ভারতীয় মথ ডালে ক্ষতিকর কেমিক্যাল, দেশে বিক্রি হচ্ছে মুগ ডাল হিসেবে

খন্দকার মোহাম্মাদ আলী, রাজশাহী বিভাগীয় ব্যুরো চিফ :
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, 3:39 PM

ভারতীয় মথ ডালে ক্ষতিকর কেমিক্যাল, দেশে বিক্রি হচ্ছে মুগ ডাল হিসেবে
ভারত থেকে আমদানি করা মথ ডালে মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকর রং ও কেমিক্যাল—এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য নিশ্চিত করেছেন দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরে কর্মরত কোয়ারেন্টাইন বিভাগের উপ-পরিচালকগণ। এই ডাল মুগ ডাল নামে দেশের বাজারে বিক্রি করছে অসাধু আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী চক্র। এতে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ এবং দেশের নিম্ন আয়ের জনগণ পড়ছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এস আই এম রাজিউল ইসলাম এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবু তালেব জানান, ল্যাব রিপোর্ট অনুযায়ী আমদানি করা মথ ডালে ক্ষতিকর রং ও কেমিক্যাল মেশানো হয়েছে। এই ডাল খেলে হজম শক্তি কমে যাওয়া, পেটের ফাঁপা, বদহজম এবং লিভার সিরোসিস পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষ করে শিশুসহ দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষের জন্য এটি ভয়াবহ হুমকি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতে মথ ডাল খাদ্যপণ্য হিসেবে নয় বরং গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভারতের আইন অনুযায়ী, সেখানে এই ডালে কেমিক্যাল বা রং মিশিয়ে বাজারজাত করা নিষিদ্ধ। অথচ বাংলাদেশে সেই নিষিদ্ধ পণ্যই কৌশলে মুগ ডাল হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৩৫-৩৬ হাজার মেট্রিক টন মুগ ডাল উৎপাদন হয়, যা চাহিদার মাত্র ২৫%। ফলে বাকি ৭৫% আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। এই ঘাটতির সুযোগ নিয়ে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে কেমিক্যাল মেশানো মথ ডাল আমদানি করে তা মুগ ডাল নামে বিক্রি করছে।
সোনামসজিদ স্থলবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে এ পর্যন্ত ৭,৭৭৭ মেট্রিক টন কেমিক্যালযুক্ত মথ ডাল আমদানি করেছে নিম্নোক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ: বিসমিল্লাহ ফ্লাওয়ার মিল, বিসমিল্লাহ ডাল মিল, নিঝুম শস্য ভান্ডার, এম এ ট্রেডিং, শ্যামলী ডাল মিল,
বাবর ডাবল মিল, মেসার্স সালমান খুরশিদ ডাল মিল।
কোয়ারেন্টাইন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরে আসা পণ্যে কেবল প্যাকেট, ওজন ও পোকা-মাকড় পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু কেমিক্যাল বা রং মেশানো হয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করার জন্য পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা বা জনবল নেই।
বিএসটিআই রাজশাহী বিভাগের পরিচালক জহরুল সিকদার এবং এডি শরিফুল ইসলাম জানান, মথ ডাল বিএসটিআই অনুমোদিত ৩১৫টি পণ্যের মধ্যে নেই। তালিকাভুক্ত না হওয়ায় তারা ল্যাব টেস্টও করতে পারছেন না। তবে সরকার পণ্যটি তালিকাভুক্ত করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তারা।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আক্তার বলেন, “যেহেতু ল্যাব রিপোর্টে কেমিক্যাল থাকার প্রমাণ মিলেছে, সেহেতু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনস্বার্থে এ ধরনের পণ্য বাজারে ছড়ানো বন্ধ করতে হবে।”
বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক বনি আমিন খান ও স্থলবন্দর জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বলেন, কেমিক্যালযুক্ত মথ ডাল আমদানি বন্ধে এবং নতুন করে আমদানির জন্য অনুমোদন (আইপি) না দিতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে।
দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরে কর্মরত কোয়ারেন্টাইন উপপরিচালকগণ (সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, হিলি, বেনাপোল, ভোমরা) একযোগে বলেন, মথ ডাল আমদানি করে কেমিক্যাল মেশানোর মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে প্রতারিত করা হচ্ছে। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। অবিলম্বে এই পণ্য আমদানি বন্ধ করা এবং আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে, মুগ ডাল নামের ছদ্মবেশে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য তালিকায় স্থায়ীভাবে ঢুকে পড়বে ক্ষতিকর কেমিক্যালযুক্ত পশুখাদ্য। এতে জনস্বাস্থ্য ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়বে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর দ্রুত হস্তক্ষেপ সময়ের দাবি।
খন্দকার মোহাম্মাদ আলী, রাজশাহী বিভাগীয় ব্যুরো চিফ :
১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, 3:39 PM

ভারত থেকে আমদানি করা মথ ডালে মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকর রং ও কেমিক্যাল—এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য নিশ্চিত করেছেন দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরে কর্মরত কোয়ারেন্টাইন বিভাগের উপ-পরিচালকগণ। এই ডাল মুগ ডাল নামে দেশের বাজারে বিক্রি করছে অসাধু আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী চক্র। এতে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ এবং দেশের নিম্ন আয়ের জনগণ পড়ছেন মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এস আই এম রাজিউল ইসলাম এবং রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবু তালেব জানান, ল্যাব রিপোর্ট অনুযায়ী আমদানি করা মথ ডালে ক্ষতিকর রং ও কেমিক্যাল মেশানো হয়েছে। এই ডাল খেলে হজম শক্তি কমে যাওয়া, পেটের ফাঁপা, বদহজম এবং লিভার সিরোসিস পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষ করে শিশুসহ দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মানুষের জন্য এটি ভয়াবহ হুমকি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতে মথ ডাল খাদ্যপণ্য হিসেবে নয় বরং গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভারতের আইন অনুযায়ী, সেখানে এই ডালে কেমিক্যাল বা রং মিশিয়ে বাজারজাত করা নিষিদ্ধ। অথচ বাংলাদেশে সেই নিষিদ্ধ পণ্যই কৌশলে মুগ ডাল হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৩৫-৩৬ হাজার মেট্রিক টন মুগ ডাল উৎপাদন হয়, যা চাহিদার মাত্র ২৫%। ফলে বাকি ৭৫% আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয়। এই ঘাটতির সুযোগ নিয়ে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে কেমিক্যাল মেশানো মথ ডাল আমদানি করে তা মুগ ডাল নামে বিক্রি করছে।
সোনামসজিদ স্থলবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে এ পর্যন্ত ৭,৭৭৭ মেট্রিক টন কেমিক্যালযুক্ত মথ ডাল আমদানি করেছে নিম্নোক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ: বিসমিল্লাহ ফ্লাওয়ার মিল, বিসমিল্লাহ ডাল মিল, নিঝুম শস্য ভান্ডার, এম এ ট্রেডিং, শ্যামলী ডাল মিল,
বাবর ডাবল মিল, মেসার্স সালমান খুরশিদ ডাল মিল।
কোয়ারেন্টাইন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরে আসা পণ্যে কেবল প্যাকেট, ওজন ও পোকা-মাকড় পরীক্ষা করা হয়। কিন্তু কেমিক্যাল বা রং মেশানো হয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করার জন্য পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা বা জনবল নেই।
বিএসটিআই রাজশাহী বিভাগের পরিচালক জহরুল সিকদার এবং এডি শরিফুল ইসলাম জানান, মথ ডাল বিএসটিআই অনুমোদিত ৩১৫টি পণ্যের মধ্যে নেই। তালিকাভুক্ত না হওয়ায় তারা ল্যাব টেস্টও করতে পারছেন না। তবে সরকার পণ্যটি তালিকাভুক্ত করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তারা।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আফিয়া আক্তার বলেন, “যেহেতু ল্যাব রিপোর্টে কেমিক্যাল থাকার প্রমাণ মিলেছে, সেহেতু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনস্বার্থে এ ধরনের পণ্য বাজারে ছড়ানো বন্ধ করতে হবে।”
বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক বনি আমিন খান ও স্থলবন্দর জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বলেন, কেমিক্যালযুক্ত মথ ডাল আমদানি বন্ধে এবং নতুন করে আমদানির জন্য অনুমোদন (আইপি) না দিতে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হবে।
দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দরে কর্মরত কোয়ারেন্টাইন উপপরিচালকগণ (সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, হিলি, বেনাপোল, ভোমরা) একযোগে বলেন, মথ ডাল আমদানি করে কেমিক্যাল মেশানোর মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে প্রতারিত করা হচ্ছে। এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। অবিলম্বে এই পণ্য আমদানি বন্ধ করা এবং আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে, মুগ ডাল নামের ছদ্মবেশে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য তালিকায় স্থায়ীভাবে ঢুকে পড়বে ক্ষতিকর কেমিক্যালযুক্ত পশুখাদ্য। এতে জনস্বাস্থ্য ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়বে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর দ্রুত হস্তক্ষেপ সময়ের দাবি।