ঢাকা ১৫ অক্টোবর, ২০২৫
শিরোনামঃ
৩১ দফা বাস্তবায়নে নওগাঁয় রাতভর বিএনপির লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি কোম্পানীগঞ্জে এনটিআরসিএ কর্তৃক সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের বিটিএ'র সংবর্ধনা  উত্তর ফটিকছড়ি উপজেলায় অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন বাগেরহাটে এমপিও ভুক্ত শিক্ষকদের কর্মবিরতি ও  মানববন্ধন মাধবপুরে খাস জমি থেকে ড্রেজার মেশিন দ্বারা  মাঠি উত্তোলন, প্রশাসন নিরব বাগেরহাটে মহিদুল নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যাঃ আটক ২  বেলকুচিতে ৪৮টি গরুসহ খামার পেলেন আত্মসমর্পন করা ৬৭ চরমপন্থী শহীদ জিয়া স্মৃতি সংসদের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী টঙ্গী কলেজে লিফলেট বিতরণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাধা বাগেরহাটের পচা দিঘী থেকে মৃতদেহ উদ্ধার

গ্রামীণ ঐতিহ্য যাত্রাশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে

#
news image

একসময়ে গ্রামে-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় আয়োজন করা হতো গ্রামবাংলার জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপালার। যাত্রাপালা দেখার জন্য গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটে যেতেন সব বয়সের মানুষ। অথচ বর্তমান আধুনিক যুগে আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব, হাতের মুঠোয় বিনোদনের সহজলভ্যতা, অশ্লীল নৃত্য আর জুয়ার আবর্তে পড়ে ক্রমেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার এককালের বড় চিত্তবিনোদন শিল্প যাত্রাপালা।

একসময়ে প্রতি বছর শীত মৌসুমে গ্রামাঞ্চলে শুরু হতো যাত্রাপালা। স্কুল-কলেজের খেলার মাঠ, বাজার, নদীর পাড়, ধান কাটার পর জমিতে আয়োজন করা হতো গ্রামবাংলার জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপালার। অনেক সময় কোনো সংস্থার উদ্যোগে যাত্রাদল আনা হতো, তাদের সঙ্গে চুক্তিপত্রের মাধ্যমে। আবার কোন কোন এলাকার সৌখিন শিল্পীদের উদ্যোগে আয়োজন করা হতো বিভিন্ন ঐতিহাসিক বা সামাজিক যাত্রাপালার। তখন ঘণ কুয়াশাচ্ছন্ন প্রকৃতিতে সন্ধ্যা নামলেই লাউড স্পিকারে ভেসে আসত- ‘হৈ হৈ কান্ড আর রৈ রৈ ব্যাপার…অদ্য রজনীর বিশেষ আকর্ষণ…’। এখন আর যাত্রাপালা দেখার জন্য দর্শকরা রাতভর বিনিদ্র থাকার প্রস্তুতি নিয়ে আর অপেক্ষায় প্রহর গোণেন না। শীতে মেলা বসবে, যাত্রাপালা আসবে-সেই প্রতীক্ষায় থাকে না গ্রামের মানুষ। যাত্রামঞ্চ থেকে আজ হারিয়ে গেছে, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, নাচ ঘরের কান্না, রহিম রূপবান, কমলার বনবাস, গুনাইবিবি, লাইলী-মজনু, কাজল-রেখা, প্রেমের সমাধি তীরে, মা হলো বন্দি, জীবন নদীর তীরে, অনুসন্ধান, মা-মাটি-মানুষসহ অসংখ্য জনপ্রিয় ঐতিহাসিক অথবা সামাজিক যাত্রাপালা। এখন যাত্রা মানেই কদর্য নৃত্য-জুয়া-হাউজির ধুন্ধমার কারবার। এখন যাত্রার কথা মনে হলে পুরান, ইতিহাস, মহর্ষী ব্যক্তিত্ব বা লোকজ সাহিত্যে বিখ্যাত চরিত্রের কথা আর মানস পটে ধরা দেয় না, উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে স্বল্প পোশাকে কথিত প্রিন্সেসদের উদ্বাহু নাচ-গানের অশালীন দৃশ্য। ফলে বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে থাকা যাত্রাপালা এখন বিলুপ্তির পথে।

নেত্রকোনা জেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও যাত্রা শিল্পীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমাদের ভাটি অঞ্চল যাত্রাপালার জন্য বিখ্যাত। বর্তমানে আমাদের এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক গ্রামেই যাত্রাপালার রীতি থাকলেও এখন তা তূলনামূলক ভাবে খুব কমই চোখে পড়ে। তবে আমাদের এলাকায় এখনও দুর্গাপূজা ও শীতের সময় যাত্রাপালার আয়োজন হয়ে থাকে। বাড়ির আঙিনা, ফাঁকা মাঠ কিংবা বালুর চরের কোনো ফাঁকা জায়গায় এর আয়োজন করা হয়। আর এই যাত্রাপালা দেখতে ভিড় জমায় শিশু, কিশোর, জোয়ান, বৃদ্ধ, পুরুষ-মহিলা সবাই। ট্রাজেডি কাহিনি হলে কেউবা কান্নায় ফেটে পড়ে। আর কমেডি হলে হাসির জোয়ার বয়ে যায় সবার মাঝে। এখানকার মানুষের মাঝে যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, ভালোবাসা এবং সম্পর্কবোধ রয়েছে, তা বুঝা যায় একত্রিত হয়ে যাত্রাপালা দেখার মাঝে দিয়ে।

একসময়ের পেশাদার যাত্রাশিল্পী অমল চক্রবর্তী বলেন, আমি দীর্ঘ ৪০ বছর যাত্রাপালার দলের সাথে কাজ করেছি। যাত্রা যেন আমার হৃদয়ের একটি স্পন্দন। এখনও শীতের সময়ে আমার এলাকার তরুণ-যুবকসহ নানা বয়সী লোকদের নিয়ে যাত্রাপালার আয়োজন করি। এলাকার বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ সবাই একসাথে যাত্রাপালার আনন্দ উপভোগ করি। তবে আগের তুলনায় এখন যাত্রাপালা খুব কম হয়।

তিনি আরও বলেন, গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এই যাত্রাপালা যেন চিরতরে হারিয়ে না যায় তাই প্রতি শীতে আমার নির্দেশনায় অন্ততঃ দুইটি যাত্রাপালার আয়োজন করে থাকে এখানকার মানুষ। সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চার মধ্যে দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের বারহাট্টা এলাকার মানুষ।

বারহাট্টা উপজেলা সদরের গড়মা গ্রামের মাতৃ-মিলন সংঘের অভিনেতা ও আয়োজকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমাদের এলাকায় প্রতিষ্ঠিত কালী মন্দিরের বাৎসরিক কালী পূজায় প্রতি বছর এলাকার সৌখিন যাত্রা শিল্পীদের নিয়ে দুইটা যাত্রাপালার আয়োজন করি। আমাদের আয়োজিত যাত্রাপালার মঞ্চে প্রখ্যাত যাত্রাভিনেতা অমল চক্রবর্তী, রাখাল বিশ্বাস, চন্দন সরকারের মত উচ্চ পর্যায়ের অভিনেতাদের সাথে অভিনয় করার সুযোগ হয়েছে।

তারা আরও বলেন, আমাদের মঞ্চে নাচ ঘরের কান্নামা মাটি মানুষবাবা কেন চাকরঅনুসন্ধান- এর মত জনপ্রিয় যাত্রাপালা মঞ্চস্থ হয়েছে। আমাদের এ আয়োজনে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষসহ স্থানীয় নেতৃ বর্গের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রশাসনিক অনুমোদনের জটিলতায় বিগত কয়েক বছর ধরে আমাদের এ আয়োজন বন্ধ রাখা হয়েছে। এ পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে আমরা পূণরায় যাত্রাপালার আয়োজন করতে চাই।

কথা হয় বাউসী এলাকার সৌখিন যাত্রাদল শাপলা নাট্য সংঘের খলনায়ক চরিত্রের অভিনেতা ঝুলন রায়, কমেডি চরিত্রের অভিনেতা দুলু রায়, ঝন্টু রায়, ক্বারী মিয়ার সাথে তারা জানান, আগে প্রতি দুর্গা পূজা ও শীতে শাপলা নাট্য সংঘের উদ্যোগে আমদের এলাকায় যাত্রাপালার আয়োজন করতাম। আমাদের নাট্য সংঘের অনেক অভিনেতাই এখন প্রয়াত হয়েছেন এবং অনেকেই বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। তাই এখন আর যাত্রাপালার আয়োজন করা সম্ভব হয় না। এখন এলাকার নতুন প্রজন্ম মাঝে মধ্যে আয়োজন করে।

তারা আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশের যাত্রাশিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। একে বাঁচাতে হলে প্রথমত এগিয়ে আসতে হবে যাত্রাসংশ্লিষ্টদের।

যাত্রামোদি দর্শক বারহাট্টা উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মানিক আজাদ বলেন, যাত্রাপালার ঐতিহ্য অত্যন্ত প্রাচীন। অথচ এই যাত্রা শিল্পের অবক্ষয় এবং বিলুপ্তির পথে ধাবিত হওয়ার মূল কারণ অসাধু যাত্রাপালা ব্যবসায়ীদের ‘প্রিন্সেস’ আমদানি আর জুয়া-হাউজি চালু। এই শব্দগুলো আগে যাত্রা দলে ছিল না। ৯০ দশকের পর এই অশ্লীলতার সূচনা হয়েছিল মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের হাত ধরে। তাদের কাছেই চিরায়ত যাত্রাপালার মৃত্যু ঘটে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যাত্রাপাল প্রায় বিলুপ্তির পথে তাই আমাদের মত যাত্রামোদি দর্শকদের আজ বড়ই দুর্দিন। গ্রামবাংলার লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্য হারালে হারাবে সমাজের আত্মপরিচয়। প্রযুক্তি আমাদের হাতে আধুনিকতা এনে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু মাটির টান ও মানুষের মুখের গল্পগুলো যদি হারিয়ে যায়, তবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হবে শেকড়হীন। তাই, এখনই সময় গ্রামীণ ঐতিহ্য যাত্রাপালাকে নতুন করে মূল্যায়নের।

রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি :

২০ আগস্ট, ২০২৫,  12:21 AM

news image

একসময়ে গ্রামে-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় আয়োজন করা হতো গ্রামবাংলার জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপালার। যাত্রাপালা দেখার জন্য গ্রাম থেকে গ্রামে ছুটে যেতেন সব বয়সের মানুষ। অথচ বর্তমান আধুনিক যুগে আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব, হাতের মুঠোয় বিনোদনের সহজলভ্যতা, অশ্লীল নৃত্য আর জুয়ার আবর্তে পড়ে ক্রমেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার এককালের বড় চিত্তবিনোদন শিল্প যাত্রাপালা।

একসময়ে প্রতি বছর শীত মৌসুমে গ্রামাঞ্চলে শুরু হতো যাত্রাপালা। স্কুল-কলেজের খেলার মাঠ, বাজার, নদীর পাড়, ধান কাটার পর জমিতে আয়োজন করা হতো গ্রামবাংলার জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপালার। অনেক সময় কোনো সংস্থার উদ্যোগে যাত্রাদল আনা হতো, তাদের সঙ্গে চুক্তিপত্রের মাধ্যমে। আবার কোন কোন এলাকার সৌখিন শিল্পীদের উদ্যোগে আয়োজন করা হতো বিভিন্ন ঐতিহাসিক বা সামাজিক যাত্রাপালার। তখন ঘণ কুয়াশাচ্ছন্ন প্রকৃতিতে সন্ধ্যা নামলেই লাউড স্পিকারে ভেসে আসত- ‘হৈ হৈ কান্ড আর রৈ রৈ ব্যাপার…অদ্য রজনীর বিশেষ আকর্ষণ…’। এখন আর যাত্রাপালা দেখার জন্য দর্শকরা রাতভর বিনিদ্র থাকার প্রস্তুতি নিয়ে আর অপেক্ষায় প্রহর গোণেন না। শীতে মেলা বসবে, যাত্রাপালা আসবে-সেই প্রতীক্ষায় থাকে না গ্রামের মানুষ। যাত্রামঞ্চ থেকে আজ হারিয়ে গেছে, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, নাচ ঘরের কান্না, রহিম রূপবান, কমলার বনবাস, গুনাইবিবি, লাইলী-মজনু, কাজল-রেখা, প্রেমের সমাধি তীরে, মা হলো বন্দি, জীবন নদীর তীরে, অনুসন্ধান, মা-মাটি-মানুষসহ অসংখ্য জনপ্রিয় ঐতিহাসিক অথবা সামাজিক যাত্রাপালা। এখন যাত্রা মানেই কদর্য নৃত্য-জুয়া-হাউজির ধুন্ধমার কারবার। এখন যাত্রার কথা মনে হলে পুরান, ইতিহাস, মহর্ষী ব্যক্তিত্ব বা লোকজ সাহিত্যে বিখ্যাত চরিত্রের কথা আর মানস পটে ধরা দেয় না, উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে স্বল্প পোশাকে কথিত প্রিন্সেসদের উদ্বাহু নাচ-গানের অশালীন দৃশ্য। ফলে বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে থাকা যাত্রাপালা এখন বিলুপ্তির পথে।

নেত্রকোনা জেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও যাত্রা শিল্পীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমাদের ভাটি অঞ্চল যাত্রাপালার জন্য বিখ্যাত। বর্তমানে আমাদের এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক গ্রামেই যাত্রাপালার রীতি থাকলেও এখন তা তূলনামূলক ভাবে খুব কমই চোখে পড়ে। তবে আমাদের এলাকায় এখনও দুর্গাপূজা ও শীতের সময় যাত্রাপালার আয়োজন হয়ে থাকে। বাড়ির আঙিনা, ফাঁকা মাঠ কিংবা বালুর চরের কোনো ফাঁকা জায়গায় এর আয়োজন করা হয়। আর এই যাত্রাপালা দেখতে ভিড় জমায় শিশু, কিশোর, জোয়ান, বৃদ্ধ, পুরুষ-মহিলা সবাই। ট্রাজেডি কাহিনি হলে কেউবা কান্নায় ফেটে পড়ে। আর কমেডি হলে হাসির জোয়ার বয়ে যায় সবার মাঝে। এখানকার মানুষের মাঝে যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য, ভালোবাসা এবং সম্পর্কবোধ রয়েছে, তা বুঝা যায় একত্রিত হয়ে যাত্রাপালা দেখার মাঝে দিয়ে।

একসময়ের পেশাদার যাত্রাশিল্পী অমল চক্রবর্তী বলেন, আমি দীর্ঘ ৪০ বছর যাত্রাপালার দলের সাথে কাজ করেছি। যাত্রা যেন আমার হৃদয়ের একটি স্পন্দন। এখনও শীতের সময়ে আমার এলাকার তরুণ-যুবকসহ নানা বয়সী লোকদের নিয়ে যাত্রাপালার আয়োজন করি। এলাকার বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ সবাই একসাথে যাত্রাপালার আনন্দ উপভোগ করি। তবে আগের তুলনায় এখন যাত্রাপালা খুব কম হয়।

তিনি আরও বলেন, গ্রামবাংলার ঐতিহ্য এই যাত্রাপালা যেন চিরতরে হারিয়ে না যায় তাই প্রতি শীতে আমার নির্দেশনায় অন্ততঃ দুইটি যাত্রাপালার আয়োজন করে থাকে এখানকার মানুষ। সুস্থ ধারার সংস্কৃতি চর্চার মধ্যে দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের বারহাট্টা এলাকার মানুষ।

বারহাট্টা উপজেলা সদরের গড়মা গ্রামের মাতৃ-মিলন সংঘের অভিনেতা ও আয়োজকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমাদের এলাকায় প্রতিষ্ঠিত কালী মন্দিরের বাৎসরিক কালী পূজায় প্রতি বছর এলাকার সৌখিন যাত্রা শিল্পীদের নিয়ে দুইটা যাত্রাপালার আয়োজন করি। আমাদের আয়োজিত যাত্রাপালার মঞ্চে প্রখ্যাত যাত্রাভিনেতা অমল চক্রবর্তী, রাখাল বিশ্বাস, চন্দন সরকারের মত উচ্চ পর্যায়ের অভিনেতাদের সাথে অভিনয় করার সুযোগ হয়েছে।

তারা আরও বলেন, আমাদের মঞ্চে নাচ ঘরের কান্নামা মাটি মানুষবাবা কেন চাকরঅনুসন্ধান- এর মত জনপ্রিয় যাত্রাপালা মঞ্চস্থ হয়েছে। আমাদের এ আয়োজনে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষসহ স্থানীয় নেতৃ বর্গের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রশাসনিক অনুমোদনের জটিলতায় বিগত কয়েক বছর ধরে আমাদের এ আয়োজন বন্ধ রাখা হয়েছে। এ পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে আমরা পূণরায় যাত্রাপালার আয়োজন করতে চাই।

কথা হয় বাউসী এলাকার সৌখিন যাত্রাদল শাপলা নাট্য সংঘের খলনায়ক চরিত্রের অভিনেতা ঝুলন রায়, কমেডি চরিত্রের অভিনেতা দুলু রায়, ঝন্টু রায়, ক্বারী মিয়ার সাথে তারা জানান, আগে প্রতি দুর্গা পূজা ও শীতে শাপলা নাট্য সংঘের উদ্যোগে আমদের এলাকায় যাত্রাপালার আয়োজন করতাম। আমাদের নাট্য সংঘের অনেক অভিনেতাই এখন প্রয়াত হয়েছেন এবং অনেকেই বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। তাই এখন আর যাত্রাপালার আয়োজন করা সম্ভব হয় না। এখন এলাকার নতুন প্রজন্ম মাঝে মধ্যে আয়োজন করে।

তারা আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশের যাত্রাশিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। একে বাঁচাতে হলে প্রথমত এগিয়ে আসতে হবে যাত্রাসংশ্লিষ্টদের।

যাত্রামোদি দর্শক বারহাট্টা উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মানিক আজাদ বলেন, যাত্রাপালার ঐতিহ্য অত্যন্ত প্রাচীন। অথচ এই যাত্রা শিল্পের অবক্ষয় এবং বিলুপ্তির পথে ধাবিত হওয়ার মূল কারণ অসাধু যাত্রাপালা ব্যবসায়ীদের ‘প্রিন্সেস’ আমদানি আর জুয়া-হাউজি চালু। এই শব্দগুলো আগে যাত্রা দলে ছিল না। ৯০ দশকের পর এই অশ্লীলতার সূচনা হয়েছিল মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের হাত ধরে। তাদের কাছেই চিরায়ত যাত্রাপালার মৃত্যু ঘটে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যাত্রাপাল প্রায় বিলুপ্তির পথে তাই আমাদের মত যাত্রামোদি দর্শকদের আজ বড়ই দুর্দিন। গ্রামবাংলার লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্য হারালে হারাবে সমাজের আত্মপরিচয়। প্রযুক্তি আমাদের হাতে আধুনিকতা এনে দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু মাটির টান ও মানুষের মুখের গল্পগুলো যদি হারিয়ে যায়, তবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হবে শেকড়হীন। তাই, এখনই সময় গ্রামীণ ঐতিহ্য যাত্রাপালাকে নতুন করে মূল্যায়নের।