ঢাকা ০৪ জুন, ২০২৫

উখিয়ার করইবনিয়া সীমান্তের সোর্স নামধারী ৩ মাদক কারবারি অধরা

#
news image

কক্সবাজারের উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়নের করইবনিয়া সীমান্ত এখন ইয়াবা কারবারিদের নিরাপদ দুর্গে পরিণত হয়েছে। বিজিবির সোর্সের পরিচয়কে ঢাল বানিয়ে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে ওঠা তিনজন চিহ্নিত মাদক কারবারি প্রশাসনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। সম্প্রতি এক শীর্ষ বিজিবি কর্মকর্তার নানা অনিয়ম ও কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে চার মাসের মাথায় হঠাৎ বদলি হওয়ার ঘটনা পুরো জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এর পর থেকেই স্থানীয়রা সাহস করে এই তিন মাদক কারবারির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

ওই কর্মকর্তার আশীর্বাদে সীমান্তে প্রকাশ্যে ইয়াবা পাচারসহ একের পর এক অপকর্ম চালালেও আজও তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, যা স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের আগুন আরও উসকে দিয়েছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অভিযুক্তরা হলেন, করইবনিয়া এলাকার রশিদ আহমদ ইউনুস, মৃত শামসুল আলম ছেলে ৩৪ বিজিবির কমান্ডারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে জনশ্রুতি থাকা ফারুক, মোহাম্মদ হানিফের ছেলে মিজান।

সূত্র জানান, মুষ্টিমেয় টাকা ছড়িয়ে বিজিবির সোর্সের ট্যাগ গলায় ঝুলিয়ে নিয়েছে করইবনিয়ার এই তিন ইয়াবা কারবারি। এ পরিচয়কে ঢাল বানিয়ে এলাকায় প্রকাশ্যে দাপট দেখাচ্ছে তারা। গ্রামবাসীদের চোখ রাঙানো, প্রতিপক্ষকে হয়রানি করা, এমনকি নিরীহ মানুষকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানো- সবই যেন তাদের নিত্যদিনের খেলা। টাকার লোভে কিছু অসাধু কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় এই ‘সোর্স’ চক্র সীমান্ত এলাকায় মাদকের গডফাদারে রূপ নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নীরবতায় তারা এখন সীমান্তের অঘোষিত শাসক।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এক সময় এই তিনজনের নুন আনতে পানতা পুরাতেন, তারাই এখন একের পর এক বিল্ডিং নির্মাণ করছেন। ডাম্পার, মোটরসাইকেল, টমটমসহ নামে–বেনামে গড়ে তুলেছেন অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অথচ আয়ের বৈধ কোনো উৎস নেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিজিবির সোর্স পরিচয় ব্যবহার করে এরা সীমান্ত এলাকায় এক ধরনের ‘সিকিউরিটি শিল্ড’ গড়ে তুলেছে। কোনো অভিযানের খবর আগেভাগে পাচার হয়ে যায়। এভাবেই করইবনিয়া, গর্জনবনিয়া, আমতলী, আজুখাইয়া সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন গোপনে পাচার হয় লাখ লাখ ইয়াবা ট্যাবলেট। স্থানীয় বাজারেও চলমান ‘ডিল’গুলোতে একেকবারে পাঁচ থেকে দশ লাখ টাকার ইয়াবা কেনাবেচা হয় এদের নেতৃত্বে।

বিশ্লেষণে স্পষ্ট হয়েছে, করইবনিয়ার মাদক সাম্রাজ্যের মূল জ্বালানি হলো বিজিবির ভেতরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। সোর্সের তকমা গায়ে লাগিয়ে এই চক্র এমন দুর্ভেদ্য দেয়াল গড়ে তুলেছে, যেখানে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, প্রশাসনের সৎ সদস্যরাও চুপসে যান। মাদকবিরোধী অভিযান এখানে নিছক এক নাটক; আগে থেকেই সাজানো হয় মালিকবিহীন ইয়াবার ‘উদ্ধার নাটক’, আর অভিযুক্তদের তালিকায় দেওয়া হয় ‘পালাতক’ তকমা। সবকিছু- উদ্ধার, মামলা, মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট- এই চক্রের ইশারায় চলত বলে স্থানীয়দের মধ্যে প্রবল বিশ্বাস। মূলত, যারা অভিযানের নামে ছবি তুলত, তারাই ছিল সীমান্ত দিয়ে মাদক আনানোর মূল হোতা। ফলে করইবনিয়ার সীমান্ত আজ এক ভয়ঙ্কর মাদক করিডরে পরিণত হয়েছে, আর প্রশাসন রয়েছে নির্লিপ্ত দর্শকের ভূমিকায়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, করইবনিয়া, গর্জনবনিয়া, আমতলী ও আজুখাইয়া এলাকার সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন কোটি টাকার ইয়াবা পাচার হয়। ইউনুস, ফারুক ও মিজান এই রুট নিয়ন্ত্রণ করে। নিজেদের রক্ষাকবচ হিসেবে বিজিবির সোর্স পরিচয় ব্যবহার করায় প্রশাসনও নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় প্রবীণ মুরব্বি হাজী রশিদ আহমদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘করইবনিয়া আজ ইয়াবার দুর্গ হয়ে গেছে। যারা দু’বেলা ভাতের চিন্তায় ছিল, তারাই আজ কোটি টাকার মালিক। বিজিবি সোর্সের ট্যাগ লাগিয়ে এলাকার মানুষের মাথায় উঠে বসেছে। এদের শিকড় উপড়ে ফেলতে না পারলে ভবিষ্যতে এখানে কেউ নিরাপদ থাকবে না।’

রত্নাপালং ইউনিয়নের এক যুবনেতা বলেন, ‘আমরা বহুবার প্রশাসনকে বলেছি, এরা সোর্স না, ইয়াবা সিন্ডিকেটের মূল হোতা। কিন্তু বিজিবির কয়েকজন কর্মকর্তার সাপোর্ট থাকায় ওরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এখন বদলির পর সবাই সাহস করে কথা বলছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘তথাকথিত সোর্সের তালিকা একবার খতিয়ে দেখলেই আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। প্রশাসন চাইলে ২৪ ঘণ্টায় এই সিন্ডিকেট ধরা সম্ভব। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তারা অদৃশ্য কারণে নীরব।’

করইবনিয়ার এক প্রবীণ মুরুব্বি বলেন, ‘ইউনুসরা এখন যে সম্পদ গড়েছে, তা দেখলে মনে হয় ওরা যেন বংশপরম্পরায় রাজা ছিল। অথচ কয়দিন আগেও দিন আনে দিন খায় অবস্থা ছিল। এটা তো গাছের পাতা খেয়ে হয়নি।’

একজন স্থানীয় স্কুলশিক্ষক প্রশ্ন তোলেন, ‘কোথা থেকে এত টাকা এলো। বিজিবি-প্রশাসনের চোখের সামনে দিয়ে কিভাবে দিনে দিনে এতো সম্পদ গড়ে উঠলো? নাকি তাদের কেউ ‘বডিগার্ড’ হিসেবে পাশে আছে?’

অভিযুক্তরা দিব্যি প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে। বিজিবি ও পুলিশের মধ্যে কিছু অসৎ সদস্যদের পৃষ্ঠপোষকতায় এরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

তাদের দাবি, দ্রুত এই চক্রের বিরুদ্ধে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে অভিযান চালানো হোক এবং সোর্স ব্যবস্থার অপব্যবহার কঠোরভাবে দমন করা হোক। নতুবা সীমান্ত হয়ে উঠবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইয়াবার ট্রানজিট রুট।

উখিয়া প্রতিনিধিঃ

২৮ এপ্রিল, ২০২৫,  11:44 PM

news image

কক্সবাজারের উখিয়ার রত্নাপালং ইউনিয়নের করইবনিয়া সীমান্ত এখন ইয়াবা কারবারিদের নিরাপদ দুর্গে পরিণত হয়েছে। বিজিবির সোর্সের পরিচয়কে ঢাল বানিয়ে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে ওঠা তিনজন চিহ্নিত মাদক কারবারি প্রশাসনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। সম্প্রতি এক শীর্ষ বিজিবি কর্মকর্তার নানা অনিয়ম ও কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে চার মাসের মাথায় হঠাৎ বদলি হওয়ার ঘটনা পুরো জেলাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এর পর থেকেই স্থানীয়রা সাহস করে এই তিন মাদক কারবারির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

ওই কর্মকর্তার আশীর্বাদে সীমান্তে প্রকাশ্যে ইয়াবা পাচারসহ একের পর এক অপকর্ম চালালেও আজও তাদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, যা স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের আগুন আরও উসকে দিয়েছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অভিযুক্তরা হলেন, করইবনিয়া এলাকার রশিদ আহমদ ইউনুস, মৃত শামসুল আলম ছেলে ৩৪ বিজিবির কমান্ডারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে জনশ্রুতি থাকা ফারুক, মোহাম্মদ হানিফের ছেলে মিজান।

সূত্র জানান, মুষ্টিমেয় টাকা ছড়িয়ে বিজিবির সোর্সের ট্যাগ গলায় ঝুলিয়ে নিয়েছে করইবনিয়ার এই তিন ইয়াবা কারবারি। এ পরিচয়কে ঢাল বানিয়ে এলাকায় প্রকাশ্যে দাপট দেখাচ্ছে তারা। গ্রামবাসীদের চোখ রাঙানো, প্রতিপক্ষকে হয়রানি করা, এমনকি নিরীহ মানুষকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানো- সবই যেন তাদের নিত্যদিনের খেলা। টাকার লোভে কিছু অসাধু কর্মকর্তার ছত্রছায়ায় এই ‘সোর্স’ চক্র সীমান্ত এলাকায় মাদকের গডফাদারে রূপ নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নীরবতায় তারা এখন সীমান্তের অঘোষিত শাসক।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এক সময় এই তিনজনের নুন আনতে পানতা পুরাতেন, তারাই এখন একের পর এক বিল্ডিং নির্মাণ করছেন। ডাম্পার, মোটরসাইকেল, টমটমসহ নামে–বেনামে গড়ে তুলেছেন অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অথচ আয়ের বৈধ কোনো উৎস নেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিজিবির সোর্স পরিচয় ব্যবহার করে এরা সীমান্ত এলাকায় এক ধরনের ‘সিকিউরিটি শিল্ড’ গড়ে তুলেছে। কোনো অভিযানের খবর আগেভাগে পাচার হয়ে যায়। এভাবেই করইবনিয়া, গর্জনবনিয়া, আমতলী, আজুখাইয়া সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন গোপনে পাচার হয় লাখ লাখ ইয়াবা ট্যাবলেট। স্থানীয় বাজারেও চলমান ‘ডিল’গুলোতে একেকবারে পাঁচ থেকে দশ লাখ টাকার ইয়াবা কেনাবেচা হয় এদের নেতৃত্বে।

বিশ্লেষণে স্পষ্ট হয়েছে, করইবনিয়ার মাদক সাম্রাজ্যের মূল জ্বালানি হলো বিজিবির ভেতরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। সোর্সের তকমা গায়ে লাগিয়ে এই চক্র এমন দুর্ভেদ্য দেয়াল গড়ে তুলেছে, যেখানে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, প্রশাসনের সৎ সদস্যরাও চুপসে যান। মাদকবিরোধী অভিযান এখানে নিছক এক নাটক; আগে থেকেই সাজানো হয় মালিকবিহীন ইয়াবার ‘উদ্ধার নাটক’, আর অভিযুক্তদের তালিকায় দেওয়া হয় ‘পালাতক’ তকমা। সবকিছু- উদ্ধার, মামলা, মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট- এই চক্রের ইশারায় চলত বলে স্থানীয়দের মধ্যে প্রবল বিশ্বাস। মূলত, যারা অভিযানের নামে ছবি তুলত, তারাই ছিল সীমান্ত দিয়ে মাদক আনানোর মূল হোতা। ফলে করইবনিয়ার সীমান্ত আজ এক ভয়ঙ্কর মাদক করিডরে পরিণত হয়েছে, আর প্রশাসন রয়েছে নির্লিপ্ত দর্শকের ভূমিকায়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, করইবনিয়া, গর্জনবনিয়া, আমতলী ও আজুখাইয়া এলাকার সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন কোটি টাকার ইয়াবা পাচার হয়। ইউনুস, ফারুক ও মিজান এই রুট নিয়ন্ত্রণ করে। নিজেদের রক্ষাকবচ হিসেবে বিজিবির সোর্স পরিচয় ব্যবহার করায় প্রশাসনও নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় প্রবীণ মুরব্বি হাজী রশিদ আহমদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘করইবনিয়া আজ ইয়াবার দুর্গ হয়ে গেছে। যারা দু’বেলা ভাতের চিন্তায় ছিল, তারাই আজ কোটি টাকার মালিক। বিজিবি সোর্সের ট্যাগ লাগিয়ে এলাকার মানুষের মাথায় উঠে বসেছে। এদের শিকড় উপড়ে ফেলতে না পারলে ভবিষ্যতে এখানে কেউ নিরাপদ থাকবে না।’

রত্নাপালং ইউনিয়নের এক যুবনেতা বলেন, ‘আমরা বহুবার প্রশাসনকে বলেছি, এরা সোর্স না, ইয়াবা সিন্ডিকেটের মূল হোতা। কিন্তু বিজিবির কয়েকজন কর্মকর্তার সাপোর্ট থাকায় ওরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। এখন বদলির পর সবাই সাহস করে কথা বলছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনপ্রতিনিধি বলেন, ‘তথাকথিত সোর্সের তালিকা একবার খতিয়ে দেখলেই আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। প্রশাসন চাইলে ২৪ ঘণ্টায় এই সিন্ডিকেট ধরা সম্ভব। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তারা অদৃশ্য কারণে নীরব।’

করইবনিয়ার এক প্রবীণ মুরুব্বি বলেন, ‘ইউনুসরা এখন যে সম্পদ গড়েছে, তা দেখলে মনে হয় ওরা যেন বংশপরম্পরায় রাজা ছিল। অথচ কয়দিন আগেও দিন আনে দিন খায় অবস্থা ছিল। এটা তো গাছের পাতা খেয়ে হয়নি।’

একজন স্থানীয় স্কুলশিক্ষক প্রশ্ন তোলেন, ‘কোথা থেকে এত টাকা এলো। বিজিবি-প্রশাসনের চোখের সামনে দিয়ে কিভাবে দিনে দিনে এতো সম্পদ গড়ে উঠলো? নাকি তাদের কেউ ‘বডিগার্ড’ হিসেবে পাশে আছে?’

অভিযুক্তরা দিব্যি প্রকাশ্যে চলাফেরা করছে। বিজিবি ও পুলিশের মধ্যে কিছু অসৎ সদস্যদের পৃষ্ঠপোষকতায় এরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।

তাদের দাবি, দ্রুত এই চক্রের বিরুদ্ধে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে অভিযান চালানো হোক এবং সোর্স ব্যবস্থার অপব্যবহার কঠোরভাবে দমন করা হোক। নতুবা সীমান্ত হয়ে উঠবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইয়াবার ট্রানজিট রুট।