ঢাকা ১০ অক্টোবর, ২০২৫
শিরোনামঃ
নেত্রকোনায় মুদি দোকানিকে গলা কেটে হত্যা শ্রমবাজার সম্প্রসারণে ভিসা জটিলতা দূর করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা বেসরকারি টিভি চ্যানেলসমূহের আচরণবিধি জনসম্মুখে প্রকাশ করতে তথ্য উপদেষ্টার আহ্বান আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী সহ ৩ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা সাংবাদিককে আইনজীবীর হুমকি, ভূমিদস্যু-জালিয়াত চক্রের দৌরাত্ম্য শেষ কোথায় ? ইসলামী ব্যাংকে অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন শিবপুরে স্টার সিএনজি স্টেশনের নামে মিথ্যা অপপ্রচার এবং চাঁদা দাবি আফগানিস্তানের বিপক্ষে টস জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ জ্বর হওয়ার সাথে সাথে ডেঙ্গু পরীক্ষার অনুরোধ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সীমান্ত থেকে গাঁজা এনে রাজশাহীতে সরবরাহ: ‘বিবিজান’ চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

দেড় বছরেও চালু হয়নি রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগার: ঐতিহ্য ঝুলছে অনিশ্চয়তায়

#
news image

দেড় বছর আগে নির্মাণ কাজ শেষ করে হস্তান্তর করা হলেও এখনও চালু হয়নি রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সাধারণ গ্রন্থাগার। অর্থ সংকটে এটি আংশিক নির্মাণের পর ভারত সরকারের সহায়তায় এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে ভবন নির্মাণ সম্পন্ন করে জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও কার্যক্রম চালুর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

রাজশাহীর সচেতন মহল মনে করেন, এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম দ্রুত চালু করা জরুরি। অন্যদিকে জেলা প্রশাসক আফিয়া আকতার জানিয়েছেন, যতই সংকট থাকুক, গ্রন্থাগারটি চালু করার ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশন ৩ কোটি ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ব্যয়ে গ্রন্থাগারটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করে। এই প্রকল্পের অর্থায়ন করে ভারত সরকার। ‘সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় নগরীর মিয়াপাড়ায় এই গ্রন্থাগার নির্মাণ করা হয়। যদিও শুরুতে এখানে আধুনিক গ্রন্থাগারসহ একটি ৩০০ আসনের অডিটোরিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল, তা অর্থের অভাবে বাস্তবায়ন হয়নি।

নির্মাণ প্রক্রিয়া নিয়ে শুরু থেকেই জটিলতা ছিল। ২০১৬ সালে নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণের পর ২০১৮ সালে পুরনো ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ‘বিসমিল্লাহ বর্ষণ অ্যান্ড কোং’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজ শুরু করে এবং ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এটি জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এখনো পর্যন্ত রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন ভবনে রাখা বইগুলো স্থানান্তর করা হয়নি। লাইব্রেরির জন্য বরাদ্দ ভবনে কেবল পাঠাগার অংশ নির্মাণ সম্পন্ন হলেও, অডিটোরিয়ামসহ অন্যান্য অবকাঠামো বাদ পড়ে গেছে। এতে একদিকে যেমন আয়ের উৎস তৈরি হয়নি, অন্যদিকে পাঠকদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাও নিশ্চিত হয়নি।

গ্রন্থাগারের সভাপতি গোলাম মাওলার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, তিনি রাজশাহী পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন এবং সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে তিনি গ্রন্থাগার সম্পর্কেও উদাসীন হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ঐতিহাসিক দিক বিবেচনায় এই সাধারণ গ্রন্থাগারের গুরুত্ব অপরিসীম। ১৮৬৬ সালে রাজা আনন্দনাথ প্রথম এটি প্রতিষ্ঠা করেন কাশিমপুর হাউসে। পরবর্তীতে ১৮৮৪ সালে রাজা প্রমথনাথ মিয়াপাড়ায় ৪৪ শতক জমি দান করেন এবং সেখানে গ্রন্থাগারের স্থায়ী ভবন নির্মাণ হয়। তখন থেকেই এটি ছিল উত্তরাঞ্চলের বিদ্যাচর্চা ও রাজনৈতিক আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বহস্তে স্বাক্ষরিত ২৯টি বই পাঠিয়েছিলেন এই গ্রন্থাগারে। মহাত্মা গান্ধী, সরোজিনী নাইডু, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়সহ অনেক মনীষী এখানে এসেছেন ও মন্তব্য খাতায় অভিভূত প্রশংসা রেখেছেন।

এই প্রাচীন ও সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এখন অবহেলায় ধুঁকছে। দ্রুত কার্যক্রম শুরু না হলে রাজশাহীর শিক্ষা ও সংস্কৃতির এক গৌরবময় অধ্যায় মলিন হয়ে যাবে— এমনটাই মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।

খন্দকার মোহাম্মাদ আলী, রাজশাহী বিভাগীয় ব্যুরো চিফ :

২৭ মে, ২০২৫,  7:15 AM

news image

দেড় বছর আগে নির্মাণ কাজ শেষ করে হস্তান্তর করা হলেও এখনও চালু হয়নি রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী সাধারণ গ্রন্থাগার। অর্থ সংকটে এটি আংশিক নির্মাণের পর ভারত সরকারের সহায়তায় এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে ভবন নির্মাণ সম্পন্ন করে জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও কার্যক্রম চালুর কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।

রাজশাহীর সচেতন মহল মনে করেন, এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম দ্রুত চালু করা জরুরি। অন্যদিকে জেলা প্রশাসক আফিয়া আকতার জানিয়েছেন, যতই সংকট থাকুক, গ্রন্থাগারটি চালু করার ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশন ৩ কোটি ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ব্যয়ে গ্রন্থাগারটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করে। এই প্রকল্পের অর্থায়ন করে ভারত সরকার। ‘সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় নগরীর মিয়াপাড়ায় এই গ্রন্থাগার নির্মাণ করা হয়। যদিও শুরুতে এখানে আধুনিক গ্রন্থাগারসহ একটি ৩০০ আসনের অডিটোরিয়াম নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল, তা অর্থের অভাবে বাস্তবায়ন হয়নি।

নির্মাণ প্রক্রিয়া নিয়ে শুরু থেকেই জটিলতা ছিল। ২০১৬ সালে নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণের পর ২০১৮ সালে পুরনো ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ‘বিসমিল্লাহ বর্ষণ অ্যান্ড কোং’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজ শুরু করে এবং ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে এটি জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

এখনো পর্যন্ত রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশন ভবনে রাখা বইগুলো স্থানান্তর করা হয়নি। লাইব্রেরির জন্য বরাদ্দ ভবনে কেবল পাঠাগার অংশ নির্মাণ সম্পন্ন হলেও, অডিটোরিয়ামসহ অন্যান্য অবকাঠামো বাদ পড়ে গেছে। এতে একদিকে যেমন আয়ের উৎস তৈরি হয়নি, অন্যদিকে পাঠকদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাও নিশ্চিত হয়নি।

গ্রন্থাগারের সভাপতি গোলাম মাওলার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, তিনি রাজশাহী পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন এবং সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে তিনি গ্রন্থাগার সম্পর্কেও উদাসীন হয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ঐতিহাসিক দিক বিবেচনায় এই সাধারণ গ্রন্থাগারের গুরুত্ব অপরিসীম। ১৮৬৬ সালে রাজা আনন্দনাথ প্রথম এটি প্রতিষ্ঠা করেন কাশিমপুর হাউসে। পরবর্তীতে ১৮৮৪ সালে রাজা প্রমথনাথ মিয়াপাড়ায় ৪৪ শতক জমি দান করেন এবং সেখানে গ্রন্থাগারের স্থায়ী ভবন নির্মাণ হয়। তখন থেকেই এটি ছিল উত্তরাঞ্চলের বিদ্যাচর্চা ও রাজনৈতিক আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বহস্তে স্বাক্ষরিত ২৯টি বই পাঠিয়েছিলেন এই গ্রন্থাগারে। মহাত্মা গান্ধী, সরোজিনী নাইডু, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়সহ অনেক মনীষী এখানে এসেছেন ও মন্তব্য খাতায় অভিভূত প্রশংসা রেখেছেন।

এই প্রাচীন ও সমৃদ্ধ ঐতিহ্য এখন অবহেলায় ধুঁকছে। দ্রুত কার্যক্রম শুরু না হলে রাজশাহীর শিক্ষা ও সংস্কৃতির এক গৌরবময় অধ্যায় মলিন হয়ে যাবে— এমনটাই মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।