‘নারীজন্য ধন্য হোক আপনভাগ্য গড়ার অধিকারে’ স্লোগানে নাট্য সংগঠন স্বপ্নদলের ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৫’ উদযাপন উপলক্ষ্যে ৭ মার্চ শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটারে স্বপ্নদল প্রযোজনা নারী জাগরণের কাব্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’র বিশেষ মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হবে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিরায়ত সৃষ্টি ‘চিত্রাঙ্গদা’র গবেষণাগার নাট্যরীতিতে নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন। ভারতের ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা (এনএসডি)-র আমন্ত্রণে ‘২৩তম ভারত বঙ্গ মহোৎসব, ২০২৫’-এ ‘চিত্রাঙ্গদা’র দু’টি প্রদর্শনীসহ দেশ-বিদেশে প্রযোজনাটির ১১৩টি মঞ্চায়ন করে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয় স্বপ্নদল।

‘চিত্রাঙ্গদা’ প্রদর্শনীর পূর্বে নিবেদিতপ্রাণ নাট্যজন রুমা মোদক-কে স্বপ্নদলের ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস সম্মাননা ২০২৫’ প্রদান করা হবে। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মাননা তুলে দিবেন চায়নার রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ ও চীনাভাষায় রবীন্দ্র রচনাবলীর অনুবাদক প্রফেসর দং ইউ চেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন নাট্যগবেষক ও বাংলাদেশ থিয়েটার আর্কাইভসের প্রতিষ্ঠাতা নাট্যজন বাবুল বিশ্বাস ও শিল্পকলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেন।

বিশ্বের সকল নারীকে আন্তরিক সম্মান জানাতে বাংলাদেশের প্রথম নাট্যদল হিসেবে ২০১২ থেকে নিয়মিতভাবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে আসছে স্বপ্নদল।

দিবসটিতে এই পর্যন্ত সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে নাট্যজন ফেরদৌসী মজুমদার, শিমূল ইউসুফ, লাকী ইনাম, নূনা আফরোজ, আইরিন পারভীন লোপা, সাধনা আহমেদ, ত্রপা মজুমদার, রোকেয়া রফিক বেবী, মোমেনা চৌধুরী, আছমা আক্তার লিজা, জয়িতা মহলানবীশ, হৃদি হক এবং স্বপ্নদলের নিয়মিত নারী-নাট্যকর্মীসহ সকল নিয়মিত নাট্যকর্মীর মাতাদের। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ৮ মার্চ হলেও হল বরাদ্দের কারণে এই বছর একদিন পূর্বে ৭মার্চ দিবসটি পালন করছে স্বপ্নদল।

উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথ মহাভারতের চিত্রাঙ্গদা-উপাখ্যান অবলম্বনে ১৮৯২-এ কাব্যনাটারপে এবং ১৯৩৬-এ নৃত্যনাট্য রূপে ‘চিত্রাঙ্গদা’ রচনা করেন। স্বপ্নদলের ‘চিত্রাঙ্গদা’ প্রযোজনাটি নির্মিত হয়েছে কাব্যনাট্য পাণ্ডুলিপি অবলম্বনে। এর নাট্য কাহিনীতে উপস্থাপিত হয়- মহাবীর অর্জুন সত্য পালনের জন্য একযুগ ব্রহ্মচর্যব্রত গ্রহণ করে মণিপুর বনে এসেছেন। মণিপুর-রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদা, অর্জুনের প্রেমে উদ্বেলিত হলেও অর্জুন রূপহীন চিত্রাঙ্গদাকে প্রত্যাখ্যান করেন।

অপমানিত চিত্রাঙ্গদা প্রেমের দেবতা মদন এবং যৌবনের দেবতা বসন্তের সহায়তায় এক বছরের জন্য অপরূপ সুন্দরীতে রূপান্তরিত হন। এবারে অর্জুন যথারীতি চিত্রাঙ্গদার প্রেমে পড়েন। কিন্তু অর্জুনকে পেয়েও চিত্রাঙ্গদার অন্তর্দ্বন্দ্বে ক্ষত-বিক্ষত হতে থাকে-অর্জুন প্রকৃতপক্ষে কাকে ভালোবাসেন, চিত্রাঙ্গদার বাহ্যিক রূপ নাকি তার প্রকৃত অস্তিত্বকে? এভাবে ‘চিত্রাঙ্গদা’ পৌরাণিক কাহিনীর আড়ালে যেন এ কালেরই নর-নারীর মনোদৈহিক সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং পাশাপাশি পারস্পরিক সম্মানাবস্থানের প্রেরণারূপে উপস্থাপিত হয়। ‘চিত্রাঙ্গদা’ প্রযোজনাটি ২০১১-এ সার্ধশত রবীন্দ্রবর্ষ উপলক্ষ্যে সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুদানে নির্মাণ করে স্বপ্নদল।

‘চিত্রাঙ্গদা’ প্রযোজনার গ্রন্থিকরা হলেন- সোনালী, জুয়েনা, শিশির, শ্যামল, অর্ক, জেবু, সুমাইয়া, সামাদ, উষা, নিসর্গ, আলী, বিপুল, হাসান, সুকুমার, বিমল, রেহান, অনিন্দ্য ও নিশক। প্রযোজনাটির মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা করেছেন ফজলে রাব্বি সুকর্ণ।