নেত্রকোনা শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ
জেলা প্রতিনিধি
১৬ আগস্ট, ২০২৪, 9:52 PM
নেত্রকোনা শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ
নেত্রকোনা শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ
রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি;
শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবি পূরণ না করার প্রেক্ষিতে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করেছেন নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম কবীর।
রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর রবিবার সন্ধ্যায় পদত্যাগ পত্রটি পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
পদত্যাগ পত্র পাঠানোর পর রাত পৌনে ১১টার দিকে উপাচার্য গোলাম কবীর মুঠোফোনে সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ, নিজস্ব ক্যাম্পাস, হোস্টেল স্থাপনসহ ১১ দফা দাবি জানিয়ে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে ৩০তম সিন্ডিকেট সভা ডেকে তাদের একটি দাবি (রাজনীতি মুক্ত) পূরণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবিসমূহ রাষ্ট্রীয় নির্বাহী আদেশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আদেশসহ সময় সাপেক্ষ হওয়ায় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমৃদ্ধি কামনা করে স্বীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
ট্রেজারারের পদত্যাগ করার বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য ড. গোলাম কবীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার (কোষাধ্যক্ষ) মহোদয়ও পদত্যাগ করবেন বলে জেনেছি। বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করায় আজ পদত্যাগ করতে পারেনি বলে জেনেছি।
তিনি আরও বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে আমি আমার অভিজ্ঞতা, সততা, নৈতিকতা, দক্ষতা ও আইন মেনে কীভাবে একটি মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা যায়, সেই লক্ষ্য নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে গেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়ন অব্যাহত থাকুক- এই কামনা করছি।'
পদত্যাগপত্রে উপাচার্য গোলাম কবীর উল্লেখ করেছেন- 'আমি ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ৪ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগদান করি। যোগদানের পর থেকে অদ্যাবধি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত সমৃদ্ধি ও বিকাশে সচেষ্ট থেকেছি। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষিতে নিম্ন স্বাক্ষরকারীর নিকট শিক্ষার্থীদের দাবিনামা উত্থাপিত হয় যা সিন্ডেকেট আলোচনা সাপেক্ষে সমাধানযোগ্য দাবিসমূহ এরইমধ্যে নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের যে সমস্ত দাবি রাষ্ট্রীয় নির্বাহী আদেশ ব্যতীত নিষ্পত্তি করা সম্ভব নয় সেগুলোতে আপনার সহমর্মিতা কামনা করছি। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহ নির্ধারিত সময়ে নিষ্পত্তি ও নিশ্চয়তা প্রদানে আমি অপারগ, বিধায় উপাচার্যের (ভিসি) পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলাম।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন নীতি পাস হয়। পরে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রফিক উল্লাহ খান উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। উপাচার্যের মেয়াদ কাল শেষ হওয়ায় গত ১ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার সুব্রত কুমার আদিত্য ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ৪ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম কবীর উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন।
সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রতিষ্ঠার পরপরই একনেকে ২ হাজার ৬৩৭ কোটি ৪০ লাখ ৯৯ হাজার টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। পৌর শহরের রাজুর বাজার এলাকায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) ভবনের একটি তিনতলা ভবনে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। পরে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি ও পরের বছর থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এই চার বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়।
সদর উপজেলার রামপুর, সাহিলপুর, গোবিন্দপুর, কান্দুলিয়া ও রায়দুমরুহি মৌজায় ৪৯৮ দশমিক ৪৫ একর জায়গায় পূর্ণাঙ্গভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হবে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি অনুষদের অধীন ৪টি বিভাগের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫১৩। শিক্ষক সংখ্যা ১৯। কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ৮৬ জন।
কিন্তু প্রতিষ্ঠার ছয় বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আবাসন, একাডেমিক ভবন, গ্রন্থাগার, গবেষণাগার, ক্যানটিন, প্রয়োজনীয় শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন দেখিয়ে বৈধ করে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি
১৬ আগস্ট, ২০২৪, 9:52 PM
নেত্রকোনা শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ
রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি;
শিক্ষার্থীদের ১১ দফা দাবি পূরণ না করার প্রেক্ষিতে স্বপদ থেকে পদত্যাগ করেছেন নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম কবীর।
রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি বরাবর রবিবার সন্ধ্যায় পদত্যাগ পত্রটি পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
পদত্যাগ পত্র পাঠানোর পর রাত পৌনে ১১টার দিকে উপাচার্য গোলাম কবীর মুঠোফোনে সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ, নিজস্ব ক্যাম্পাস, হোস্টেল স্থাপনসহ ১১ দফা দাবি জানিয়ে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে ৩০তম সিন্ডিকেট সভা ডেকে তাদের একটি দাবি (রাজনীতি মুক্ত) পূরণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবিসমূহ রাষ্ট্রীয় নির্বাহী আদেশ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আদেশসহ সময় সাপেক্ষ হওয়ায় আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমৃদ্ধি কামনা করে স্বীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
ট্রেজারারের পদত্যাগ করার বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য ড. গোলাম কবীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার (কোষাধ্যক্ষ) মহোদয়ও পদত্যাগ করবেন বলে জেনেছি। বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করায় আজ পদত্যাগ করতে পারেনি বলে জেনেছি।
তিনি আরও বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে আমি আমার অভিজ্ঞতা, সততা, নৈতিকতা, দক্ষতা ও আইন মেনে কীভাবে একটি মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলা যায়, সেই লক্ষ্য নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে গেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়ন অব্যাহত থাকুক- এই কামনা করছি।'
পদত্যাগপত্রে উপাচার্য গোলাম কবীর উল্লেখ করেছেন- 'আমি ২০২২ সালের ১ সেপ্টেম্বর নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ৪ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগদান করি। যোগদানের পর থেকে অদ্যাবধি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত সমৃদ্ধি ও বিকাশে সচেষ্ট থেকেছি। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষিতে নিম্ন স্বাক্ষরকারীর নিকট শিক্ষার্থীদের দাবিনামা উত্থাপিত হয় যা সিন্ডেকেট আলোচনা সাপেক্ষে সমাধানযোগ্য দাবিসমূহ এরইমধ্যে নিষ্পত্তির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের যে সমস্ত দাবি রাষ্ট্রীয় নির্বাহী আদেশ ব্যতীত নিষ্পত্তি করা সম্ভব নয় সেগুলোতে আপনার সহমর্মিতা কামনা করছি। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের দাবিসমূহ নির্ধারিত সময়ে নিষ্পত্তি ও নিশ্চয়তা প্রদানে আমি অপারগ, বিধায় উপাচার্যের (ভিসি) পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলাম।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৩০ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন নীতি পাস হয়। পরে ২০১৮ সালের ১ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রফিক উল্লাহ খান উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। উপাচার্যের মেয়াদ কাল শেষ হওয়ায় গত ১ আগস্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার সুব্রত কুমার আদিত্য ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ৪ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম কবীর উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেন।
সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রতিষ্ঠার পরপরই একনেকে ২ হাজার ৬৩৭ কোটি ৪০ লাখ ৯৯ হাজার টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। পৌর শহরের রাজুর বাজার এলাকায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) ভবনের একটি তিনতলা ভবনে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। পরে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি ও পরের বছর থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এই চার বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়।
সদর উপজেলার রামপুর, সাহিলপুর, গোবিন্দপুর, কান্দুলিয়া ও রায়দুমরুহি মৌজায় ৪৯৮ দশমিক ৪৫ একর জায়গায় পূর্ণাঙ্গভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপিত হবে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনটি অনুষদের অধীন ৪টি বিভাগের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫১৩। শিক্ষক সংখ্যা ১৯। কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ৮৬ জন।
কিন্তু প্রতিষ্ঠার ছয় বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আবাসন, একাডেমিক ভবন, গ্রন্থাগার, গবেষণাগার, ক্যানটিন, প্রয়োজনীয় শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন দেখিয়ে বৈধ করে নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি