ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের টাকা নিয়ে পালালেন সমাজসেবা কর্মকর্তা

রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
২২ আগস্ট, ২০২৫, 11:14 PM

ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের টাকা নিয়ে পালালেন সমাজসেবা কর্মকর্তা
ভিক্ষুক পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন প্রকল্পের ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়েছেন নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক। এছাড়াও অফিস স্টাফ ও উপজেলার অন্যান্য কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও নানা অজুহাতে কয়েক লাখ টাকা ধার নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত মোজাম্মেল হক গত ২৮ জুলাই থেকে পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে। এরআগে সমাজসেবা কার্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে থাকা দুস্থদের ঋণ কার্যক্রম ও বিভিন্ন ভাতাদির ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা অবৈধভাবে উত্তোলন করে হাতিয়ে নেন তিনি। ঘটনাটি জানাজানি হলে এ বিষয়ে তদন্তের উদ্যোগ নেন জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা।
দুর্গাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুল তালুকদারকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্তে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি ধরা পড়েছে। ইতোমধ্যে তিনি এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জেলা কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক শাহ আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মোহনগঞ্জ সমাজসেবা কার্যালয় ও তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তির লক্ষ ৭৫ হাজার, মাতৃকেন্দ্রের ঋণ কর্মসূচির ৫ লক্ষ ১৩ হাজার, ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের ১ লক্ষ ৪০ হাজার ও ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের ২২ লক্ষ ৪৭ হাজারসহ মোট ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা একজন কর্মচারীর সই জাল করে উত্তোলন করে নিয়ে যান। এছাড়াও অফিস স্টাফদের কাছ থেকে হাওলাদ বাবদ ২ লক্ষ ও উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মায়ের অসুখসহ নানা অজুহাতে আরও কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, 'একজন কর্মকর্তা এমন হবে কখনো ভাবিনি। আমাদের সবার কাছ থেকে দুই লাখ টাকার বেশি নিয়েছেন মোজাম্মেল হক।'
অফিস সহকারী নিজামুল আজাদ বলেন, 'মোজাম্মেল স্যার গত ২৭ জুলাই অফিস করেছেন। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত আর অফিসে আসেননি। তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।'
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা বলেন, 'একজন সমাজসেবা কর্মকর্তা পরিবারের কারও অসুস্থতার কথা বলে টাকা হাওলাদ চাইলে কে না দেবে বলেন। আমিও বেশ কয়েক হাজার টাকা দিয়েছি। পালিয়ে যাওয়ার পর অনেক কর্মকর্তাই বলছেন, তাদের কাছ থেকে একইভাবে টাকা হাওলাদ নিয়েছেন মোজাম্মেল। এর পরিমাণ কয়েক লাখ হবে। অনেকে আবার মান-সম্মানের ভয়ে বলতে চাইছেন না।'
২০২৪ সালের মে মাসে মোহনগঞ্জ উপজেলায় সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসবে যোগদান করেন মোজাম্মেল হক। এরপর থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক শাহ আলম বলেন, 'বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে। মোজাম্মেল হক ৩৩ লক্ষ টাকার বেশি অবৈধভাবে অফিসের ব্যাংক হিসাব থেকে উত্তোলন করেছেন বলে তদন্তে পাওয়া গেছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদন অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'সরকারি টাকা মেরে হজম করার উপায় নেই। তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। চাকরি যাবে, গ্রেফতার হবে এবং টাকাও ফেরত দিতে হবে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।'
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হকের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।এর আগে ২০২২-২০২৩ সালে দুর্গাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা পদে দায়িত্ব পালনকালে একইভাবে অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করায় তিরস্কার দণ্ড দিয়ে মোহনগঞ্জ উপজেলায় বদলি করা হয়।
রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
২২ আগস্ট, ২০২৫, 11:14 PM

ভিক্ষুক পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন প্রকল্পের ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়েছেন নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক। এছাড়াও অফিস স্টাফ ও উপজেলার অন্যান্য কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও নানা অজুহাতে কয়েক লাখ টাকা ধার নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত মোজাম্মেল হক গত ২৮ জুলাই থেকে পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে। এরআগে সমাজসেবা কার্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে থাকা দুস্থদের ঋণ কার্যক্রম ও বিভিন্ন ভাতাদির ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা অবৈধভাবে উত্তোলন করে হাতিয়ে নেন তিনি। ঘটনাটি জানাজানি হলে এ বিষয়ে তদন্তের উদ্যোগ নেন জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা।
দুর্গাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাসুল তালুকদারকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তদন্তে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি ধরা পড়েছে। ইতোমধ্যে তিনি এ বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জেলা কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক শাহ আলম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মোহনগঞ্জ সমাজসেবা কার্যালয় ও তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তির লক্ষ ৭৫ হাজার, মাতৃকেন্দ্রের ঋণ কর্মসূচির ৫ লক্ষ ১৩ হাজার, ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের ১ লক্ষ ৪০ হাজার ও ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমের ২২ লক্ষ ৪৭ হাজারসহ মোট ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা একজন কর্মচারীর সই জাল করে উত্তোলন করে নিয়ে যান। এছাড়াও অফিস স্টাফদের কাছ থেকে হাওলাদ বাবদ ২ লক্ষ ও উপজেলার বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মায়ের অসুখসহ নানা অজুহাতে আরও কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, 'একজন কর্মকর্তা এমন হবে কখনো ভাবিনি। আমাদের সবার কাছ থেকে দুই লাখ টাকার বেশি নিয়েছেন মোজাম্মেল হক।'
অফিস সহকারী নিজামুল আজাদ বলেন, 'মোজাম্মেল স্যার গত ২৭ জুলাই অফিস করেছেন। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত আর অফিসে আসেননি। তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।'
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার একজন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা বলেন, 'একজন সমাজসেবা কর্মকর্তা পরিবারের কারও অসুস্থতার কথা বলে টাকা হাওলাদ চাইলে কে না দেবে বলেন। আমিও বেশ কয়েক হাজার টাকা দিয়েছি। পালিয়ে যাওয়ার পর অনেক কর্মকর্তাই বলছেন, তাদের কাছ থেকে একইভাবে টাকা হাওলাদ নিয়েছেন মোজাম্মেল। এর পরিমাণ কয়েক লাখ হবে। অনেকে আবার মান-সম্মানের ভয়ে বলতে চাইছেন না।'
২০২৪ সালের মে মাসে মোহনগঞ্জ উপজেলায় সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসবে যোগদান করেন মোজাম্মেল হক। এরপর থেকেই নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক শাহ আলম বলেন, 'বিষয়টি তদন্ত করা হয়েছে। মোজাম্মেল হক ৩৩ লক্ষ টাকার বেশি অবৈধভাবে অফিসের ব্যাংক হিসাব থেকে উত্তোলন করেছেন বলে তদন্তে পাওয়া গেছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদন অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'সরকারি টাকা মেরে হজম করার উপায় নেই। তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। চাকরি যাবে, গ্রেফতার হবে এবং টাকাও ফেরত দিতে হবে। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।'
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোজাম্মেল হকের ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।এর আগে ২০২২-২০২৩ সালে দুর্গাপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা পদে দায়িত্ব পালনকালে একইভাবে অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।। তবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করায় তিরস্কার দণ্ড দিয়ে মোহনগঞ্জ উপজেলায় বদলি করা হয়।