ঢাকা ০৪ জুন, ২০২৫

গাজীপুর পাসপোর্ট সেবা দালালের দাপট,  সেবার নামে ভোগান্তি

#
news image

গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে দালালদের সক্রিয় উপস্থিতি ও কর্তৃত্বের ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ সেবাগ্রহীতারা। পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তিদের অভিযোগ, নিজেরা আবেদন করতে গেলে নানা অজুহাতে হয়রানির শিকার হতে হয়। কিন্তু দালালের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ দিলে কয়েক মিনিটেই সব কাজ শেষ হয়ে যাচ্ছে।

বিদেশে চাকরি করতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পাসপোর্ট করতে আসা কাপাসিয়া উপজেলার রাওনাথ গ্রামের যুবক মো. আরিফুল ইসলাম বলেন “সকাল ৯টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি আঙুলের ছাপ আর ছবি তোলার জন্য। সেই লাইন যেন আর শেষ হয় না। সাড়ে চার ঘণ্টা পর বেলা দেড়টায় কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছি। অথচ যারা দালালকে টাকা দিয়েছে তারা এসেই ১০–১৫ মিনিটের মধ্যে কাজ শেষ করে চলে যাচ্ছে।”

টঙ্গীর পাগার এলাকার রিয়াদ মিয়াও একই অভিজ্ঞতার কথা জানান।, “বুধবার সকাল থেকে দেড়টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ফাইল জমা দিতে পারিনি। বৃহস্পতিবার এসে আবার দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে কাজ শেষ করি। একজন এক হাজার টাকা চেয়েছিল দ্রুত কাজ করিয়ে দেওয়ার জন্য, কিন্তু আমি দেইনি।”

সরেজমিনে দেখা যায়, জয়দেবপুর-ঢাকা সড়কের পালের মাঠ এলাকায় অবস্থিত নতুন পাসপোর্ট কার্যালয়ের সামনের সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছে প্রায় ৩০–৩৫টি কম্পিউটার দোকান। এসব দোকানের মাধ্যমে চলছে দালাল ও অফিসের অসাধু কিছু কর্মচারি ও আনসানদের সরাসরি তৎপরতা। সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব দোকানে বসে দালালরা আবেদনপত্র পূরণ, ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া এবং এমনকি জন্মতারিখ পরিবর্তনের মতো কাজ করিয়ে দিচ্ছেন অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে।

কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকার ফজলে হাসান নামের এক যুবক জানান, বিদেশে যাওয়ার জন্য তাঁর বয়স বাড়াতে হবে। সাধারণভাবে এই কাজ করতে কয়েক মাস সময় লাগলেও দালালদের মাধ্যমে মাত্র সাত দিনেই তা সম্ভব। এক দালাল মাসুম বলেন, “সামনের বিসমিল্লাহ কম্পিউটারে গিয়ে আমার কথা বলেন, কাজ হয়ে যাবে।” ওই দোকানে গেলে একজন কর্মী জানান, ভোটার আইডি ও পাসপোর্টে বয়স বাড়াতে ৩২ হাজার টাকা লাগবে, আরও ২ হাজার টাকা দিলে ১৫ দিনের মধ্যেই পাসপোর্ট হাতে পাবেন।

এ বিষয়ে গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের উপপরিচালক নাসরিন পারভিন বলেন, “গত কয়েক দিন ধরে সেবাগ্রহীতাদের চাপ অনেক বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা সময় লাগতে পারে, তবে ২–৩ ঘণ্টার বেশি লাগার কথা নয়। দালালদের দৌরাত্ম্য আগে থাকতে পারে, তবে আমি এখানে আসার পর কোনো অবস্থাতেই দালালদের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না।”

ভুক্তভোগীরা বলছেন, পাসপোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সেবা ও  নাগরিক অধিকার । সেখানে দালালদের প্রভাব সরকারি সেবাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এখানে দালালদের দাপট নাগরিকদের হয়রানি ও দুর্নীতির জন্ম দিচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে সাধারণ মানুষের আস্থা হারাবে সেবা প্রতিষ্ঠানটি। এই সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি ও পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিসহ পাসপোর্ট অফিসে চরম ভোগান্তি সমাধানে কঠোর হতে হবে প্রশাসনকে জানিয়েছেন ভোক্তভোগিরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি ঃ

২০ মে, ২০২৫,  5:32 AM

news image

গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ে দালালদের সক্রিয় উপস্থিতি ও কর্তৃত্বের ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ সেবাগ্রহীতারা। পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তিদের অভিযোগ, নিজেরা আবেদন করতে গেলে নানা অজুহাতে হয়রানির শিকার হতে হয়। কিন্তু দালালের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ দিলে কয়েক মিনিটেই সব কাজ শেষ হয়ে যাচ্ছে।

বিদেশে চাকরি করতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পাসপোর্ট করতে আসা কাপাসিয়া উপজেলার রাওনাথ গ্রামের যুবক মো. আরিফুল ইসলাম বলেন “সকাল ৯টায় এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি আঙুলের ছাপ আর ছবি তোলার জন্য। সেই লাইন যেন আর শেষ হয় না। সাড়ে চার ঘণ্টা পর বেলা দেড়টায় কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরছি। অথচ যারা দালালকে টাকা দিয়েছে তারা এসেই ১০–১৫ মিনিটের মধ্যে কাজ শেষ করে চলে যাচ্ছে।”

টঙ্গীর পাগার এলাকার রিয়াদ মিয়াও একই অভিজ্ঞতার কথা জানান।, “বুধবার সকাল থেকে দেড়টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও ফাইল জমা দিতে পারিনি। বৃহস্পতিবার এসে আবার দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে কাজ শেষ করি। একজন এক হাজার টাকা চেয়েছিল দ্রুত কাজ করিয়ে দেওয়ার জন্য, কিন্তু আমি দেইনি।”

সরেজমিনে দেখা যায়, জয়দেবপুর-ঢাকা সড়কের পালের মাঠ এলাকায় অবস্থিত নতুন পাসপোর্ট কার্যালয়ের সামনের সড়কের দুই পাশে গড়ে উঠেছে প্রায় ৩০–৩৫টি কম্পিউটার দোকান। এসব দোকানের মাধ্যমে চলছে দালাল ও অফিসের অসাধু কিছু কর্মচারি ও আনসানদের সরাসরি তৎপরতা। সরেজমিনে দেখা গেছে, এসব দোকানে বসে দালালরা আবেদনপত্র পূরণ, ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া এবং এমনকি জন্মতারিখ পরিবর্তনের মতো কাজ করিয়ে দিচ্ছেন অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে।

কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকার ফজলে হাসান নামের এক যুবক জানান, বিদেশে যাওয়ার জন্য তাঁর বয়স বাড়াতে হবে। সাধারণভাবে এই কাজ করতে কয়েক মাস সময় লাগলেও দালালদের মাধ্যমে মাত্র সাত দিনেই তা সম্ভব। এক দালাল মাসুম বলেন, “সামনের বিসমিল্লাহ কম্পিউটারে গিয়ে আমার কথা বলেন, কাজ হয়ে যাবে।” ওই দোকানে গেলে একজন কর্মী জানান, ভোটার আইডি ও পাসপোর্টে বয়স বাড়াতে ৩২ হাজার টাকা লাগবে, আরও ২ হাজার টাকা দিলে ১৫ দিনের মধ্যেই পাসপোর্ট হাতে পাবেন।

এ বিষয়ে গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের উপপরিচালক নাসরিন পারভিন বলেন, “গত কয়েক দিন ধরে সেবাগ্রহীতাদের চাপ অনেক বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা সময় লাগতে পারে, তবে ২–৩ ঘণ্টার বেশি লাগার কথা নয়। দালালদের দৌরাত্ম্য আগে থাকতে পারে, তবে আমি এখানে আসার পর কোনো অবস্থাতেই দালালদের ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না।”

ভুক্তভোগীরা বলছেন, পাসপোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সেবা ও  নাগরিক অধিকার । সেখানে দালালদের প্রভাব সরকারি সেবাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এখানে দালালদের দাপট নাগরিকদের হয়রানি ও দুর্নীতির জন্ম দিচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে সাধারণ মানুষের আস্থা হারাবে সেবা প্রতিষ্ঠানটি। এই সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি ও পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিসহ পাসপোর্ট অফিসে চরম ভোগান্তি সমাধানে কঠোর হতে হবে প্রশাসনকে জানিয়েছেন ভোক্তভোগিরা।