বদরগঞ্জে লটারি-জুয়ার ফাঁদে গ্রামীণ জনপদ,সর্বস্বান্ত মানুষ তবুও নীরব প্রশাসন

বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি :
০৩ অক্টোবর, ২০২৫, 7:45 PM

বদরগঞ্জে লটারি-জুয়ার ফাঁদে গ্রামীণ জনপদ,সর্বস্বান্ত মানুষ তবুও নীরব প্রশাসন
রংপুরের বদরগঞ্জে ‘কুটির শিল্প ও বাণিজ্য মেলা’র আড়ালে জমজমাট লটারী, হাউজির মহোৎসব। দিনের আলোয় লাখো মানুষ লটারির টিকিট কিনে প্রতারিত হয়ে পড়ছেন। আর রাত নামলেই শুরু হাউজির আসর—কেউ এনজিও থেকে নেওয়া ঋণ খুইয়েছেন, কেউ গবাদি পশু বিক্রি করেছেন, কেউ আবার ধারদেনার টাকা হারিয়েছেন। ফলে সর্বস্বান্ত হচ্ছে গ্রামীণ জনপদ,অথচ প্রশাসন রয়ে গেছে নীরব দর্শকের ভূমিকায়।
এদিকে মেলা বন্ধের দাবিতে আন্দোলনে নামা স্থানীয়দের নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি জেলা মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদককেও মারধরের শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে,গত ১৮ আগস্ট উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের হাসিনা নগর মাঠে এ মেলা শুরু হয়। মেলায় সস্তা ও কমদামী পণ্যের স্টল বসানো হয়। এসব মানহীন পণ্যে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের আগ্রহ না থাকলেও মূলত মেলা জমে ওঠে লটারি ও হাউজির আসরের কারণে । এরপর থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতবদল হচ্ছে লটারী-জুয়ায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেলায় প্রবেশ টিকিট বিক্রির আড়ালে আসলে লটারীর টিকিট সরাসরি মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। ২০ টাকা মূল্যের প্রতিটি টিকিটে পাঁচ ভরি স্বর্ণ, মোটরসাইকেল, টেলিভিশন, ফ্রিজ, ডিনার সেট, ফ্যানসহ নানা দামী পুরস্কারের প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। মেলায় ঢোকার জন্য প্রবেশ টিকিটের কথা বললেও বাস্তবে বিক্রি হচ্ছে লটারীর টিকিট। শুধু মেলার মাঠেই নয়, এসব টিকিট রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা ও হাটবাজারে ভ্রাম্যমাণভাবে বিক্রি করা হচ্ছে।
প্রতিদিন রাত ১২টায় লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হয় এবং তা ফেসবুকে ও ACN নামক পেজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সেই ফেসবুক লাইভে থেকে দেখা যায় প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিনশটি বক্স জমা হয়। সে হিসেবে প্রতিদিন প্রায় দুই শতাধিক অটোরিক্সায় করে গ্রামেগঞ্জে, হাটে-বাজারে লটারি টিকিট বিক্রি করা হয়।
শনিবার সন্ধ্যার দিকে মেলাস্থল থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার কচুয়া বাজার এলাকায় দেখা যায়, অটো রিকশায় করে লটারির টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এতে নানা বয়সী মানুষ ভিড় জমিয়ে সেগুলো সংগ্রহ করছে।
সেখানে কথা হয় স্থানীয় ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলামের সাথে।তিনি বলেন, 'ভাগ্য পরীক্ষা করতে প্রতিদিন দশটা করে টিকিট কাটি। এ পর্যন্ত ৮-৯ হাজার টাকা গেছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছু পাইনি।'
সরেজমিনে দেখা যায়, বদরগঞ্জসহ আশেপাশের উপজেলাগুলোতে গ্রামে গ্রামে অটোরিকশা যোগে মাইকিং করে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। ৪৩ দিন থেকে লটারী বিক্রি হলেও তাদের থামাতে পারছে না কেউ। দুই-এক জায়গায় বাধার মুখে পড়লেও রাজনৈতিক নেতারা তাদেরকে ছাড়িয়ে আনছেন। মানুষ লটারীর ফাঁদে পড়ে নি:স্ব হয়ে পড়ছেন। পার্বতীপুর উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে প্রায়ই জরিমানা অব্যাহত রাখলেও সব জায়গায় টিকেট বিক্রি বন্ধ করতে পারছে না।
এরকম অসংখ্য ভুক্তভোগীদের সাথে কথা হয়
লোহানীপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, লটারিতে ভাগ্য ফেরার আশায় তিনি প্রতিদিন টিকেট কাটেন। এ পর্যন্ত অনেক টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তবুও ধার দেনা করে লটারির টিকিট কাটছেন।
আরেক বাসিন্দা লাবু মিয়া বলেন, '"মানুষ লটারীত পড়ি ফতুর হয়া গেইছে। প্রত্যেকদিন লাখ লাখ টাকা নিয়ে যাওছে কিন্ত দেখার কেউ নাই"। আর কয়দিন চললে জমি বেচে ঋন শোধ করা লাগবে।
এদিকে রাত নামলেই মেলার মাঠে শুরু হয় হাউজি। বিশাল জায়গা জুড়ে সাজানো হয়েছে এই হাউজির আসর। বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে হাউজি খেলতে আসছেন হাজার হাজার মানুষ।
লালমনিরহাটের আদিতমারী থেকে আসা একজনের সাথে মেলার মাঠে কথা হয়, নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, তারা লালমনিরহাট থেকে গাড়ি ভাড়া করে সপ্তাহে দুই-তিন দিন হাউজি খেলতে আসেন। এ পর্যন্ত তার ৫০ হাজার টাকার বেশি লস হয়েছে । এদিন অন্যের কাছ থেকে ধার নিয়ে তিনি হাউজি খেলতে এসেছেন।
আরও কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা লটারি ও হাউজিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানান।
এদিকে মেলায় লটারি ও হাউজি বন্ধে বদরগঞ্জ ও পার্বতীপুর উপজেলায় দফায় দফায় আন্দোলন করে স্থানীয় মানুষ। গত ১ সেপ্টেম্বর তৌহিদী জনতার ব্যানারে বদরগঞ্জ পৌর শহরের শহীদ মিনার চত্বরে অবস্থান নেন হাজারো মানুষ । তারা সেখানে সাত ঘন্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেলা বন্ধের আশ্বাস দেয়া হয় এবং দুই দিন মেলা বন্ধ থাকে। পরে উপজেলা বিএনপির সভাপতি পরিতোষ চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হকের নেতৃত্বে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। এবং মেলার লটারি চালুর দাবি জানান। এরপর দু'দিন বন্ধ থাকলেও চালু হয় লটারি ও হাউজির আসর।
আন্দোলনকারীদের মধ্যে একজন, বদরগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দা ও ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজন শাহরিয়ার অভিযোগ করেছেন, আন্দোলনের চাপ সত্ত্বেও প্রশাসন যে আশ্বাস দিয়েছিল তা কার্যকর হয়নি। তিনি বলেন, “প্রশাসনের নির্বিকার অবস্থানের কারণে এই মেলা এখনও বন্ধ হয়নি। মূলত এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে সকলের সংযোগ রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি অজানা ফোন নম্বর থেকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে, যা তাদের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
এদিকে উপজেলার ট্যাক্সের হাট এলাকার আশরাফগঞ্জ দিমুখী দাখিল মাদ্রাসার গেটে লটারির টিকিট বিক্রির করার সময় ইউএনও ও পুলিশকে খবর দেয়ার কারণে বিএনপি নেতাকর্মী ও মেলা কমিটির সদস্যদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন জেলা মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহেদা হাসান। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে বদরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
শাহেদা হাসান বলেন, তার বাড়ির সামনে মাদ্রাসার গেটে লটারির টিকিট বিক্রির সময় ইউএনওকে ফোন দিলে তিনি ওসির সাথে কথা বলতে বলেন। ওসিকে জানালে তিনি ইউএনওর পারমিশন ছাড়া যেতে পারবেন না বলে জানান। পরে পুলিশ তাকে সেখানে থাকতে বলে আসার কথা জানালেও ২০ মিনিটের জায়গায় এক ঘন্টা পর আসে। ততক্ষনে ঘটনাস্থলে বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী ও মেলা কমিটির সদস্যরা এসে তার ওপর হামলা করে এবং টিকিট বাক্স নিয়ে যায়। একজন হামলাকারীকে তিনি আটকে রাখলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি।
তার অভিযোগ, 'মেলায় লটারি ও জুয়ার সাথে বিএনপি নেতাকর্মীরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রশাসনও তাদের সাথে যুক্ত এজন্য মেলা বন্ধ হচ্ছে না।
বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান জানান, লটারি জুয়ার কোনো বৈধতা নেই। স্থানীয়ভাবে এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, যদি কেউ লটারির টিকিট বিক্রি করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বদরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি :
০৩ অক্টোবর, ২০২৫, 7:45 PM

রংপুরের বদরগঞ্জে ‘কুটির শিল্প ও বাণিজ্য মেলা’র আড়ালে জমজমাট লটারী, হাউজির মহোৎসব। দিনের আলোয় লাখো মানুষ লটারির টিকিট কিনে প্রতারিত হয়ে পড়ছেন। আর রাত নামলেই শুরু হাউজির আসর—কেউ এনজিও থেকে নেওয়া ঋণ খুইয়েছেন, কেউ গবাদি পশু বিক্রি করেছেন, কেউ আবার ধারদেনার টাকা হারিয়েছেন। ফলে সর্বস্বান্ত হচ্ছে গ্রামীণ জনপদ,অথচ প্রশাসন রয়ে গেছে নীরব দর্শকের ভূমিকায়।
এদিকে মেলা বন্ধের দাবিতে আন্দোলনে নামা স্থানীয়দের নানা হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি জেলা মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদককেও মারধরের শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে,গত ১৮ আগস্ট উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের হাসিনা নগর মাঠে এ মেলা শুরু হয়। মেলায় সস্তা ও কমদামী পণ্যের স্টল বসানো হয়। এসব মানহীন পণ্যে মেলায় আসা দর্শনার্থীদের আগ্রহ না থাকলেও মূলত মেলা জমে ওঠে লটারি ও হাউজির আসরের কারণে । এরপর থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতবদল হচ্ছে লটারী-জুয়ায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেলায় প্রবেশ টিকিট বিক্রির আড়ালে আসলে লটারীর টিকিট সরাসরি মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। ২০ টাকা মূল্যের প্রতিটি টিকিটে পাঁচ ভরি স্বর্ণ, মোটরসাইকেল, টেলিভিশন, ফ্রিজ, ডিনার সেট, ফ্যানসহ নানা দামী পুরস্কারের প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। মেলায় ঢোকার জন্য প্রবেশ টিকিটের কথা বললেও বাস্তবে বিক্রি হচ্ছে লটারীর টিকিট। শুধু মেলার মাঠেই নয়, এসব টিকিট রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা ও হাটবাজারে ভ্রাম্যমাণভাবে বিক্রি করা হচ্ছে।
প্রতিদিন রাত ১২টায় লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হয় এবং তা ফেসবুকে ও ACN নামক পেজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। সেই ফেসবুক লাইভে থেকে দেখা যায় প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিনশটি বক্স জমা হয়। সে হিসেবে প্রতিদিন প্রায় দুই শতাধিক অটোরিক্সায় করে গ্রামেগঞ্জে, হাটে-বাজারে লটারি টিকিট বিক্রি করা হয়।
শনিবার সন্ধ্যার দিকে মেলাস্থল থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার কচুয়া বাজার এলাকায় দেখা যায়, অটো রিকশায় করে লটারির টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এতে নানা বয়সী মানুষ ভিড় জমিয়ে সেগুলো সংগ্রহ করছে।
সেখানে কথা হয় স্থানীয় ব্যবসায়ী আরিফুল ইসলামের সাথে।তিনি বলেন, 'ভাগ্য পরীক্ষা করতে প্রতিদিন দশটা করে টিকিট কাটি। এ পর্যন্ত ৮-৯ হাজার টাকা গেছে কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছু পাইনি।'
সরেজমিনে দেখা যায়, বদরগঞ্জসহ আশেপাশের উপজেলাগুলোতে গ্রামে গ্রামে অটোরিকশা যোগে মাইকিং করে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। ৪৩ দিন থেকে লটারী বিক্রি হলেও তাদের থামাতে পারছে না কেউ। দুই-এক জায়গায় বাধার মুখে পড়লেও রাজনৈতিক নেতারা তাদেরকে ছাড়িয়ে আনছেন। মানুষ লটারীর ফাঁদে পড়ে নি:স্ব হয়ে পড়ছেন। পার্বতীপুর উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে প্রায়ই জরিমানা অব্যাহত রাখলেও সব জায়গায় টিকেট বিক্রি বন্ধ করতে পারছে না।
এরকম অসংখ্য ভুক্তভোগীদের সাথে কথা হয়
লোহানীপাড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, লটারিতে ভাগ্য ফেরার আশায় তিনি প্রতিদিন টিকেট কাটেন। এ পর্যন্ত অনেক টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তবুও ধার দেনা করে লটারির টিকিট কাটছেন।
আরেক বাসিন্দা লাবু মিয়া বলেন, '"মানুষ লটারীত পড়ি ফতুর হয়া গেইছে। প্রত্যেকদিন লাখ লাখ টাকা নিয়ে যাওছে কিন্ত দেখার কেউ নাই"। আর কয়দিন চললে জমি বেচে ঋন শোধ করা লাগবে।
এদিকে রাত নামলেই মেলার মাঠে শুরু হয় হাউজি। বিশাল জায়গা জুড়ে সাজানো হয়েছে এই হাউজির আসর। বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে হাউজি খেলতে আসছেন হাজার হাজার মানুষ।
লালমনিরহাটের আদিতমারী থেকে আসা একজনের সাথে মেলার মাঠে কথা হয়, নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, তারা লালমনিরহাট থেকে গাড়ি ভাড়া করে সপ্তাহে দুই-তিন দিন হাউজি খেলতে আসেন। এ পর্যন্ত তার ৫০ হাজার টাকার বেশি লস হয়েছে । এদিন অন্যের কাছ থেকে ধার নিয়ে তিনি হাউজি খেলতে এসেছেন।
আরও কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা লটারি ও হাউজিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানান।
এদিকে মেলায় লটারি ও হাউজি বন্ধে বদরগঞ্জ ও পার্বতীপুর উপজেলায় দফায় দফায় আন্দোলন করে স্থানীয় মানুষ। গত ১ সেপ্টেম্বর তৌহিদী জনতার ব্যানারে বদরগঞ্জ পৌর শহরের শহীদ মিনার চত্বরে অবস্থান নেন হাজারো মানুষ । তারা সেখানে সাত ঘন্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেলা বন্ধের আশ্বাস দেয়া হয় এবং দুই দিন মেলা বন্ধ থাকে। পরে উপজেলা বিএনপির সভাপতি পরিতোষ চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হকের নেতৃত্বে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। এবং মেলার লটারি চালুর দাবি জানান। এরপর দু'দিন বন্ধ থাকলেও চালু হয় লটারি ও হাউজির আসর।
আন্দোলনকারীদের মধ্যে একজন, বদরগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দা ও ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজন শাহরিয়ার অভিযোগ করেছেন, আন্দোলনের চাপ সত্ত্বেও প্রশাসন যে আশ্বাস দিয়েছিল তা কার্যকর হয়নি। তিনি বলেন, “প্রশাসনের নির্বিকার অবস্থানের কারণে এই মেলা এখনও বন্ধ হয়নি। মূলত এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে সকলের সংযোগ রয়েছে।”
তিনি আরও জানান, আন্দোলনকারীদের বিভিন্ন পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি অজানা ফোন নম্বর থেকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে, যা তাদের নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
এদিকে উপজেলার ট্যাক্সের হাট এলাকার আশরাফগঞ্জ দিমুখী দাখিল মাদ্রাসার গেটে লটারির টিকিট বিক্রির করার সময় ইউএনও ও পুলিশকে খবর দেয়ার কারণে বিএনপি নেতাকর্মী ও মেলা কমিটির সদস্যদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন জেলা মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহেদা হাসান। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে বদরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।
শাহেদা হাসান বলেন, তার বাড়ির সামনে মাদ্রাসার গেটে লটারির টিকিট বিক্রির সময় ইউএনওকে ফোন দিলে তিনি ওসির সাথে কথা বলতে বলেন। ওসিকে জানালে তিনি ইউএনওর পারমিশন ছাড়া যেতে পারবেন না বলে জানান। পরে পুলিশ তাকে সেখানে থাকতে বলে আসার কথা জানালেও ২০ মিনিটের জায়গায় এক ঘন্টা পর আসে। ততক্ষনে ঘটনাস্থলে বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী ও মেলা কমিটির সদস্যরা এসে তার ওপর হামলা করে এবং টিকিট বাক্স নিয়ে যায়। একজন হামলাকারীকে তিনি আটকে রাখলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি।
তার অভিযোগ, 'মেলায় লটারি ও জুয়ার সাথে বিএনপি নেতাকর্মীরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রশাসনও তাদের সাথে যুক্ত এজন্য মেলা বন্ধ হচ্ছে না।
বদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান জানান, লটারি জুয়ার কোনো বৈধতা নেই। স্থানীয়ভাবে এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, যদি কেউ লটারির টিকিট বিক্রি করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।