কয়রায় মেম্বার-চেয়ারম্যানের যোগসাজশে সরকারি অর্থ লোপাটের অভিযোগ

কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি :
০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, 4:59 PM

কয়রায় মেম্বার-চেয়ারম্যানের যোগসাজশে সরকারি অর্থ লোপাটের অভিযোগ
খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নে টিআর ও কাবিখা প্রকল্পের অর্থ লোপাট ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান এবং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম কম্পানির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। অভিযোগ,সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করে নামমাত্র কাজ দেখিয়ে কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট থেকে লুটপাট চালানো হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে কয়রা উপজেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পে ১৭৬টি প্রকল্পের মধ্যে উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নে ১৭টি প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব প্রকল্পে রয়েছে রাস্তা, স্কুল,মসজিদ ও মন্দির সংস্কার। অথচ বাস্তবে এসব প্রকল্পের অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি, কোথাও কোথাও কাজের অস্তিত্বই নেই। এলাকাবাসীর অভিযোগ,এই পুরো প্রক্রিয়ায় ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ও চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম কম্পানির সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে,কাটমারচর পাঞ্জেগানা জামে মসজিদ এবং হাজতখালী আবু বকর সিদ্দিক জামে মসজিদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল এক লাখ ২৫ হাজার টাকা করে। কিন্তু প্রতিটি মসজিদে দেওয়া হয়েছে মাত্র ৫৫ হাজার টাকা করে,বাকি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন মসজিদ সংশ্লিষ্টরা। মসজিদ কমিটির কোনো সম্মতি ছাড়াই বরাদ্দের টাকা ভাগ করে দেওয়া হয়,যা স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মানুষদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
এছাড়াও,দিঘিরপাড় প্রি-ক্যাডেট স্কুল এবং সোনালি আশা সরকারি বেসরকারি বিদ্যালয়ের সংস্কারেও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুই স্কুলের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় যথাক্রমে এক লাখ ২০ হাজার এবং এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু প্রকল্পের কাজ হয়নি বা আংশিকভাবে হলেও তার সঠিক হিসাব নেই। বরং অভিযোগ রয়েছে,শর্ত সাপেক্ষে আংশিক টাকা দিয়ে বাকি অর্থ আত্মসাৎ করেন চেয়ারম্যান ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,“আমরা তো নিরুপায়। স্কুলের অবস্থা খারাপ, বেতন হয় না। যতটুকু টাকা এসেছে,তা দিয়েই টুকটাক কাজ করেছি। পুরো বরাদ্দ তো আমরা পাইনি।”
অনুরূপভাবে মসজিদ উন্নয়ন,রাস্তা সংস্কার ও বিদ্যালয় ঘেরা নির্মাণের নামে আরও কয়েকটি প্রকল্পে বড় অঙ্কের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেশিরভাগ প্রকল্প এলাকায় নেই কোনো সাইনবোর্ড, নেই জনসাধারণের সম্পৃক্ততা,এমনকি অনেক জায়গায় স্থানীয়দের জানাও নেই বরাদ্দের বিষয়ে।
স্থানীয় সমাজকর্মী হাফিজুল ইসলাম বলেন,“মোস্তাফিজুর রহমান মেম্বার হয়ে যেসব প্রকল্প পেয়েছেন, তার প্রতিটিতেই দুর্নীতি করেছেন। তিন মাস আগে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি,কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এবার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের টাকাও আত্মসাৎ করা হয়েছে।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,“চেয়ারম্যান আমাদের ৫৫ হাজার টাকা দিয়েছেন,আমরা রাজি না হলে সেটিও পেতাম না। আমি কোনো টাকা আত্মসাৎ করিনি, সব প্রমাণ আমার কাছে আছে।”
অন্যদিকে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন,“সব অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি সব সময় ভালো কাজ করার চেষ্টা করি।”
তবে উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের একাধিক বাসিন্দা জানান,স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এসব দুর্নীতির পরও কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে থাকা চেয়ারম্যান তার প্রভাব কাজে লাগিয়ে বারবার এসব অভিযোগ থেকে রেহাই পাচ্ছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ বলেন,“কোনো কাজ না করে টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল বাকী বলেন, “আমি এখানে নতুন এসেছি। অভিযোগগুলো সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছি। প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এলাকাবাসীর প্রশ্ন—দীর্ঘদিন ধরে যারা একের পর এক প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করছেন, তারা কীভাবে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন? টিআর-কাবিখার নামে বরাদ্দ করা কোটি টাকার এই তহবিল আসলে কতটুকু জনকল্যাণে ব্যয় হচ্ছে, তা এখন তদন্ত সাপেক্ষেই প্রমাণ করতে হবে।
কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি :
০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, 4:59 PM

খুলনার কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নে টিআর ও কাবিখা প্রকল্পের অর্থ লোপাট ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান এবং ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম কম্পানির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। অভিযোগ,সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করে নামমাত্র কাজ দেখিয়ে কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট থেকে লুটপাট চালানো হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে কয়রা উপজেলায় গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পে ১৭৬টি প্রকল্পের মধ্যে উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নে ১৭টি প্রকল্পের আওতায় বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব প্রকল্পে রয়েছে রাস্তা, স্কুল,মসজিদ ও মন্দির সংস্কার। অথচ বাস্তবে এসব প্রকল্পের অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয়নি, কোথাও কোথাও কাজের অস্তিত্বই নেই। এলাকাবাসীর অভিযোগ,এই পুরো প্রক্রিয়ায় ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ও চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম কম্পানির সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে,কাটমারচর পাঞ্জেগানা জামে মসজিদ এবং হাজতখালী আবু বকর সিদ্দিক জামে মসজিদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল এক লাখ ২৫ হাজার টাকা করে। কিন্তু প্রতিটি মসজিদে দেওয়া হয়েছে মাত্র ৫৫ হাজার টাকা করে,বাকি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন মসজিদ সংশ্লিষ্টরা। মসজিদ কমিটির কোনো সম্মতি ছাড়াই বরাদ্দের টাকা ভাগ করে দেওয়া হয়,যা স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মানুষদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
এছাড়াও,দিঘিরপাড় প্রি-ক্যাডেট স্কুল এবং সোনালি আশা সরকারি বেসরকারি বিদ্যালয়ের সংস্কারেও অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুই স্কুলের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় যথাক্রমে এক লাখ ২০ হাজার এবং এক লাখ ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু প্রকল্পের কাজ হয়নি বা আংশিকভাবে হলেও তার সঠিক হিসাব নেই। বরং অভিযোগ রয়েছে,শর্ত সাপেক্ষে আংশিক টাকা দিয়ে বাকি অর্থ আত্মসাৎ করেন চেয়ারম্যান ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,“আমরা তো নিরুপায়। স্কুলের অবস্থা খারাপ, বেতন হয় না। যতটুকু টাকা এসেছে,তা দিয়েই টুকটাক কাজ করেছি। পুরো বরাদ্দ তো আমরা পাইনি।”
অনুরূপভাবে মসজিদ উন্নয়ন,রাস্তা সংস্কার ও বিদ্যালয় ঘেরা নির্মাণের নামে আরও কয়েকটি প্রকল্পে বড় অঙ্কের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেশিরভাগ প্রকল্প এলাকায় নেই কোনো সাইনবোর্ড, নেই জনসাধারণের সম্পৃক্ততা,এমনকি অনেক জায়গায় স্থানীয়দের জানাও নেই বরাদ্দের বিষয়ে।
স্থানীয় সমাজকর্মী হাফিজুল ইসলাম বলেন,“মোস্তাফিজুর রহমান মেম্বার হয়ে যেসব প্রকল্প পেয়েছেন, তার প্রতিটিতেই দুর্নীতি করেছেন। তিন মাস আগে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি,কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এবার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের টাকাও আত্মসাৎ করা হয়েছে।”
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,“চেয়ারম্যান আমাদের ৫৫ হাজার টাকা দিয়েছেন,আমরা রাজি না হলে সেটিও পেতাম না। আমি কোনো টাকা আত্মসাৎ করিনি, সব প্রমাণ আমার কাছে আছে।”
অন্যদিকে ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন,“সব অভিযোগ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি সব সময় ভালো কাজ করার চেষ্টা করি।”
তবে উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের একাধিক বাসিন্দা জানান,স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এসব দুর্নীতির পরও কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির পদে থাকা চেয়ারম্যান তার প্রভাব কাজে লাগিয়ে বারবার এসব অভিযোগ থেকে রেহাই পাচ্ছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ বলেন,“কোনো কাজ না করে টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ নেই। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল বাকী বলেন, “আমি এখানে নতুন এসেছি। অভিযোগগুলো সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছি। প্রমাণিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এলাকাবাসীর প্রশ্ন—দীর্ঘদিন ধরে যারা একের পর এক প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করছেন, তারা কীভাবে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন? টিআর-কাবিখার নামে বরাদ্দ করা কোটি টাকার এই তহবিল আসলে কতটুকু জনকল্যাণে ব্যয় হচ্ছে, তা এখন তদন্ত সাপেক্ষেই প্রমাণ করতে হবে।