তদবিরে পাল্টে গেল সেতুর স্থান, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী
রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
২৩ জানুয়ারি, ২০২৫, 3:54 PM
তদবিরে পাল্টে গেল সেতুর স্থান, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর গ্রামে বেতাই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন এলাকাবাসী। এলজিইডি সেতুটির গুরুত্ব অনুধাবন করে সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনাও পাঠায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। তবে, সেতুটি যখন অনুমোদনের কাছাকাছি, তখন সেতুটির অনুমোদিত স্থান পরিবর্তন করে অন্য স্থানে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা। স্থানীয় এক যুগ্ম সচিবের তদবিরে এই পরিবর্তন ঘটেছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর।
এ নিয়ে তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের মোহনপুরসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সেতুটি নির্ধারিত স্থানে নির্মাণ করার জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে (এলজিইডি) কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন। পাশাপাশি তারা জনগণের মতামতের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অন্য জায়গায় সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান।
এলাকাবাসী জানান, মোহনগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর গ্রামে বেতাই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। সেতু না থাকায় মোহনপুর, পূর্ব ফাগুয়া, হানবীর, ভাটাপাড়া, আবদুল্লাহপুর, নাপিতপাড়াসহ ৭-৮টি গ্রামের শিশু শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী বাঁশের সাঁকো পার হয়ে যাতায়াত করে। বর্ষাকালে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারে না, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিশু ও বয়স্করা নদী পার হয়। এছাড়া বয়স্ক রোগীদের চিকিৎসা দিতে নিয়ে যাওয়া ও হাওরের ধান পরিবহনে সমস্যা হয়। এসব কারণে ২০১৯ সালে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সেতুটি নির্মাণের জন্য এলজিইডিতে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। সে লক্ষ্যে সেতুর আইডি তৈরি করে এলজিইডি। পরে সেটি নিয়মানুযায়ী প্রকল্প তৈরি করে গুরুত্ব বিবেচনায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়।
জানা যায়, সর্বশেষ ২০২২ সালে আবারও সেতুটির চাহিদা চেয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে আবেদন করে উপজেলা এলজিইডি, কিন্তু সেতু নির্মাণের বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি একই এলাকায় দেড় কিলোমিটার দূরে নতুন একটি সেতু নির্মাণের অনুমোদন হয়। যার দরপত্র প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, নতুন সেতুটির অনুমোদনে স্থানীয় এক যুগ্ম সচিবের তদবির রয়েছে। পূর্ব নির্ধারিত স্থান বাদ দিয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে শুনে ক্ষুব্ধ মোহনপুরসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ।
মোহনপুর গ্রামের শেখ মোহাম্মদ সুলতান বলেন, নদীর ওপারে থাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কয়েকটি গ্রামের কয়েকশ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। শুকনো মৌসুমে সাঁকো পার হয়ে যায় তারা। বর্ষায় নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যায়। অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে। একই গ্রামের কাইয়ুম নামে একজন বলেন, দীর্ঘদিনের প্রস্তাবিত সেতু বাদ দিয়ে ক্ষমতাবান কারও তদবিরে ভুল জায়গায় সেতু করলে মানুষের কোনো উপকারে আসবে না। উল্টো এলাকার মানুষের টাকা গচ্ছা যাবে। যেখানে সেতুটি করতে যাচ্ছে, ওই জায়গায় তেমন কোনো মানুষজন নেই, স্কুল-মাদ্রাসাও নেই।
তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সুজন কর জানান, নদীর পশ্চিম পাশের অনেক গ্রামের মানুষ হাওরে ফসল উৎপাদন করেন। সেতুর কারণে তাদের ফসল সঠিক সময়ে ঘরে তুলতে পারেন না। কম দামে জমিতে বিক্রি করতে বাধ্য হন। ছেলেমেয়ে স্কুলে যেতে পারে না। একটি সেতু পারে জীবনমান বদলে দিতে। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন দ্রুত পূর্বনির্ধরিত স্থানে সেতুটি নির্মাণ করা হোক।
মোহনগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী সোয়েব ইমরান বলেন, মোহনপুর গ্রামের সেতুটি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ। সেতুটি হলে এলাকার বেশ কয়েক গ্রামের মানুষের উপকার হবে। বাচ্চাদের স্কুলে যাতায়াত, ক্ষেতের ধান পরিবহনসহ নানা সুবিধা হবে। এর আগে সেতুটির প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। অন্য যে সেতুটি হচ্ছে সেটি এর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরের, এটিও গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর আশা, ওই সেতুটিও হবে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।
রিপন কান্তি গুণ, নেত্রকোনা প্রতিনিধি :
২৩ জানুয়ারি, ২০২৫, 3:54 PM
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর গ্রামে বেতাই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছিলেন এলাকাবাসী। এলজিইডি সেতুটির গুরুত্ব অনুধাবন করে সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনাও পাঠায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। তবে, সেতুটি যখন অনুমোদনের কাছাকাছি, তখন সেতুটির অনুমোদিত স্থান পরিবর্তন করে অন্য স্থানে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা। স্থানীয় এক যুগ্ম সচিবের তদবিরে এই পরিবর্তন ঘটেছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর।
এ নিয়ে তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের মোহনপুরসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী সেতুটি নির্ধারিত স্থানে নির্মাণ করার জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে (এলজিইডি) কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন। পাশাপাশি তারা জনগণের মতামতের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অন্য জায়গায় সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানান।
এলাকাবাসী জানান, মোহনগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর গ্রামে বেতাই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। সেতু না থাকায় মোহনপুর, পূর্ব ফাগুয়া, হানবীর, ভাটাপাড়া, আবদুল্লাহপুর, নাপিতপাড়াসহ ৭-৮টি গ্রামের শিশু শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী বাঁশের সাঁকো পার হয়ে যাতায়াত করে। বর্ষাকালে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারে না, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিশু ও বয়স্করা নদী পার হয়। এছাড়া বয়স্ক রোগীদের চিকিৎসা দিতে নিয়ে যাওয়া ও হাওরের ধান পরিবহনে সমস্যা হয়। এসব কারণে ২০১৯ সালে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সেতুটি নির্মাণের জন্য এলজিইডিতে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। সে লক্ষ্যে সেতুর আইডি তৈরি করে এলজিইডি। পরে সেটি নিয়মানুযায়ী প্রকল্প তৈরি করে গুরুত্ব বিবেচনায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়।
জানা যায়, সর্বশেষ ২০২২ সালে আবারও সেতুটির চাহিদা চেয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে আবেদন করে উপজেলা এলজিইডি, কিন্তু সেতু নির্মাণের বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। সম্প্রতি একই এলাকায় দেড় কিলোমিটার দূরে নতুন একটি সেতু নির্মাণের অনুমোদন হয়। যার দরপত্র প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, নতুন সেতুটির অনুমোদনে স্থানীয় এক যুগ্ম সচিবের তদবির রয়েছে। পূর্ব নির্ধারিত স্থান বাদ দিয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে শুনে ক্ষুব্ধ মোহনপুরসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ।
মোহনপুর গ্রামের শেখ মোহাম্মদ সুলতান বলেন, নদীর ওপারে থাকা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কয়েকটি গ্রামের কয়েকশ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে। শুকনো মৌসুমে সাঁকো পার হয়ে যায় তারা। বর্ষায় নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে যায়। অনেক সময় দুর্ঘটনাও ঘটে। একই গ্রামের কাইয়ুম নামে একজন বলেন, দীর্ঘদিনের প্রস্তাবিত সেতু বাদ দিয়ে ক্ষমতাবান কারও তদবিরে ভুল জায়গায় সেতু করলে মানুষের কোনো উপকারে আসবে না। উল্টো এলাকার মানুষের টাকা গচ্ছা যাবে। যেখানে সেতুটি করতে যাচ্ছে, ওই জায়গায় তেমন কোনো মানুষজন নেই, স্কুল-মাদ্রাসাও নেই।
তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সুজন কর জানান, নদীর পশ্চিম পাশের অনেক গ্রামের মানুষ হাওরে ফসল উৎপাদন করেন। সেতুর কারণে তাদের ফসল সঠিক সময়ে ঘরে তুলতে পারেন না। কম দামে জমিতে বিক্রি করতে বাধ্য হন। ছেলেমেয়ে স্কুলে যেতে পারে না। একটি সেতু পারে জীবনমান বদলে দিতে। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন দ্রুত পূর্বনির্ধরিত স্থানে সেতুটি নির্মাণ করা হোক।
মোহনগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী সোয়েব ইমরান বলেন, মোহনপুর গ্রামের সেতুটি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ। সেতুটি হলে এলাকার বেশ কয়েক গ্রামের মানুষের উপকার হবে। বাচ্চাদের স্কুলে যাতায়াত, ক্ষেতের ধান পরিবহনসহ নানা সুবিধা হবে। এর আগে সেতুটির প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। অন্য যে সেতুটি হচ্ছে সেটি এর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরের, এটিও গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর আশা, ওই সেতুটিও হবে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন তিনি।