নেত্রকোনা জুড়ে চলেছে আইপিএল জুয়া, দুশ্চিন্তায় সচেতন মহল

নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
১৭ এপ্রিল, ২০২৫, 7:40 PM

নেত্রকোনা জুড়ে চলেছে আইপিএল জুয়া, দুশ্চিন্তায় সচেতন মহল
আইপিএল (IPL) (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ) খেলা হচ্ছে ভারতে আর বাজির খেলায় মেতেছে নেত্রকোনার কৃষক, দিনমজুর, রিক্সা চালক, ছাত্র, তরুনসহ বিভিন্ন পেশার ব্যবসায়ীরা। মাদকের মত আইপিএল (IPL) জুয়ার ছোবল এখন জেলার সর্বত্র।
জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজার থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান, বাসা-বাড়ি এমন কি যেখানেই টিভি সেখানেই চলছে বাজি খেলা। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই দলের খেলোয়াড়দের কোয়ালিটির উপর ভিত্তি করে ফেলা হয় দলের বাজি রেট। বাজির এ রেট নিয়ন্ত্রণ করে জেলাসদর ও প্রতিটি উপজেলার কয়েকটি এজেন্ট। আবার ওই এজেন্টদেরকে নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী চক্র। আর এ চক্র দিনের পর দিন চালিয়ে যাচ্ছে এই রমরমা ব্যবসা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খেলার ফলাফলের ওপর হচ্ছে দুই পক্ষের জুয়ারিদের বাজি। এরপর ম্যাচ শুরুর পর থেকেই পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান, মুদির দোকানসহ যেখানেই সুযোগ হয় সেখানেই চলছে বাজির জুয়া খেলা। প্রতি ম্যাচে ১০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে লাখ টাকা পর্যন্ত বাজি ধরা হচ্ছে। এছাড়াও প্রতি খেলোয়াড়, প্রতি ওভার, প্রতি বল হিসাবেও বাজি ধরা হচ্ছে।
সরেজমিনে জেলা সদরসহ, দশটি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম্য বাজার ও এলাকার ছোট-বড় চায়ের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি দোকানেই টিভির সামনে চলছে রমরমা জুয়ার বাজি। ফলে ক্রিকেট জুয়ার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে বৃদ্ধ, মধ্য বয়সী, তরুণ, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ যুবসমাজ।
জেলা সদরসহ কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খেলা উপভোগ করতে আসা কয়েজন দর্শকের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমরা সারাদিন পরিশ্রম করে বাড়ি ফিরে এলাকার চায়ের দোকানে চা-সিগারেট খেতে এসে একটু টিভি দেখি। এখন আইপিএল খেলা চলছে তাই খেলা দেখার পাশাপাশি জুয়ারিদের জয়-পরাজয়ে তাদের অনুভূতি উপভোগ করি।
বাজির জুয়া সম্পর্কে তারা বলেন, ম্যাচ শুরুতে টসে কোন দল জিতবে? তা থেকে শুরু করে প্রথম ব্যাটিং কত রান করবে, ম্যাচের জয়-পরাজয়, এক ওভারে কত রান হবে, এক বলে কী হবে, ডট বল হবে কি-না, কোন খেলোয়াড় কেমন খেলবে এমন সব কিছুর ওপরই চলে বাজির জুয়া। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর টিভির পর্দার সামনে খেলার দর্শকদের মধ্যে যে ভিড় দেখা যায়, এর প্রায় প্রতিটিই ছোটখাটো জুয়ার আসর। ছোট খাটো চায়ের দোকানে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১,০০০ টাকা পর্যন্ত বাজির খেলা হয়।
চলতি আইপিএল (IPL) নিয়ে বাজির বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জুয়াড়ি বলেন, এখন আইপিএল (IPL) টুর্নামেন্টের মাঝামাঝি সময় চলছে। প্রথম ম্যাচ থেকে এখন পর্যন্ত বাজি খেলে অনেকের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। ঘরে বসেইে এজেন্টের কাছে ফোনের মাধ্যমে কথা বলে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা বাজি ধরা যায়। যে জোয়ারীর দল জিতবে তাকে পরের দিন ব্রোকারের লোকের মাধ্যমে জুয়ারীদের বাড়িতে টাকা পৌঁছে দেয়। এছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা লেনদেন করে থাকেন অনেক এজেন্টরা। বাজি রেট নিয়ন্ত্রণে যারা আছেন, তারা উচ্চ পর্যায়ের প্রভাবশালীদের সাথে সখ্যতা করে এই ব্যবসা দিনের পর দিন চালিয়ে যাচ্ছেন।
তারা আরো বলেন, চায়ের দোকানের মতো ছোটখাটো আসরে পুরো ম্যাচের জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে একেক ধরনের রেট রয়েছে। তবে সাধারণত ছোট মাপের বাজি ফেবারিট দলের পক্ষে দেড় হাজার ও অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের পক্ষে এক হাজার টাকা ধরে খেলার প্রচলনই বেশি। মাঝারি মাপের বাজির দর ১০ হাজার ও ১৫ হাজার টাকা রেট দেওয়া হচ্ছে। কেবল ম্যাচে হারজিত নিয়েই বাজি নয়, প্রতি ওভারে ওভারে, এমনকি বলে বলে বাজি ধরছেন ছোট-বড় বাজিকররা। ছোট পরিসরে রাস্তার মোড়ের দোকানগুলোতেই বেশি হচ্ছে এসব ছোট বাজির খেলা।
সমাজের সচেতন ব্যাক্তিরা বলছেন, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবাধে চলছে ক্রিকেট বাজি জোয়ার মহোৎসব। আইপিএল (IPL) জুয়ার আসর জমে ওঠার কারনে উপজেলার আইন শৃঙ্খলা মারত্নকভাবে অবনতি ঘটছে। এতে সমাজের অবক্ষয় ও অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলেছে। অতি দ্রুত এই ক্রিকেট জুয়ার সিন্ডিকেটকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে শক্ত হাতে প্রতিহত করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহনেওয়াজ জানান, আমাদের টহল টিম সবসময়ই টহলে থাকে কিন্তু ক্রিকেট জুয়ার সাথে জড়িতরা এতটাই চালাক যে, তাদের হাতে নাতে ধরা খুবই মুশকিল। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত থানা পুলিশকে কেউ তথ্য দেয়নি। সঠিক তথ্য পেলে অভিযান চালিয়ে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
১৭ এপ্রিল, ২০২৫, 7:40 PM

আইপিএল (IPL) (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ) খেলা হচ্ছে ভারতে আর বাজির খেলায় মেতেছে নেত্রকোনার কৃষক, দিনমজুর, রিক্সা চালক, ছাত্র, তরুনসহ বিভিন্ন পেশার ব্যবসায়ীরা। মাদকের মত আইপিএল (IPL) জুয়ার ছোবল এখন জেলার সর্বত্র।
জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজার থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান, বাসা-বাড়ি এমন কি যেখানেই টিভি সেখানেই চলছে বাজি খেলা। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই দলের খেলোয়াড়দের কোয়ালিটির উপর ভিত্তি করে ফেলা হয় দলের বাজি রেট। বাজির এ রেট নিয়ন্ত্রণ করে জেলাসদর ও প্রতিটি উপজেলার কয়েকটি এজেন্ট। আবার ওই এজেন্টদেরকে নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী চক্র। আর এ চক্র দিনের পর দিন চালিয়ে যাচ্ছে এই রমরমা ব্যবসা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খেলার ফলাফলের ওপর হচ্ছে দুই পক্ষের জুয়ারিদের বাজি। এরপর ম্যাচ শুরুর পর থেকেই পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান, মুদির দোকানসহ যেখানেই সুযোগ হয় সেখানেই চলছে বাজির জুয়া খেলা। প্রতি ম্যাচে ১০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে লাখ টাকা পর্যন্ত বাজি ধরা হচ্ছে। এছাড়াও প্রতি খেলোয়াড়, প্রতি ওভার, প্রতি বল হিসাবেও বাজি ধরা হচ্ছে।
সরেজমিনে জেলা সদরসহ, দশটি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম্য বাজার ও এলাকার ছোট-বড় চায়ের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি দোকানেই টিভির সামনে চলছে রমরমা জুয়ার বাজি। ফলে ক্রিকেট জুয়ার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে বৃদ্ধ, মধ্য বয়সী, তরুণ, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ যুবসমাজ।
জেলা সদরসহ কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খেলা উপভোগ করতে আসা কয়েজন দর্শকের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমরা সারাদিন পরিশ্রম করে বাড়ি ফিরে এলাকার চায়ের দোকানে চা-সিগারেট খেতে এসে একটু টিভি দেখি। এখন আইপিএল খেলা চলছে তাই খেলা দেখার পাশাপাশি জুয়ারিদের জয়-পরাজয়ে তাদের অনুভূতি উপভোগ করি।
বাজির জুয়া সম্পর্কে তারা বলেন, ম্যাচ শুরুতে টসে কোন দল জিতবে? তা থেকে শুরু করে প্রথম ব্যাটিং কত রান করবে, ম্যাচের জয়-পরাজয়, এক ওভারে কত রান হবে, এক বলে কী হবে, ডট বল হবে কি-না, কোন খেলোয়াড় কেমন খেলবে এমন সব কিছুর ওপরই চলে বাজির জুয়া। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর টিভির পর্দার সামনে খেলার দর্শকদের মধ্যে যে ভিড় দেখা যায়, এর প্রায় প্রতিটিই ছোটখাটো জুয়ার আসর। ছোট খাটো চায়ের দোকানে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১,০০০ টাকা পর্যন্ত বাজির খেলা হয়।
চলতি আইপিএল (IPL) নিয়ে বাজির বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জুয়াড়ি বলেন, এখন আইপিএল (IPL) টুর্নামেন্টের মাঝামাঝি সময় চলছে। প্রথম ম্যাচ থেকে এখন পর্যন্ত বাজি খেলে অনেকের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। ঘরে বসেইে এজেন্টের কাছে ফোনের মাধ্যমে কথা বলে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকা বাজি ধরা যায়। যে জোয়ারীর দল জিতবে তাকে পরের দিন ব্রোকারের লোকের মাধ্যমে জুয়ারীদের বাড়িতে টাকা পৌঁছে দেয়। এছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা লেনদেন করে থাকেন অনেক এজেন্টরা। বাজি রেট নিয়ন্ত্রণে যারা আছেন, তারা উচ্চ পর্যায়ের প্রভাবশালীদের সাথে সখ্যতা করে এই ব্যবসা দিনের পর দিন চালিয়ে যাচ্ছেন।
তারা আরো বলেন, চায়ের দোকানের মতো ছোটখাটো আসরে পুরো ম্যাচের জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে একেক ধরনের রেট রয়েছে। তবে সাধারণত ছোট মাপের বাজি ফেবারিট দলের পক্ষে দেড় হাজার ও অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলের পক্ষে এক হাজার টাকা ধরে খেলার প্রচলনই বেশি। মাঝারি মাপের বাজির দর ১০ হাজার ও ১৫ হাজার টাকা রেট দেওয়া হচ্ছে। কেবল ম্যাচে হারজিত নিয়েই বাজি নয়, প্রতি ওভারে ওভারে, এমনকি বলে বলে বাজি ধরছেন ছোট-বড় বাজিকররা। ছোট পরিসরে রাস্তার মোড়ের দোকানগুলোতেই বেশি হচ্ছে এসব ছোট বাজির খেলা।
সমাজের সচেতন ব্যাক্তিরা বলছেন, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবাধে চলছে ক্রিকেট বাজি জোয়ার মহোৎসব। আইপিএল (IPL) জুয়ার আসর জমে ওঠার কারনে উপজেলার আইন শৃঙ্খলা মারত্নকভাবে অবনতি ঘটছে। এতে সমাজের অবক্ষয় ও অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলেছে। অতি দ্রুত এই ক্রিকেট জুয়ার সিন্ডিকেটকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাধ্যমে শক্ত হাতে প্রতিহত করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহনেওয়াজ জানান, আমাদের টহল টিম সবসময়ই টহলে থাকে কিন্তু ক্রিকেট জুয়ার সাথে জড়িতরা এতটাই চালাক যে, তাদের হাতে নাতে ধরা খুবই মুশকিল। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত থানা পুলিশকে কেউ তথ্য দেয়নি। সঠিক তথ্য পেলে অভিযান চালিয়ে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।