ঢাকা ১২ মার্চ, ২০২৫
শিরোনামঃ
গভীর রাতে বনবিভাগ উখিয়া রেঞ্জের অভিযান বাগানের কাটভর্তি ডাম্পার আটক চলতি বছরের মধ্যে পাচারকৃত অর্থের কিছু অংশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব: অর্থ উপদেষ্টা সাতটি প্রধান বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে নেপাল সফরের আমন্ত্রণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় : এবি পার্টি জুলাই বিপ্লবের চেতনায় নতুন বাংলাদেশ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান বাংলাদেশ অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে জাপানের অব্যাহত সহায়তা চায় গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী শক্তি দেশ চালাচ্ছে: তথ্য উপদেষ্টা বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে চায় রাশিয়া বিটিভিকে যুগোপযোগী ও জনপ্রিয় করতে হবে : তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা

কালের সাক্ষী দিনাজপুরের নয়াবাদ মসজিদ

#
news image

জেলার কাহারোল উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের কান্তজি মন্দির থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে নয়াবাদ গ্রামের ঐতিহাসিক নয়াবাদ মসজিদটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

জনশ্রুতি রয়েছে, ১৭২২ সালে তৎকালীন দিনাজপুর মহারাজা প্রাণনাথ বর্তমান কাহারোল উপজেলার কান্তনগর গ্রামে একটি মন্দির নির্মাণের জন্য মধ্যপ্রাচ্য দেশ মিশর থেকে একদল সুদক্ষ স্থাপনা নির্মাণ কারিগর নিয়ে  আসেন।

আগত কারিগরেরা সবাই মুসলমান ও ধার্মিক ছিলেন । এদেশে মন্দির নির্মাণ কাজে এসে ভুলেননি নিজ ধর্ম পালন করার কথা।

নির্মাণ কালীন সময় মন্দিরের পাশেই খোলা আকাশের নিচে নামাজ আদায় করতেন কারিগরেরা। এরই মধ্যে কারিগরদের প্রধান (হেডমিস্ত্রি) নেয়াজ ওরফে কালুয়া মিস্ত্রি মহারাজার দরবারে গিয়ে সব মিস্ত্রিদের থাকা ও ধর্ম পালনের নিমিত্তে একটি মসজিদ নির্মাণের জায়গার আবেদন জানান।

এ সময় মহারাজা কান্তজি মন্দির থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্বে জেলার কাহারোল উপজেলার ঢেপা নদীর পশ্চিম কোল ঘেষে অবস্থিত নয়াবাদ গ্রামে ১ দশমিক ১৫ বিঘা জমি মসজিদ নির্মাণের জন্য জায়গা দেন। এ ছাড়া মসজিদের পাশে তাদের থাকার জন্য বাড়ি করার নির্দেশ দেন মহারাজা।

মহারাজার নির্দেশ মোতাবেক মিস্ত্রিরা মন্দিরের পাশাপাশি নয়াবাদ গ্রামে নিজেদের থাকার বাড়ি ও নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদ নির্মাণ কাজ চালিয়ে যায়। নয়াবাদ মসজিদ নির্মাণের পর তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন সেখানে।

এক পর্যায়ে মহারাজা প্রাণনাথের মৃত্যুর পর তারই দত্তক ছেলে মহারাজা রামনাথের আমলে গত ১৭১৫ সালে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এরই মধ্যে মন্দিরের পাশাপাশি মসজিদের কাজ  শেষ করেন মিস্ত্রিরা। মন্দির নির্মাণ কাজে কালুয়া মিস্ত্রির নেতৃত্বে আসা মিস্ত্রিরা মন্দির নির্মাণের কাজ শেষে ফিরে যায় নিজ দেশে। কিন্তু এদেশ ছেড়ে যেতে চায়না নেয়াজ ওরফে কালুয়া মিস্ত্রি ও তার ছোট ভাই নিয়ামুল হক।

আবার নেয়াজ মিস্ত্রি মহারাজার দরবারে হাজির হয়। এবার স্থায়ীভাবে বসবাস ও জীবিকা নির্বাহের জন্য মহারাজার কাছে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহের জন্য কিছু জমির আবদার করেন। তাৎক্ষণিক মহারাজা কিছু জমি তাদের দুই ভাইকে দান করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মিশরীয় এ দুই ভাই মহারাজার দানকৃত জমিতে ফসল আবাদ করে দিনাতিপাত করেন।

গতকাল ১০ মার্চ সোমবার পবিত্র রমজান মাসের ৯ম রোজায় নয়াবাদ মসজিদে ইফতারের সময়  গ্রামের মুসল্লিরা এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বর্তমান প্রজন্মের আত্মীয়-স্বজনেরা মহান আল্লাহ পাকের কাছে তাদের জন্য দোয়া করেন। তাদের আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে একজন হাফেজ মাওলানা মোঃ রায়হানুল ইসলাম গতকাল সোমবার তারাবির নামাজের পর  রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, তাদের পূর্ব পুরুষ ওই দুজনের মৃত্যুর পর নেয়াজ ওরফে কালুয়া মিস্ত্রি ও তার ছোট ভাই নিয়ামুল হককে নয়াবাদ মসজিদ সংলগ্ন দাফন করা হয়। এ মিস্ত্রিদের নামনুসারে অত্র এলাকার নাম হয় নয়াবাদ মিস্ত্রিপাড়া। বর্তমানে মন্দির ও মসজিদ নির্মাণের হেড মিস্ত্রি ও তার ছোট ভাইয়ের বংশধররা নয়াবাদ মিস্ত্রিপাড়ায় বসবাস করছে।

কালুয়া ওরফে নেওয়াজ মিস্ত্রির বংশধরনের জানান,তাদের পূর্ব পুরুষরা এখন নেই। কিন্তু এখন স্মৃতি হিসেবে এ নয়াবাদ মসজিদটি রয়েছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা কান্তজি মন্দির পরিদর্শনে এসে এ মসজিদটি পরিদর্শন করেন।

তারা জানান, পূর্বের তুলনায় বর্তমানে এ নয়াবাদ মসজিদ পরিদর্শনে পর্যটকদের ভিড় বেড়েই চলছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে নতুন মুসল্লিদের সমাগমও রয়েছে। প্রতিদিন ওই গ্রামের লোকজনকে আগত পর্যটকদের এ ঐতিহাসিক মসজিদের নির্মাণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের  প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। অনেক পর্যটকই জানতে চান কান্তজি মন্দিরের সঙ্গে এ মসজিদের কি সম্পর্ক রয়েছে। প্রকৃত বিষয়ক পর্যটকরা জানতে পেরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

দিনাজপুর কাহারোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান, ঐতিহাসিক কান্তজি মন্দির পরিদর্শনের পাশাপাশি পর্যটকদের ঐতিহাসিক নয়াবাদ মসজিদ পরিদর্শনে আগ্রহ ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। 

ঐতিহাসিক নয়াবাদ মসজিদটি পূর্ব থেকেই পর্যটন কেন্দ্রের আওতাভুক্ত করার জন্য প্রস্তাবনা রয়েছে। মসজিদটি গ্রামবাসীর তত্ত্বাবধানে আছে। 

নিজস্ব প্রতিবেদক :

১২ মার্চ, ২০২৫,  5:26 AM

news image

জেলার কাহারোল উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের কান্তজি মন্দির থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে নয়াবাদ গ্রামের ঐতিহাসিক নয়াবাদ মসজিদটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

জনশ্রুতি রয়েছে, ১৭২২ সালে তৎকালীন দিনাজপুর মহারাজা প্রাণনাথ বর্তমান কাহারোল উপজেলার কান্তনগর গ্রামে একটি মন্দির নির্মাণের জন্য মধ্যপ্রাচ্য দেশ মিশর থেকে একদল সুদক্ষ স্থাপনা নির্মাণ কারিগর নিয়ে  আসেন।

আগত কারিগরেরা সবাই মুসলমান ও ধার্মিক ছিলেন । এদেশে মন্দির নির্মাণ কাজে এসে ভুলেননি নিজ ধর্ম পালন করার কথা।

নির্মাণ কালীন সময় মন্দিরের পাশেই খোলা আকাশের নিচে নামাজ আদায় করতেন কারিগরেরা। এরই মধ্যে কারিগরদের প্রধান (হেডমিস্ত্রি) নেয়াজ ওরফে কালুয়া মিস্ত্রি মহারাজার দরবারে গিয়ে সব মিস্ত্রিদের থাকা ও ধর্ম পালনের নিমিত্তে একটি মসজিদ নির্মাণের জায়গার আবেদন জানান।

এ সময় মহারাজা কান্তজি মন্দির থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্বে জেলার কাহারোল উপজেলার ঢেপা নদীর পশ্চিম কোল ঘেষে অবস্থিত নয়াবাদ গ্রামে ১ দশমিক ১৫ বিঘা জমি মসজিদ নির্মাণের জন্য জায়গা দেন। এ ছাড়া মসজিদের পাশে তাদের থাকার জন্য বাড়ি করার নির্দেশ দেন মহারাজা।

মহারাজার নির্দেশ মোতাবেক মিস্ত্রিরা মন্দিরের পাশাপাশি নয়াবাদ গ্রামে নিজেদের থাকার বাড়ি ও নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদ নির্মাণ কাজ চালিয়ে যায়। নয়াবাদ মসজিদ নির্মাণের পর তারা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতেন সেখানে।

এক পর্যায়ে মহারাজা প্রাণনাথের মৃত্যুর পর তারই দত্তক ছেলে মহারাজা রামনাথের আমলে গত ১৭১৫ সালে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এরই মধ্যে মন্দিরের পাশাপাশি মসজিদের কাজ  শেষ করেন মিস্ত্রিরা। মন্দির নির্মাণ কাজে কালুয়া মিস্ত্রির নেতৃত্বে আসা মিস্ত্রিরা মন্দির নির্মাণের কাজ শেষে ফিরে যায় নিজ দেশে। কিন্তু এদেশ ছেড়ে যেতে চায়না নেয়াজ ওরফে কালুয়া মিস্ত্রি ও তার ছোট ভাই নিয়ামুল হক।

আবার নেয়াজ মিস্ত্রি মহারাজার দরবারে হাজির হয়। এবার স্থায়ীভাবে বসবাস ও জীবিকা নির্বাহের জন্য মহারাজার কাছে কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহের জন্য কিছু জমির আবদার করেন। তাৎক্ষণিক মহারাজা কিছু জমি তাদের দুই ভাইকে দান করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মিশরীয় এ দুই ভাই মহারাজার দানকৃত জমিতে ফসল আবাদ করে দিনাতিপাত করেন।

গতকাল ১০ মার্চ সোমবার পবিত্র রমজান মাসের ৯ম রোজায় নয়াবাদ মসজিদে ইফতারের সময়  গ্রামের মুসল্লিরা এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বর্তমান প্রজন্মের আত্মীয়-স্বজনেরা মহান আল্লাহ পাকের কাছে তাদের জন্য দোয়া করেন। তাদের আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে একজন হাফেজ মাওলানা মোঃ রায়হানুল ইসলাম গতকাল সোমবার তারাবির নামাজের পর  রাতে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, তাদের পূর্ব পুরুষ ওই দুজনের মৃত্যুর পর নেয়াজ ওরফে কালুয়া মিস্ত্রি ও তার ছোট ভাই নিয়ামুল হককে নয়াবাদ মসজিদ সংলগ্ন দাফন করা হয়। এ মিস্ত্রিদের নামনুসারে অত্র এলাকার নাম হয় নয়াবাদ মিস্ত্রিপাড়া। বর্তমানে মন্দির ও মসজিদ নির্মাণের হেড মিস্ত্রি ও তার ছোট ভাইয়ের বংশধররা নয়াবাদ মিস্ত্রিপাড়ায় বসবাস করছে।

কালুয়া ওরফে নেওয়াজ মিস্ত্রির বংশধরনের জানান,তাদের পূর্ব পুরুষরা এখন নেই। কিন্তু এখন স্মৃতি হিসেবে এ নয়াবাদ মসজিদটি রয়েছে। দেশি-বিদেশি পর্যটকেরা কান্তজি মন্দির পরিদর্শনে এসে এ মসজিদটি পরিদর্শন করেন।

তারা জানান, পূর্বের তুলনায় বর্তমানে এ নয়াবাদ মসজিদ পরিদর্শনে পর্যটকদের ভিড় বেড়েই চলছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে নতুন মুসল্লিদের সমাগমও রয়েছে। প্রতিদিন ওই গ্রামের লোকজনকে আগত পর্যটকদের এ ঐতিহাসিক মসজিদের নির্মাণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের  প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। অনেক পর্যটকই জানতে চান কান্তজি মন্দিরের সঙ্গে এ মসজিদের কি সম্পর্ক রয়েছে। প্রকৃত বিষয়ক পর্যটকরা জানতে পেরে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।

দিনাজপুর কাহারোল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান, ঐতিহাসিক কান্তজি মন্দির পরিদর্শনের পাশাপাশি পর্যটকদের ঐতিহাসিক নয়াবাদ মসজিদ পরিদর্শনে আগ্রহ ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। 

ঐতিহাসিক নয়াবাদ মসজিদটি পূর্ব থেকেই পর্যটন কেন্দ্রের আওতাভুক্ত করার জন্য প্রস্তাবনা রয়েছে। মসজিদটি গ্রামবাসীর তত্ত্বাবধানে আছে।