র্য

দারিদ্র্য দূর করতে হলে আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কাঠামো বদলাতে হবে। পুঁজির কেন্দ্রীকরণের চেয়ে তা সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে পৌঁছানো প্রয়োজন।

লেখক দেখিয়েছেন, সবচেয়ে বেশি ঋণ প্রয়োজন দরিদ্রদের, অথচ ধনীরাই ঋণ সুবিধা বেশি পায় এবং ঋণখেলাপি হয়। অপরদিকে, গ্রামীণ ব্যাংকের জামানতবিহীন ঋণ নেওয়া দরিদ্র গ্রাহকদের পরিশোধের হার ৯৯ শতাংশ। 

লেখকের মতে, দরিদ্র মানুষ দারিদ্র্যের সৃষ্টি করেনি, বরং বৈষম্যমূলক বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই এটি সৃষ্টি করেছে। সামাজিক ব্যবসা, ক্ষুদ্রঋণ, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে এ ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার। ড. ইউনূস বলেন, ‘সভ্য সমাজে দারিদ্র্যের কোনো স্থান নেই; দারিদ্র্য কেবল জাদুঘরে থাকার কথা।’

শূন্য বেকারত্ব

লেখক মনে করেন, বেকারত্ব মানুষের ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, বরং এটি বিদ্যমান অর্থনৈতিক কাঠামোর ত্রুটির ফল। বর্তমানে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মুনাফাকেন্দ্রিক হওয়ায় এটি সবার জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারছে না।

তিনি উল্লেখ করেন, তরুণদের বিশাল একটি অংশ আজ বেকারত্বের শিকার, যা তাদের হতাশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অথচ প্রযুক্তি ও অর্থনৈতিক শক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। সামাজিক ব্যবসার প্রসার, শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার, যুব সমাজকে স্বনির্ভর করা, প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার এবং ব্যক্তিগত মনোভাবের পরিবর্তন এ সমস্যার সমাধান আনতে পারে।

শূন্য গড় কার্বন নিঃসরণ

শূন্য গড় কার্বন নিঃসরণ মানে এমন এক ব্যবস্থা, যেখানে পরিবেশে যতটুকু কার্বন নিঃসরণ হয়, ততটুকু শোষণ বা ক্ষতিপূরণ করা হয়, ফলে মোট নিঃসরণ শূন্য থাকে। ড. ইউনূস মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব ঠেকাতে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।

বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অধিক মুনাফার জন্য পরিবেশ ধ্বংস করছে, যা জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ হচ্ছে। এর থেকে মুক্তির জন্য নবায়নযোগ্য শক্তি ও সবুজ প্রযুক্তির প্রসার, সামাজিক ব্যবসা ও পরিবেশের প্রতি দায়বদ্ধতা, বৃক্ষরোপণ ও বন সংরক্ষণ, টেকসই কৃষি পদ্ধতি ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার ও ভোক্তা সচেতনতা সৃষ্টি প্রয়োজন বলে মনে করেন লেখক। 

তিন শূন্য তত্ত্বঃ একটি বাস্তবসম্মত পথ

ড. ইউনূসের মতে, শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য কার্বন নিঃসরণ —এ তিন লক্ষ্য পরস্পরের পরিপূরক। তিনি বলেন, ‘নেট কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে এনেও দারিদ্র্য ও বেকারত্ব দূর করা সম্ভব। এ তিনটি লক্ষ্য একসঙ্গে অর্জনের চেষ্টা করতে হবে।’ 

পরিবেশ ধ্বংস করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কখনই টেকসই হতে পারে না। বরং একটি ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে মানবিকতা, ন্যায্যতা ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত হবে। ড. ইউনূসের এই তিন শূন্য তত্ত্ব আমাদের সামনে একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের দিগন্ত উন্মোচন করে।

লেখক মনে করেন, তিন শূন্য তত্ত্ব প্রয়োগ করে জীবনধারা পরিবর্তন করা সম্ভব। পরিবেশের সুরক্ষা ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য এটিকে যুবসমাজকে বাধ্যতামূলকভাবে না নিযে স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করতে হবে। শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মতে, ‘থ্রি জিরো পারসন’ হলো এমন ব্যক্তি, যিনি কার্বন নিঃসরণ করবেন না (‘জিরো কার্বন’), সম্পদের একক মালিক হবেন না বরং সম্পদ হবে সামাজিক ব্যবসা ভিত্তিক (জিরো দরিদ্র) এবং চাকরি না করে বরং উদ্যোক্তা হওযার মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করবে (জিরো বেকারত্ব)। দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে একটি দুশ্চিন্তামুক্ত, বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব।

‘অধ্যাপক ইউনূস ও তিন শূন্য’ নিয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কোষাধক্ষ ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তাইওয়ানের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিতে একটি উপস্থাপনায় আলোচনা করেছেন। সেখানে তিনি বলেন, সামাজিক ব্যবসাকে গ্রহণ করলে এবং বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে পুনর্বিন্যাস করলে বিশ্ব শূন্য দারিদ্র ও শূন্য বেকারত্ব অর্জন করতে পারবে। আর পরিবর্তন কেবল সরকার বা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান থেকে আসবে না।  এর জন্য ব্যক্তি, তরুণ সম্প্রদায় ও স্থানীয়দের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন।

এদিকে তিন শূন্য ধারণাটি বাস্তবায়নযোগ্য এবং সবার জন্য উপকারী বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উন্নয়ন গবেষক অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান।

তিনি বলেন, এটি একইসঙ্গে দার্শনিক ও প্রায়োগিক। উচ্চাকাঙ্খী মনে হলেও এটি বাস্তবায়নযোগ্য। এ তত্ত্বের সবচেয়ে বড় গুণ হলো তা সবাইকে একত্রিত করতে পারবে।