ঢাকা ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
শিরোনামঃ
সরিষাবাড়ীতে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল গাজীপুরে ছাত্রদলের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল  গাজীপুরে কৃষক দলের উদ্যোগে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়া মাহফিল  পিরোজপুরে  সাংবাদিক মাইনুল ইসলাম মামুনের উপর অতর্কিত হামলা বাগেরহাট যুবদলের কোরান খতম ও দোয়া মাহফিল বাংলাদেশে কারও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠাতে চাইলে সরকার সহায়তা করবে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশবাসীর সম্মিলিত সমর্থনই আমাদের পরিবারের শক্তি ও প্রেরণার উৎস: তারেক রহমান চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছেন বেগম খালেদা জিয়া : জাহিদ হোসেন এলপিজি দাম সমন্বয় করেছে সরকার

কিশোরগঞ্জে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি

#
news image

কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালির শত বছরের সমাজ সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি। এ গরুর গাড়ি নিয়ে জনপ্রিয় অনেক ভাওয়াইয়া গানও রচিত হয়েছে। যেমনটাই “ও কি গাড়িয়াল ভাই, কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে” এখন ‘চাইয়া’ থাকলেও গরুর গাড়ি চোখে পড়ে না।গরুর গাড়ির চালক (গাড়িয়াল) না থাকায়, গাড়িয়াল ভাইয়ের অমৃত কন্ঠের ভাওয়াইয়া গানও হারিয়ে যাচ্ছে। এখন প্রযুক্তির ছোঁয়ায়, আধুনিক যুগের রঙ্গমঞ্চে বিস্মৃতির পথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি। সাথে হারিয়ে গেছে গরুর গাড়ি তৈরির কারিগররা।

কৃষিপ্রধান দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের মাটি ও মানুষের যোগাযোগের একমাত্র বাহন ছিল গরুর গাড়ি। যা প্রাচীন কাল থেকে এ উপজেলার গ্রামীণ জনপদে যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে গরুর গাড়ির ছিল বহুল প্রচলন। আর কৃষি নির্ভর এ অঞ্চলের কৃষকরা আগে গরুর গাড়িতে গোবরসার, লাঙ্গল-জোয়াল, মই নিয়ে মাঠে যেত।

বিবাহ অনুষ্ঠান, মেলা এবং ভ্রমণের একমাত্র বাহন ছিল গরুর গাড়ি। গরুর গাড়িতে ছাউনি সাজিয়ে শ্বশুরবাড়ি, বাবার বাড়ি আসা-যাওয়া করত নববধুরা। বিবাহ অনুষ্ঠানে অনেকগুরো সাজানো গরুর গাড়ির বহর নিয়ে বরপক্ষ, কনের বাড়িতে বরযাত্রাসহ বিবাহ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতো। এসব এখন শুধুই অতীতের স্মৃতি। হারিয়ে যাওয়া এ ঐতিহ্য উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ঘুরেও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কালে কালেভদ্রে এ গরুর গাড়ির দেখা মেলে উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নের উঃ দুরাকুটি পাগলাটারী গ্রামের রইমুদিনের ছেলে তছলি মামুদ ফসলে মাঠে।

এ সময় তিনি জানান, প্রাচীন ঐতিহ্যটিকে ধরে রাখার চেষ্টা করছি সখের বসে। আমাদের এই কৃষি প্রধান বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গরুর গাড়ি। চিরায়িত বাংলার রুপের সন্ধান করতে গেলে ওই কৃষি যানবাহনের কথা যেমন প্রথমে স্মরণে আসবে, তেমনি আসবে গরুর গাড়ির কথা। আজ প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষ দ্রুতগতিতে ছুটে চলছে। ভুলতে বসেছে সংস্কুতির এ নিদর্শন।

একই ইউনিয়নের উঃ দুরাকুটি পশ্চিমপাড়া গ্রামের প্রবীণ গাড়িয়াল জরিয়াল উদ্দীন (৭০) দীর্ঘ স্মৃতি হাতড়ে বলেন, আগে আমাদের এলাকায় গরুর গাড়ির ভূমিকা ছিল অপরিসীম। আজ থেকে ২৫-৩০বছর আগে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই একটি করে গরুর গাড়ি ছিল। গরুর গাড়ি জীবিকার উৎস ছিল। যা কল্পনা করেনি, তাই এখন পাচ্ছে হাতের কাছে। ইট-পাথরের মতো মানুষও হয়ে পড়েছে যান্ত্রিক, এতে মানুষ তার নিজস্ব ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। এখন গরুর গাড়ির স্থান দখল করে নিয়েছে ভ্যান, অটোরিকশা, নছিমন, করিমন, ভটভটি, বাস ইত্যাদি। যেখানে রোজ ঘুম ভাঙতো গরুর গাড়ির মুখ দেখে। এখম ঘুম ভাঙে বিকট শব্দের যানবাহনে। এসব বাহনের পোড়া তেল-মবিলের গন্ধে দূষন হচ্ছে পরিবেশ। কয়েক বছর আগে কালেভদ্রে দু’ একটা গরুর গাড়ি দেখা মিললেও বর্তমানে তা ডুমুরের ফুল।

কিশোরগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মেরিনা জাহান বলেন, বাংলা নববর্ষ এলেই এ উপজেলার মানুষ নিজেদের বাঙালি প্রমাণ করার জন্য গ্রামীণ জীবনের নানা অনুষঙ্গ নিয়ে মেতে উঠত বর্ষবরণে। এখন বাংলা নববর্ষবরণ শোভাযাত্রায় গরুর গাড়ি দেখা যায়না। এ চিরায়িত ঐতিহ্যগুলো এখন ঠাঁই হচ্ছে বই ও খবরের পাতায়। তবুও আধুনিক যুগে বিশেষ দিনে এ ঐতিহ্য তুলে ধরতে আমাদের সবার উচিত হারানো ঐতিহ্যকে সংরক্ষরণ করা।

নীলফামারী প্রতিনিধিঃ

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫,  4:04 PM

news image

কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালির শত বছরের সমাজ সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি। এ গরুর গাড়ি নিয়ে জনপ্রিয় অনেক ভাওয়াইয়া গানও রচিত হয়েছে। যেমনটাই “ও কি গাড়িয়াল ভাই, কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে” এখন ‘চাইয়া’ থাকলেও গরুর গাড়ি চোখে পড়ে না।গরুর গাড়ির চালক (গাড়িয়াল) না থাকায়, গাড়িয়াল ভাইয়ের অমৃত কন্ঠের ভাওয়াইয়া গানও হারিয়ে যাচ্ছে। এখন প্রযুক্তির ছোঁয়ায়, আধুনিক যুগের রঙ্গমঞ্চে বিস্মৃতির পথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি। সাথে হারিয়ে গেছে গরুর গাড়ি তৈরির কারিগররা।

কৃষিপ্রধান দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের মাটি ও মানুষের যোগাযোগের একমাত্র বাহন ছিল গরুর গাড়ি। যা প্রাচীন কাল থেকে এ উপজেলার গ্রামীণ জনপদে যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে গরুর গাড়ির ছিল বহুল প্রচলন। আর কৃষি নির্ভর এ অঞ্চলের কৃষকরা আগে গরুর গাড়িতে গোবরসার, লাঙ্গল-জোয়াল, মই নিয়ে মাঠে যেত।

বিবাহ অনুষ্ঠান, মেলা এবং ভ্রমণের একমাত্র বাহন ছিল গরুর গাড়ি। গরুর গাড়িতে ছাউনি সাজিয়ে শ্বশুরবাড়ি, বাবার বাড়ি আসা-যাওয়া করত নববধুরা। বিবাহ অনুষ্ঠানে অনেকগুরো সাজানো গরুর গাড়ির বহর নিয়ে বরপক্ষ, কনের বাড়িতে বরযাত্রাসহ বিবাহ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতো। এসব এখন শুধুই অতীতের স্মৃতি। হারিয়ে যাওয়া এ ঐতিহ্য উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ঘুরেও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কালে কালেভদ্রে এ গরুর গাড়ির দেখা মেলে উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নের উঃ দুরাকুটি পাগলাটারী গ্রামের রইমুদিনের ছেলে তছলি মামুদ ফসলে মাঠে।

এ সময় তিনি জানান, প্রাচীন ঐতিহ্যটিকে ধরে রাখার চেষ্টা করছি সখের বসে। আমাদের এই কৃষি প্রধান বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে গরুর গাড়ি। চিরায়িত বাংলার রুপের সন্ধান করতে গেলে ওই কৃষি যানবাহনের কথা যেমন প্রথমে স্মরণে আসবে, তেমনি আসবে গরুর গাড়ির কথা। আজ প্রযুক্তির ছোঁয়ায় মানুষ দ্রুতগতিতে ছুটে চলছে। ভুলতে বসেছে সংস্কুতির এ নিদর্শন।

একই ইউনিয়নের উঃ দুরাকুটি পশ্চিমপাড়া গ্রামের প্রবীণ গাড়িয়াল জরিয়াল উদ্দীন (৭০) দীর্ঘ স্মৃতি হাতড়ে বলেন, আগে আমাদের এলাকায় গরুর গাড়ির ভূমিকা ছিল অপরিসীম। আজ থেকে ২৫-৩০বছর আগে প্রায় প্রতিটি পরিবারেই একটি করে গরুর গাড়ি ছিল। গরুর গাড়ি জীবিকার উৎস ছিল। যা কল্পনা করেনি, তাই এখন পাচ্ছে হাতের কাছে। ইট-পাথরের মতো মানুষও হয়ে পড়েছে যান্ত্রিক, এতে মানুষ তার নিজস্ব ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলছে। এখন গরুর গাড়ির স্থান দখল করে নিয়েছে ভ্যান, অটোরিকশা, নছিমন, করিমন, ভটভটি, বাস ইত্যাদি। যেখানে রোজ ঘুম ভাঙতো গরুর গাড়ির মুখ দেখে। এখম ঘুম ভাঙে বিকট শব্দের যানবাহনে। এসব বাহনের পোড়া তেল-মবিলের গন্ধে দূষন হচ্ছে পরিবেশ। কয়েক বছর আগে কালেভদ্রে দু’ একটা গরুর গাড়ি দেখা মিললেও বর্তমানে তা ডুমুরের ফুল।

কিশোরগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মেরিনা জাহান বলেন, বাংলা নববর্ষ এলেই এ উপজেলার মানুষ নিজেদের বাঙালি প্রমাণ করার জন্য গ্রামীণ জীবনের নানা অনুষঙ্গ নিয়ে মেতে উঠত বর্ষবরণে। এখন বাংলা নববর্ষবরণ শোভাযাত্রায় গরুর গাড়ি দেখা যায়না। এ চিরায়িত ঐতিহ্যগুলো এখন ঠাঁই হচ্ছে বই ও খবরের পাতায়। তবুও আধুনিক যুগে বিশেষ দিনে এ ঐতিহ্য তুলে ধরতে আমাদের সবার উচিত হারানো ঐতিহ্যকে সংরক্ষরণ করা।