ঢাকা ১২ মার্চ, ২০২৫
শিরোনামঃ
গভীর রাতে বনবিভাগ উখিয়া রেঞ্জের অভিযান বাগানের কাটভর্তি ডাম্পার আটক চলতি বছরের মধ্যে পাচারকৃত অর্থের কিছু অংশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব: অর্থ উপদেষ্টা সাতটি প্রধান বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে নেপাল সফরের আমন্ত্রণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় : এবি পার্টি জুলাই বিপ্লবের চেতনায় নতুন বাংলাদেশ গড়তে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান বাংলাদেশ অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে জাপানের অব্যাহত সহায়তা চায় গণঅভ্যুত্থানে বিজয়ী শক্তি দেশ চালাচ্ছে: তথ্য উপদেষ্টা বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে চায় রাশিয়া বিটিভিকে যুগোপযোগী ও জনপ্রিয় করতে হবে : তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা

পঞ্চগড়ে ছায়াযুক্ত বাগানে সাথি ফসল হিসেবে চাষ হচ্ছে কফি

#
news image

উত্তরের কৃষি সমৃদ্ধ জেলা পঞ্চগড়ে চায়ের পাশাপাশি অর্থকরি ফসল হিসেবে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে কফি চাষের। গড়ে ওঠেছে ছোট-বড় বেশ কিছু বাগান। আবাদি জমি দখল করে নয়, চাষ হচ্ছে ছায়াযুক্ত বাগানে সাথি ফসল হিসেবে। বাজারজাত সহজ হলে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা তৈরি হবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০২১ সালের শেষের দিকে ‘কফি ও কাজু বাদাম গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের’ আওতায় জেলার তিন উপজেলায় রোবাস্টা জাতের কফি চাষ শুরু হয়েছে। জেলার মাটি ও আবহাওয়া কফির জন্য উপযোগী হওয়ায় সুপারিসহ বিভিন্ন বাগানের ছায়াযুক্ত ফাঁকা জায়গায় গড়ে উঠছে কফি বাগান।

কৃষক আব্দুল হালিম প্রধান। কৃষি বিভাগের পরামর্শে গত তিন বছর আগে সুপারি বাগানে সাথি ফসল হিসেবে রোপণ করেন কফির চারাগাছ। অল্প সময়ের মধ্যেই ফল আসে গাছগুলোতে। গত দুইবছর ধরেই হার্ভেস্ট করছেন তিনি। তবে বাজারজাত ও প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করছেন তিনি। তার দাবি, বাজারজাত সহজ হলে সাথি ফসল হিসেবে যেমন বাড়তি আয় হবে, তেমনি বাড়বে চাষের পরিধিও।

আব্দুল হালিম প্রধানের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের বিষমুনি গ্রামে। দুই বছর আগে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় তার বাড়ি সংলগ্ন ছায়াযুক্ত সুপারি বাগানে ১৩৫টি কফি চারা রোপণ করেন। তার মত জেলার আরও ৪৭ জন কৃষক কফি চাষ করেছেন। তবে অন্যদের এখনো ফল আসা শুরু হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি সুপারি গাছের ফাঁকে ফাঁকে একেকটি কফি গাছ। কৃষক আব্দুল হালিম প্রধান পরিচর্যা করছেন কফি গাছ গুলো। অধিকাংশ গাছের ডালে থোকায় থোকায় ঝুঁলে আছে লাল-বেগুনি ও সবুজ কফি ফল। পরিপক্ব ফলগুলো উত্তোলন করে ঘরে রাখা হচ্ছে। এ ফলগুলোই প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করা যাবে পান যোগ্য কফি।

এ কফি চাষী জানান, এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক সফলতা না পেলেও সম্ভাবনা দেখছেন তিনি। বাজারজাত সহজলভ্য না হওয়ায় নেয়া হয়েছে প্রক্রিয়াজাতের উদ্যোগ। কৃষি বিভাগ প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য দিয়েছেন একটি মেশিনও।

জানা গেছে, চাষীদের কফি বীজ, কারিগরী সহায়তাসহ নানা পরামর্শ দেয় কৃষি বিভাগ। চারা রোপণের দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যেই ফল আসা শুরু হয় গাছগুলোতে। এটি দীর্ঘ মেয়াদি ফসল। প্রতি বিঘা বাগানে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে বছরে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার কফি বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। জেলার ৪৭ জন কৃষক ১২ দশমিক ২৬ হেক্টর জমিতে গড়ে তুলেছেন ৭৪টি কফি বাগান।

চাষী আব্দুল হালিম প্রধান বলেন, একদিন কৃষি বিভাগের লোকজন আমাকে এসে বলেন সুপারী বাগানে কফি চাষের কথা। পরে তারা আমাকে ৩৩ শতক জমির জন্য ১৩৫টি কফির চারা দেন। তাদের পরামর্শে চারাগুলোর যত্ন শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ দুই বছরের মধ্যে গাছগুলোতে ফল আসে। এবছরও অনেক গাছে ফুল, ফল এসেছে। কিছু গাছে ফল পাঁকতে শুরু করেছে। আমি কিছু ফল গাছ থেকে তুলেছি নিজে কফি বানিয়ে খাওয়ার জন্য। আর বাকীগুলো কয়েকদিনের মধ্যে তুলবো।

তিনি আরও বলেন, কফির চাষ পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ। অতিরিক্ত জমির প্রয়োজন হয়না। বাড়তি খরচও নেই। যদি বাজারজাত করা যায় আর দাম ভালো পাই, আশা করি লাভের মুখ দেখতে পারবো।

একই ইউনিয়নের বংশিঝাড় এলাকার কৃষক আবুল বাশার একইভাবে কফির আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, বাগানের বয়স তিন বছর হলেও এবারই প্রথম ফল এসেছে। যেহেতু ফল বিক্রির কোন সুযোগ নেই, তাই প্রক্রিয়াজাত করার চিন্তা রয়েছে। আর বাজারজাত নিয়ে কৃষি বিভাগের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।

সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুবুল আলম বলেন, কফি চাষের জন্য ছায়াযুক্ত স্থানের প্রয়োজন। যেখানে ছায়া থাকে সেখানেই কফি ভালো হয়। বাড়তি কোন জমি এবং তেমন কোন পরিচর্যার প্রয়োজন হয়না। শুধুমাত্র আগাছানশক স্প্রে এবং ছত্রাক নাশক স্প্রে করায় এ পানীয় চাষে কৃষকের খরচ কম হয়।

পঞ্চগড় সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুন্নবী বলেন, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পাশে থেকে চারা, কীটনাশক, কারিগরি প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছে। কফির বাজার ব্যবস্থাপনা ও ফল সংরক্ষণ বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। পঞ্চগড়ের আবহাওয়া কফি চাষে অনুকূল হওয়ায় কৃষকেরা লাভের মুখ দেখতে পারবেন বলে আশা করছেন এ কর্মকর্তা।

পঞ্চগড় প্রতিনিধিঃ

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫,  12:33 AM

news image

উত্তরের কৃষি সমৃদ্ধ জেলা পঞ্চগড়ে চায়ের পাশাপাশি অর্থকরি ফসল হিসেবে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে কফি চাষের। গড়ে ওঠেছে ছোট-বড় বেশ কিছু বাগান। আবাদি জমি দখল করে নয়, চাষ হচ্ছে ছায়াযুক্ত বাগানে সাথি ফসল হিসেবে। বাজারজাত সহজ হলে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা তৈরি হবে বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০২১ সালের শেষের দিকে ‘কফি ও কাজু বাদাম গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের’ আওতায় জেলার তিন উপজেলায় রোবাস্টা জাতের কফি চাষ শুরু হয়েছে। জেলার মাটি ও আবহাওয়া কফির জন্য উপযোগী হওয়ায় সুপারিসহ বিভিন্ন বাগানের ছায়াযুক্ত ফাঁকা জায়গায় গড়ে উঠছে কফি বাগান।

কৃষক আব্দুল হালিম প্রধান। কৃষি বিভাগের পরামর্শে গত তিন বছর আগে সুপারি বাগানে সাথি ফসল হিসেবে রোপণ করেন কফির চারাগাছ। অল্প সময়ের মধ্যেই ফল আসে গাছগুলোতে। গত দুইবছর ধরেই হার্ভেস্ট করছেন তিনি। তবে বাজারজাত ও প্রক্রিয়াজাতকরণ নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করছেন তিনি। তার দাবি, বাজারজাত সহজ হলে সাথি ফসল হিসেবে যেমন বাড়তি আয় হবে, তেমনি বাড়বে চাষের পরিধিও।

আব্দুল হালিম প্রধানের বাড়ি পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের বিষমুনি গ্রামে। দুই বছর আগে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় তার বাড়ি সংলগ্ন ছায়াযুক্ত সুপারি বাগানে ১৩৫টি কফি চারা রোপণ করেন। তার মত জেলার আরও ৪৭ জন কৃষক কফি চাষ করেছেন। তবে অন্যদের এখনো ফল আসা শুরু হয়নি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি সুপারি গাছের ফাঁকে ফাঁকে একেকটি কফি গাছ। কৃষক আব্দুল হালিম প্রধান পরিচর্যা করছেন কফি গাছ গুলো। অধিকাংশ গাছের ডালে থোকায় থোকায় ঝুঁলে আছে লাল-বেগুনি ও সবুজ কফি ফল। পরিপক্ব ফলগুলো উত্তোলন করে ঘরে রাখা হচ্ছে। এ ফলগুলোই প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করা যাবে পান যোগ্য কফি।

এ কফি চাষী জানান, এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক সফলতা না পেলেও সম্ভাবনা দেখছেন তিনি। বাজারজাত সহজলভ্য না হওয়ায় নেয়া হয়েছে প্রক্রিয়াজাতের উদ্যোগ। কৃষি বিভাগ প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য দিয়েছেন একটি মেশিনও।

জানা গেছে, চাষীদের কফি বীজ, কারিগরী সহায়তাসহ নানা পরামর্শ দেয় কৃষি বিভাগ। চারা রোপণের দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যেই ফল আসা শুরু হয় গাছগুলোতে। এটি দীর্ঘ মেয়াদি ফসল। প্রতি বিঘা বাগানে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ করে বছরে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার কফি বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। জেলার ৪৭ জন কৃষক ১২ দশমিক ২৬ হেক্টর জমিতে গড়ে তুলেছেন ৭৪টি কফি বাগান।

চাষী আব্দুল হালিম প্রধান বলেন, একদিন কৃষি বিভাগের লোকজন আমাকে এসে বলেন সুপারী বাগানে কফি চাষের কথা। পরে তারা আমাকে ৩৩ শতক জমির জন্য ১৩৫টি কফির চারা দেন। তাদের পরামর্শে চারাগুলোর যত্ন শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ দুই বছরের মধ্যে গাছগুলোতে ফল আসে। এবছরও অনেক গাছে ফুল, ফল এসেছে। কিছু গাছে ফল পাঁকতে শুরু করেছে। আমি কিছু ফল গাছ থেকে তুলেছি নিজে কফি বানিয়ে খাওয়ার জন্য। আর বাকীগুলো কয়েকদিনের মধ্যে তুলবো।

তিনি আরও বলেন, কফির চাষ পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ। অতিরিক্ত জমির প্রয়োজন হয়না। বাড়তি খরচও নেই। যদি বাজারজাত করা যায় আর দাম ভালো পাই, আশা করি লাভের মুখ দেখতে পারবো।

একই ইউনিয়নের বংশিঝাড় এলাকার কৃষক আবুল বাশার একইভাবে কফির আবাদ করেছেন। তিনি বলেন, বাগানের বয়স তিন বছর হলেও এবারই প্রথম ফল এসেছে। যেহেতু ফল বিক্রির কোন সুযোগ নেই, তাই প্রক্রিয়াজাত করার চিন্তা রয়েছে। আর বাজারজাত নিয়ে কৃষি বিভাগের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।

সদর উপজেলার হাফিজাবাদ ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুবুল আলম বলেন, কফি চাষের জন্য ছায়াযুক্ত স্থানের প্রয়োজন। যেখানে ছায়া থাকে সেখানেই কফি ভালো হয়। বাড়তি কোন জমি এবং তেমন কোন পরিচর্যার প্রয়োজন হয়না। শুধুমাত্র আগাছানশক স্প্রে এবং ছত্রাক নাশক স্প্রে করায় এ পানীয় চাষে কৃষকের খরচ কম হয়।

পঞ্চগড় সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুন্নবী বলেন, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পাশে থেকে চারা, কীটনাশক, কারিগরি প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের পরামর্শ দিচ্ছে। কফির বাজার ব্যবস্থাপনা ও ফল সংরক্ষণ বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। পঞ্চগড়ের আবহাওয়া কফি চাষে অনুকূল হওয়ায় কৃষকেরা লাভের মুখ দেখতে পারবেন বলে আশা করছেন এ কর্মকর্তা।